দিন দুয়েক আগেই উত্তর কলকাতার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা একটি শিশু ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে। কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৯ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত, এক সপ্তাহে এ শহরে ৮৫ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। অক্টোবরের শেষেও যে হারে ডেঙ্গির সংক্রমণ বেড়েছে, তাতে চিন্তা বাড়ছে পুর স্বাস্থ্যকর্তাদের।
কলকাতা পুরসভার পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির প্রকোপ সাধারণত নভেম্বর পর্যন্ত থাকে। এ বছর দুর্গাপুজোর আগে রাতভর অতি ভারী বৃষ্টিতে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দু’-তিন দিন জল জমে ছিল। তার পরেও বৃষ্টি হয়েই চলেছে। পুরসভার এক পতঙ্গবিদের কথায়, ‘‘বৃষ্টির পরিষ্কার জমা জলই ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশা জন্মানোর আদর্শ পরিবেশ। আগামী এক মাস আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কোনও ভাবেই কোথাও জল জমে থাকতে দেওয়া যাবে না।’’
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত কলকাতা পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭১৯। চলতি বছরেরওই সময়ে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১০১৭ জন। পুর স্বাস্থ্য দফতরেরএক আধিকারিকের কথায়, ‘‘নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গির আদর্শ মরসুম।পুজোর আগে ভারী বৃষ্টিতে সারা শহরের একাধিক এলাকা কয়েক দিন ধরে জলে ডুবে ছিল। তার পরেও মাঝে মাঝেই বৃষ্টি হয়ে চলেছে।গত তিন সপ্তাহে শহরে যে হারেডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে, তাতে আমাদের ভীষণ সতর্ক থাকতে হবে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, চলতি বছরের ৫ অক্টোবর পর্যন্ত কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৯১। ২৬ অক্টোবর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০১৭। অর্থাৎ, তিন সপ্তাহে কলকাতা পুর এলাকায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ২২৬ জন। প্রসঙ্গত, এ বছর শহরে এখনও পর্যন্ত মোট ছ’জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। তার মধ্যে পাঁচ জন দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা।
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, উত্তর কলকাতার কাশীপুর, বেলগাছিয়া, চিৎপুর, বাগবাজার, শ্যামবাজার, হাতিবাগান এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বাড়ছে। বৃহস্পতিবার যে শিশুটি ডেঙ্গিতে মারা যায়, সে ছিল উত্তর কলকাতার হাতিবাগানের বাসিন্দা। খোদ মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ যে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি। পুরসভার যেসমস্ত ওয়ার্ডে ডেঙ্গি সংক্রমণেরহার খুব বেশি, সেগুলি হল, ছ’নম্বর বরোর ৫২, ৫৫ ও ৬২ নম্বর ওয়ার্ড, সাত নম্বর বরোর ৫৭, ৬৫, ৬৬ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং ন’নম্বর বরোর ৭৪, ৭৬, ৭৭, ৭৮ ও ৭৯ নম্বর ওয়ার্ড। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, ন’নম্বর বরোর ভবানীপুর, আলিপুরের একাংশ, একবালপুর, মোমিনপুর ও হেস্টিংস এলাকা কলকাতা বন্দরের অধীনে। ওই বরোই সব থেকে বেশি ভাবাচ্ছে পুরসভাকে।
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মানুষকে আরওসতর্ক হতে হবে। অনেকেই যেখানে-সেখানে চায়ের ভাঁড় ফেলে দেন। বৃষ্টির জমা জলে সেখানেই ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা জন্মায়। ডেঙ্গি রুখতে সব স্তরের মানুষকে আরও বেশি করে সচেতন থাকতে হবে। ডেঙ্গি নির্মূল করতে পুরসভা বছরভর কাজ করে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)