মুম্বই বা পটনা পারে, কিন্তু পারে না কলকাতা। যক্ষ্মা রোগীর নোটিফিকেশন বা চিহ্নিতকরণে কলকাতার এই হেরে যাওয়ার প্রসঙ্গই বৃহস্পতিবার ‘গ্লোবাল হেল্থ স্ট্র্যাটেজিস’ আয়োজিত যক্ষ্মা সংক্রান্ত আলোচনাসভায় ঘুরেফিরে এসেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, এ শহরে প্রকৃত যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা খোঁজার কাজের শোচনীয় দশা দেখেই ভারত সরকার গত ১৩ ডিসেম্বর ঘোষণা করেছে, কিছুদিনের মধ্যেই কলকাতায় ‘অ্যাকটিভ কেস সার্চ’ শুরু হবে। এ জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির সাহায্য নেওয়া হবে। এই কাজের জন্য বাছা হয়েছে ভারতের ১৮টি রাজ্যের ৫০টি শহরকে। কলকাতা তার মধ্যে অন্যতম।
কিন্তু কলকাতায় যক্ষ্মা রোগী চিহ্নিতকরণের সংখ্যা এত কম কেন? আলোচনায় উপস্থিত স্বাস্থ্যকর্তারা এক বাক্যে মেনে নিয়েছেন, বেসরকারি চিকিৎসক, হাসপাতাল ও ল্যাবরেটরি থেকে তথ্য মিলছে না বলেই এই হাল।
কিন্তু বেসরকারি জায়গা থেকে সহযোগিতা মিলছে না কেন? অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্ষ বিশেষজ্ঞেরা স্বাস্থ্যকর্তাদের সামনেই বলে বসেন, ‘‘কাকে, কী ভাবে তথ্য জানাবো তা-ই তো জানা নেই!’’ তাঁদের প্রশ্ন করা হয়, নতুন যক্ষ্মা রোগীর খোঁজ মিললেই তাঁর বিস্তারিত তথ্য যে ‘নিক্ষয়’ নামে সরকারি পোর্টালে তুলে দেওয়ার কথা, তা কি স্বাস্থ্য দফতর তাঁদের জানায়নি? কোনও সচেতনতা কর্মসূচি চালায়নি? উত্তরে মাথা নেড়ে ‘না’ জানিয়ে দেন চিকিৎসকেরা।
দৃশ্যত অস্বস্তিতে পড়ে যাওয়া রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের যক্ষ্মা বিভাগের প্রধান শান্তনু হালদার তখন বলেন, ‘‘কলকাতার ব্যাপারটা তো সিটি টিবি অফিসারের দেখা উচিত। তিনি এটা ভাল জানেন। কিন্তু তাঁকে তো পাওয়াই যায় না। সব সময়ে ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গু প্রতিরোধ কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত তিনি।’’ শান্তনুবাবুর কথায়, ‘‘শুধু যক্ষ্মা রোগ নিয়েই কাজ করবেন এমন একজন ‘ডেডিকেটেড’ সিটি অফিসার দরকার কলকাতায়, এটা কলকাতা পুরসভার বোঝা উচিত।’’ একই সুরে এ দিন রাজ্যে নিযুক্ত ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র উপদেষ্টা সঞ্জয় সূর্যবংশী বলেন, ‘‘যখনই যক্ষ্মা নোটিফিকেশন বাড়ানোর জন্য নীতি নির্ধারণ করতে কোনও বৈঠক ডাকা হয় বা কোনও প্রচারসভা, সচেতনতা অভিযানের পরিকল্পনা করতে একজোট হওয়ার কথা ভাবা হয়, তখনই কলকাতার টিবি অফিসারকে পাওয়া যায় না। তিনি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন।’’
এ দিনের বৈঠকেও কলকাতা পুরসভার তরফে কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে সিটি টিবি অফিসার সৌমিত্র ঘোষের কাছে পরে জানতে চাওয়া হলে তাঁর জবাব, ‘‘কিছুদিন আগেই স্বাস্থ্য ভবনে বৈঠক করেছি। শুক্রবার আবার বৈঠক রয়েছে। যক্ষ্মা নিয়ে আমরা সব সময়ে তৎপর। কে কী বলেছেন জানি না।’’
এ দিনের আলোচনাসভায় ছিলেন ‘মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অব গ্রেটার মুম্বই’-এর জনস্বাস্থ্য উপদেষ্টা অরুণ বামনে। যক্ষ্মা রোগী চিহ্নিতকরণের সংখ্যা বাড়াতে মুম্বইয়ে চালু ‘প্রাইভেট প্রোভাইডার্স ইন্টারফেস এজেন্সি প্রোগ্রাম’-এর (পিপিআইএ) সাফল্যের কথা তুলে ধরেন তিনি। জানান, বেসরকারি চিকিৎসকদের সঙ্গে লাগাতার বৈঠক, ফলোআপ বৈঠক, মিউনিসিপ্যাল কমিশনার মারফত তাঁদের সমানে চিঠি দেওয়া— এ সবের জন্যই এই সাফল্য। শুরু হওয়া থেকে এখনও পর্যন্ত মুম্বইয়ে বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে ১৬ হাজারের বেশি কেস নোটিফায়েড হয়েছে, সেখানে শহরে হয়েছে মাত্র ৩১৪টি। এখানেই স্পষ্ট পার্থক্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy