Advertisement
E-Paper

শব্দে ফের জব্দ, শিখবে কবে শহর

যে সব শব্দবাজি বৃহস্পতিবার বৃষ্টির জন্য ফাটানো যায়নি, রবিবার রাতে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় বেরিয়ে সে সব শব্দদানব কলকাতার আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে দিয়েছে।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২৯
দূষণ: কালীপুজোর বিসর্জনেও ফাটল দেদার আতসবাজি ও শব্দবাজি। রবিবার সন্ধ্যায়, ধর্মতলায়। ছবি: সুমন বল্লভ

দূষণ: কালীপুজোর বিসর্জনেও ফাটল দেদার আতসবাজি ও শব্দবাজি। রবিবার সন্ধ্যায়, ধর্মতলায়। ছবি: সুমন বল্লভ

বাজির ক্ষতিকর শব্দকে এ বছর দীপাবলিতেও জব্দ করা গেল না। উল্টে যে সব শব্দবাজি বৃহস্পতিবার বৃষ্টির জন্য ফাটানো যায়নি, রবিবার রাতে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় বেরিয়ে সে সব শব্দদানব কলকাতার আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে দিয়েছে। আগামী বছর কলকাতায় কোন পথে শব্দবাজি দমনের চেষ্টা হবে, তা ঠিক করতে শহরের ১০টি জায়গায় বসানো শব্দ মাপার যন্ত্রে দীপাবলির দিন ২৪ ঘণ্টায় ধরা তথ্য কাজে লাগাবে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।

পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘সব ক’টি মনিটরিং স্টেশনের তথ্য বিস্তারিত আসার পরে কলকাতাকে দীপাবলির দিনের শব্দমাত্রার নিরিখে কয়েকটি জোন বা এলাকায় ভাগ করা হবে। শব্দবাজি কোথায় বেশি বা কম, তার ঝোঁক বা প্রবণতা বোঝা যেতে পারে।’’ সেই বুঝে আগামী বছর নজরদারি ও সচেতনতা প্রচার অভিযান চালাবে পুলিশ ও পর্ষদ।

আরও পড়ুন: আকাশে ফানুস, উড়ানে আতঙ্ক

পর্ষদকে এ বছর সবচেয়ে চিন্তায় ফেলেছে কসবা গোল্ডপার্ক। রেকর্ড বলছে, ২০১৫-র তুলনায় তার পরের দুই বছর ই এম বাইপাস লাগোয়া ওই তল্লাটে শব্দের মাত্রা বেড়েছে এক লাফে। এ বছর ওই তল্লাটে দীপাবলির সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শব্দের গড় মাত্রা ছিল ৮১ ডেসিবেল। গত বছর এটা ছিল ৮০ ডেসিবেল। কিন্তু মাত্র ৬৫ ডেসিবেল ছিল ২০১৫-তে। কসবার ওই তল্লাটে এ বার দীপাবলির রাত ১০টা থেকে পরের সকাল ৬টা পর্যন্ত গড় শব্দমাত্রা ছিল ৭৩ ডেসিবেল। ২০১৫-তে যা ছিল ৬৬ ডেসিবেল এবং ২০১৬-তে ৭৯ ডেসিবেল।

লালবাজার কন্ট্রোল রুমও জানাচ্ছে, কসবা থেকে বহু অভিযোগ ১৯ তারিখ রাতে এসেছিল। পর্ষদের কর্তাদের প্রাথমিক ধারণা, সাম্প্রতিক কালে প্রচুর সংখ্যক বহুতল আবাসন হওয়ার ফলেই ওই অবস্থা। আবার তিন বছর ধরে শব্দমাত্রা একই রকম বেশি থাকছে বাগবাজারে। দীপাবলিতে প্রথম ১২ ঘণ্টার গড় শব্দমাত্রা গত তিন বছর সেখানে ৭৬, ৭৪ ও ৭৭ ডেসিবেল। এবং দীপাবলির শেষ ১২ ঘণ্টার শব্দমাত্রা গত তিন বছরে যথাক্রমে ৭৮, ৭৩ ও ৭১ ডেসিবেল ছিল বাগবাজারে।

তবে শব্দ ক্রমশ কমানোর ব্যাপারে ম্যাজিক দেখাচ্ছে পাটুলি। ২০১৫-র দীপাবলির প্রথম ১২ ঘণ্টার গড় শব্দমাত্রা ছিল ৮১ ডেসিবেল, পরের বছর ৭১ ও এ বছর ৫৯ ডেসিবেল। দীপাবলির শেষ ১২ ঘণ্টার গড় শব্দমাত্রা পাটুলিতে ২০১৫ সালে ছিল ৮০ ডেসিবেল। গত বছর তা কমে দাঁড়ায় ৬৫ ডেসিবেলে এবং এ বছর ৬১ ডেসিবেল। পাটুলির বাসিন্দা এক প্রবীণ নাগরিকের কথায়, ‘‘এ বার শব্দবাজি এখানে অনেক কম ছিল।’’ লালবাজার কন্ট্রোল রুমও বলছে, পাটুলি থেকে অভিযোগ ছিল কম।

কিন্তু এ বছর দীপাবলির রাতে, বেশি শব্দ তৈরির প্রতিযোগিতায় দেশের অন্য বড় শহরগুলিকে কলকাতা ছাপিয়ে দিয়েছে বলেই দেখাচ্ছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নথি। কলকাতার সেই শব্দমাত্রা ৬৩.৫ ডেসিবেল। দ্বিতীয় হায়দরাবাদ, যার শব্দমাত্রা ছিল ৬৩.৪ ডেসিবেল। তবে দিন-রাতে মিলিয়ে হায়দরাবাদ প্রথম, ৬৬.৫৫ ডেসিবেল নিয়ে। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় কলকাতা, দিন-রাতের গড় শব্দমাত্রা যার ৬৫.৯৫ ডেসিবেল। কলকাতা-সহ দেশের সাতটি শহরের ৭০টি জায়গায় বসানো মনিটরিং স্টেশন থেকে এই তথ্য উঠে এসেছে। কলকাতা পিছনে ফেলে দিয়েছে বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, লখনউ, মুম্বই ও দিল্লিকে। কল্যাণবাবু বলছেন, ‘‘কলকাতায় শব্দবাজি যে ফেটেছে, সেই ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু কোথাও কম, কোথাও বেশি। গড় করার ফলে অঙ্কটা ওই রকম দাঁড়িয়েছে।’’এ বার দীপাবলিতে বেশি রাতে এ শহরের প্রায় সর্বত্র শব্দমাত্রা গত বছরের তুলনায় কম ছিল বলে দাবি তাঁর।

পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক, বর্তমানে পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কোথায়, কেন শব্দবাজির ব্যবহার বাড়ল এবং কমল, সেটাও পর্ষদের জানা জরুরি। আবার লাউডস্পিকার, ডিজে-ও পারিপার্শ্বিক শব্দমাত্রা কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাড়িয়ে দেয়।’’ তাঁর বক্তব্য, মানুষের চলাচল ও কথা, গাড়ির হর্ন ও গাড়ি চলার আওয়াজে কলকাতার শব্দমাত্রা এমনিতেই বেশি। তবে বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, ‘‘শব্দের নিরিখে মানচিত্র জরুরি নিশ্চয়ই। কিন্তু গ্রীষ্মকালে আঁতুড়ঘরে গিয়ে হানা দিতে না পারলে শব্দবাজি আটকানো যাবে না।’’

Sound Crackers Diwali
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy