মশা আছে কোনখানে। মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষের অভিযান। সোমবার, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। ছবি: সুমন বল্লভ।
বিস্তর প্রচার হল, জরিমানা করার কথা বলা হল, বারবার নোটিসও দেওয়া হল। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হল না। পিজি-র পরে মেডিক্যালেও মিলল মশার লার্ভা।
কলকাতার সরকারি হাসপাতালগুলিই যে ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গির জীবাণু বাহক অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাই ও এডিস ইজিপ্টাই মশার অন্যতম আঁতুড়ঘর, তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু কী কলকাতা পুরসভা, কী স্বাস্থ্য দফতর— কারও টনক নড়েনি। এ বার টানা বৃষ্টির পরে মহানগরীতে ম্যলেরিয়া-ডেঙ্গির সংক্রমণ শুরু হতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল। শহরের দু’টি বড় সরকারি হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে পুরসভা খুঁজে পেল ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গির জীবণুবাহক মশার লার্ভা। গত সপ্তাহে মিলেছিল এসএসকেএমে। সোমবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। পুর-স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা নিশ্চিত, এনআরএস, আরজিকর কিংবা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজেও মিলবে মশার আঁতুড়ঘর। প্রতি বার এমনটাই হয়।
এ দিন মেডিক্যালে পুর-অভিযানের নেতৃত্ব দেন মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ দলটি হাসপাতালে পৌঁছয়। দলে ছিলেন স্থানীয় বরোর মেডিক্যাল অফিসার, পতঙ্গবিদ বৈশাখী বিশ্বাস-সহ বেশ কিছু স্বাস্থ্যকর্মী। প্রথমেই জরুরি বিভাগের পাশে পড়ে থাকা প্লাস্টিকের কাপে জমা জলে মশার লার্ভা মেলে। মূল ভবনের পাশেই নির্মীয়মাণ একটি ভবনে দেখা যায়, বেসমেন্টের অনেকখানি জায়গা জুড়ে রয়েছে জমা জল। সেখানেও মেলে এডিস মশার লার্ভা। ডাকা হয় নির্মাণকারী সংস্থার প্রতিনিধিকে। অবিলম্বে পাম্প চালিয়ে জল সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁকে। না হলে, নোটিস করে পুরসভার কোর্টে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার হুমকিও দেওয়া হয়।
হাসপাতালের গ্রিন বিল্ডিংয়ের পাশে একটি জায়গায় পরিত্যক্ত কিছু লোহার ট্যাঙ্ক পড়েছিল। পতঙ্গবিদেরা দেখেন, তাতে ভেসে বেড়াচ্ছে এডিস ও অ্যানোফিলিস মশার লার্ভা ও পিউপা। সঙ্গে সঙ্গে ওই ট্যাঙ্কগুলি উল্টে ফেলে দিতে বলা হয়। হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মীদের ইউনিয়ন অফিসেও ফেলে দেওয়া চায়ের কাপে এবং জমে থাকা জলে মশার লার্ভা মেলায় জনসচেতনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এক পুর-আধিকারিক জানান, এক সপ্তাহের মধ্যেই লার্ভা পূর্ণাঙ্গ মশায় পরিণত হয়। তাই লার্ভা হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই তা মেরে ফেলতে হয়। মেডিক্যালের অধ্যক্ষ তপনকুমার লাহিড়ী বলেন, ‘‘এত বড় চত্বর, নানা দিকে নতুন বাড়ি হচ্ছে। বৃষ্টিরও বিরাম নেই। চেষ্টা করেও জল জমা আটকানো যাচ্ছে না। মাঝেমাঝে পুরসভা এসে লার্ভা মেরে যাচ্ছে। আমরাও লাগাতার চেষ্টা করছি।’’
নয়ের দশকে শহরে ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গির সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তেই পুরসভার নজর পড়েছিল সরকারি হাসপাতালগুলির দিকে। পুরসভার রেকর্ড বলছে, মেডিক্যালের আশপাশের আরপুলি লেন, কলুটোলা স্ট্রিট, জ্যাকারিয়া স্ট্রিট, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, এসএসকেএমের আশপাশের গোটা এলাকা, ন্যাশনাল মেডিক্যালের আশপাশের গোবরা, পার্ক সার্কাস, বেনিয়াপুকুর এলাকা ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গি প্রবণ। আর তখনই দেখা যায়, হাসপাতাল চত্বরে নিয়মিত জমা জল পরিষ্কার না হওয়ায় সেগুলি মশার আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে।
পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষের দাবি, ‘‘সেই চিত্র অনেকটাই বদলেছে। তবে বর্তমানে যে কয়েকটি জায়গায় মশার লার্ভা মিলেছে, তা রোখা সম্ভব।’’ হাসপাতালের ভিতরে যত্রতত্র চায়ের কাপ যাতে না ফেলা হয়, তার ব্যবস্থাও নিতে হবে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে মেডিক্যাল কতৃর্পক্ষের সঙ্গে তিনি কথাও বলেছেন। পুরসভা সূত্রে খবর, শহরের অন্য সরকারি হাসপাতালগুলিতেও পুরকর্মীরা মশা মারা অভিযানে যাবেন।
এত সবের পরেও শহর থেকে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নির্মূল হচ্ছে না কেন?
অতীনবাবুর দাবি, শহরে মশা নিয়ন্ত্রণের সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বছর এখনও ৩১ জনের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। জনসংখ্যার নিরিখে যা খুবই কম। শহরের উল্টোডাঙা এলাকায় ১৪ এবং বেহালার ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ জন। ওই দুই ওয়ার্ড এলাকায় মশা নিবারণের সব রকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে। মেয়র পারিষদ যা-ই বলুন না কেন, মশাবাহিত রোগের বিরুদ্ধে সচেতনতা অভিযান কিন্তু চোখে পড়ছে না নাগরিকদের। বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের সরবরাহ পর্যাপ্ত না হওয়ায় মানুষ বাড়িতে জল জমিয়ে রাখছেন। চৌবাচ্চায় জল ভরে রেখে দেওয়া হচ্ছে দিনের পর দিন। সেই জলেই ডিম পাড়ছে মশা। জন্ম নিচ্ছে লার্ভা। ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গিতে তাই লাগাম পরানো যাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy