Advertisement
E-Paper

আতঙ্ক বাড়িয়ে ফের কেঁপে উঠল শহর

রবিবার দুপুর। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তখন সবে কলকাতা বিমানবন্দরে ঢুকেছেন। ভূমিকম্পে উত্তরবঙ্গের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে বিমান ধরে বাগডোগরায় যাওয়ার কথা তাঁর। মুখ্যমন্ত্রী টার্মিনালের ভিতরে ঢুকে যাওয়ার পরে কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের সামনে দোতলায় তখন পুলিশ, মিডিয়া এবং সাধারণ যাত্রীদের ভিড়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৫
ভূমিকম্পের পরে বিমানবন্দরের বাইরে ভিড় যাত্রীদের। রবিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

ভূমিকম্পের পরে বিমানবন্দরের বাইরে ভিড় যাত্রীদের। রবিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

রবিবার দুপুর। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তখন সবে কলকাতা বিমানবন্দরে ঢুকেছেন। ভূমিকম্পে উত্তরবঙ্গের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে বিমান ধরে বাগডোগরায় যাওয়ার কথা তাঁর। মুখ্যমন্ত্রী টার্মিনালের ভিতরে ঢুকে যাওয়ার পরে কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের সামনে দোতলায় তখন পুলিশ, মিডিয়া এবং সাধারণ যাত্রীদের ভিড়। আচমকা থরথর করে কেঁপে উঠল টার্মিনালের মেঝে। দুদ্দাড় করে সবাই মিলে দৌড়তে শুরু করলেন। টার্মিনালের সামনে সেতু। যাত্রী ও অন্যরা সকলেই ছুটে তখন সেই সেতুর উপরে গিয়ে উঠেছেন। যাঁরা তখনও টার্মিনালের সামনে, মাথার উপরে কাঁচের ছাদ, তাঁদের চিৎকার করে সতর্ক করা হচ্ছিল, কাঁচ ভেঙে পড়তে পারে বলে। মূহূর্তে ফাঁকা হয়ে যায় টার্মিনালের সামনের অংশ। তবে, তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় কম্পন। যাত্রীরা ধীর পায়ে ফের ঢুকতে শুরু করেন টার্মিনালে।

ছুটির দুপুরে ঘরে বসে অনেকেই সময় কাটাচ্ছিলেন পরিবারের সঙ্গে। শপিং মলের ছুটির দিনে ক্রেতাদের জন্য হরেকরকম পসরা সাজাচ্ছিলেন দোকানি। পাড়ার মোড়ে-রকে খোশমেজাজে আড্ডায় মশগুল ছিলেন অনেকেই। সব উল্টোপাল্টা করে দিল কয়েক সেকেন্ডের দুলুনি এবং আতঙ্ক। সঙ্গে চিৎকার, আবার ভূমিকম্প।

২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পর পর দু’দিনের দুলুনি কিছুটা হলেও কাঁপিয়ে দিয়ে গিয়েছে শহরবাসীকে। শনিবারের পরে ফের রবিবার মহানগর কেঁপে ওঠায় অজানা এক আতঙ্ক গ্রাস করে কলকাতাবাসীকে। সাময়িক ভাবে বন্ধ করা হয় মেট্রো চলাচল। লাইন পরীক্ষার পরে ফের মেট্রো পরিষেবা চালু হয়।

দুপুর ১২টা ৩৯ মিনিটে কয়েক সেকেন্ডের রবিবাসরীয় ভূমিকম্পের রেশ বজায় থেকেছে সারাটা দিন। পাড়ার মোড় থেকে বাস ট্রেন— সবর্ত্রই ছড়িয়ে পড়েছে সেই আলোচনা— ‘তিলোত্তমা শহরে আমরা কতটা নিরাপদ?’

শনিবারের ভূমিকম্পের আধ ঘণ্টা বাদে অনুভূত হয়েছিল ভূমিকম্পোত্তর কম্পন। সঙ্গে রটনা, আরও তীব্র ভূমিকম্প আসছে। গুজব নাজেহাল করে ছেড়েছিল শহরবাসীকে। রবিবারেও তার হাত থেকে রেহাই পেল না কলকাতা। তবে দুপুরের পর কোনও কম্পন না হওয়ায় গুজব রবিবার বেশি ডানা মেলতে পারেনি।

দক্ষিণ কলকাতার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস লাগোয়া একটি বহুতল-সহ শহরের বেশির ভাগ বহুতলের বাসিন্দাদের মধ্যে রবিবার কম্পনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। বাসিন্দারা জানান, কম্পনের তীব্রতা শনিবারের মত জোরালো না হলেও নেপালের পরিস্থিতির কথা মাথায় থাকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বেশির ভাগই। দ্রুত তাঁরা বহুতল ছেড়ে নিচে নেমে আসেন। এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, ‘‘১১ তলায় বসে টিভিতে নেপালের ভয়াবহ পরিস্থিতির ছবি দেখছিলাম এবং আমাদের শহর কতটা নিরাপদ তা নিয়ে ছেলে-নাতির সঙ্গে আলোচনা করছিলাম। তার মধ্যেই কম্পন টের পাই। ভয়ে সকলেই নেমে আসি। সেখানে দেখি বাকি বাসিন্দারাও নেমে এসেছেন খোলা আকাশের নিচে। একই চিত্র দেখা যায় প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি বহুতলেও।

টালিগঞ্জের বাসিন্দা রঘুনাথ দাস রবিবার সকালে ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন চাঁদনি চকের এক বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম বিপণিতে। হঠাৎ ঝটকা অনুভব করায় কেনাকাটা বাকি রেখেই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে অন্যদের মতো বিপণির বাইরে চলে আসেন তিনি। বললেন,‘‘ যে ভাবে পর পর দু’দিন শহর কেঁপে উঠল, আমরা কী আদৌ নিরাপদ?’’ একই প্রশ্ন বরাহনগরের প্রভাত থেকে শুরু করে সল্টলেকের রিঙ্কুর।

সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের তথ্যপ্রযুক্তির বহুতল অফিসের বাইরেও একই চিত্র। তবে ছুটির দিন বলে কিছু অফিস ছুটি থাকলেও বেশির ভাগই খোলা ছিল। এ দিন ভূকম্পন অনুভূত হওয়ার পরে খালি করে দেওয়া হয় ওই অফিসগুলি। একাধিক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী জানিয়েছেন, প্রথমে তাঁরা কম্পন টের পাননি। পরে সহকর্মীদের চিৎকারে বুঝতে পারেন ফের ভূমিকম্প হয়েছে।

শনিবার পরপর দু’বার কম্পন অনুভূত হওয়ায় রবিবার ভূমিকম্পের অনেক পরেও আতঙ্কিত মানুষজন বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন। কলকাতা পুলিশ জানায়, এ দিনের ভূমিকম্পের পরে কার্ল মার্কস সরণিতে একটি তিনতলা বাড়ি হেলে পড়ার খবর মিলেছে।

kolkata Earthquake Metro Tollygunge Office Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy