Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Water Bodies

KMC: জলাভূমি সংরক্ষণ অভিযানে পুলিশে ভরসা পুরসভার

রাজ্যের পরিবেশকর্মীদের মধ্যে এমনও প্রশ্ন উঠেছে যে, ‘রামসার তালিকা’ভুক্ত পূর্ব কলকাতা জলাভূমি কি তার আন্তর্জাতিক মর্যাদা ধরে রাখতে পারবে?

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:৪৯
Share: Save:

একেই আন্তর্জাতিক গুরুত্বসম্পন্ন এবং ‘রামসার তালিকা’ভুক্ত পূর্ব কলকাতা জলাভূমি বুজিয়ে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ। যা ভেঙে জলাভূমিকে পূর্বাবস্থায় ফেরানোর জন্য জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশও রয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশ কতটা সুষ্ঠু ভাবে এবং কী ভাবে পালন করা যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় কলকাতা পুর প্রশাসন।

কারণ পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, জলাভূমির অংশে বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে স্থানীয় স্তরে বিক্ষোভের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমনও হয়েছে যে, কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই ফিরে আসতে হয়েছে। এ বার দায়িত্ব আরও বড়।— নির্মাণ ভেঙে রামসার তালিকাভুক্ত পূর্ব কলকাতা জলাভূমির একটি অংশ পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া। অর্থাৎ, যে জায়গা বোজানো হয়েছে, সেই জায়গা খুঁড়ে জলাভূমির সংরক্ষণ করা। কিন্তু পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুরকর্মীদের সুরক্ষা বিঘ্নিত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে পুরকর্তাদের একটি অংশ। তাই সংশ্লিষ্ট দলের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশকে চিঠি দিয়েছে পুর প্রশাসন। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘পুলিশের সহায়তা ছাড়া অভিযান ভেস্তে যেতে পারে। তাই পুলিশ দিন ঠিক করলেই আমরা জলাভূমি সংরক্ষণ অভিযানে যাব। আশা করছি, আগামী সপ্তাহেই তা সম্ভব হবে।’’

প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০০৭-২০২১ সাল পর্যন্ত তিলজলা, কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স, প্রগতি ময়দান, আনন্দপুর, পূর্ব যাদবপুর, সোনারপুর, নরেন্দ্রপুর ও দক্ষিণ বিধাননগর থানায় বেআইনি নির্মাণ, জলাভূমি বোজানো সংক্রান্ত মোট ৩৫৮টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ৩২৭টির ক্ষেত্রে। সব থেকে বেশি, ১৮৪টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে সোনারপুর থানায়। এর পরেই কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সে ১১৭টি। ২০২১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৩১ অগস্টের মধ্যে জলাভূমি সংক্রান্ত দায়ের হওয়া অভিযোগ ২০টি।

যার প্রেক্ষিতে রাজ্যের পরিবেশকর্মীদের মধ্যে এমনও প্রশ্ন উঠেছে যে, ‘রামসার তালিকা’ভুক্ত পূর্ব কলকাতা জলাভূমি কি তার আন্তর্জাতিক মর্যাদা ধরে রাখতে পারবে? কারণ, জলাভূমি ভরাট রোধ নিয়ে রাজ্য সরকারের হাজারো প্রচার সত্ত্বেও ওই এলাকায় বেআইনি নির্মাণ হয়েই চলেছে। প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এটাই দুর্ভাগ্যের যে, এ রাজ্যে পূর্ব কলকাতা জলাভূমির মতো আন্তর্জাতিক গুরুত্বসম্পন্ন জলাভূমিও বুজে যায়। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘বেআইনি নির্মাণ চোখের সামনে দিব্যি উঠে যাচ্ছে। তা নিয়ে কারও হেলদোল নেই। বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে গেলে বরং বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে!’’ পুরসভা সূত্রের খবর, আদালতের নির্দেশ মতো পূর্ব কলকাতা জলাভূমির একাংশ পূর্বাবস্থায় ফেরানোর জন্য ‘ইস্ট কলকাতা ওয়েটল্যান্ডস ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’ (ইকেডব্লিউএমএ) ইতিমধ্যেই পুরসভাকে ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে।

ইকেডব্লিউএমএ-র চেয়ারপার্সন তথা রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী রত্না দে নাগ জানাচ্ছেন, জলাভূমি না বোজানোর বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির জন্য এলাকায় জনসংযোগ গড়ে তোলা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘জলাভূমির গুরুত্ব তৃণমূল স্তরের মানুষকেও বোঝাতে হবে। সর্বত্র পুলিশ দিয়ে তো বেআইনি নির্মাণ বা জলাভূমি বুজিয়ে দেওয়া আটকানো যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Water Bodies KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE