Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা: চিত্রগ্রাহকের জীবনচিত্র

গত ৪ জুন সৌমেন্দু রায় ‘জীবনস্মৃতি’র কিউরেটর অরিন্দম সাহা সরদারের হাতে তুলে দিয়েছেন তাঁর সৃষ্ট আলোকচিত্রে সমৃদ্ধ কয়েকটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের কপি।

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

সত্যজিৎ রায়ের ‘রবীন্দ্রনাথ’ তথ্যচিত্রে চিত্রগ্রহণের জন্য ডাক পেলেন তিনি, একই সঙ্গে তাঁরই পরিচালিত কাহিনিচিত্র ‘তিনকন্যা’য় (সঙ্গে তার শুটিঙে সত্যজিৎ রায়)। এ বার স্বাধীন আলোকচিত্রীর ভূমিকায়। বাকিটা উজ্জ্বল ইতিহাস। সত্যজিৎ ছাড়াও সৌমেন্দু রায় (জন্ম ১৯৩২) কাজ করেছেন তরুণ মজুমদার, তপন সিংহ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, রাজা সেনের মতো পরিচালকের সঙ্গে। পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার-সহ বহু সম্মান। এ বার জীবনস্মৃতি ডিজিটাল আর্কাইভ, উত্তরপাড়া ও হিন্দমোটর ফোকাস-এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে সৌমেন্দু রায়ের জীবন ও সৃজন আধারিত ডিজিটাল আর্কাইভ ‘সৌমেন্দু সিন্দুক’। গত ৪ জুন সৌমেন্দু রায় ‘জীবনস্মৃতি’র কিউরেটর অরিন্দম সাহা সরদারের হাতে তুলে দিয়েছেন তাঁর সৃষ্ট আলোকচিত্রে সমৃদ্ধ কয়েকটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের কপি। দিয়েছেন সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তাঁর স্বাধীন আলোকচিত্রের শুটিং পর্যায়ের বিভিন্ন খুঁটিনাটি তথ্য সংবলিত একটি ডায়েরি। এর আগে বিভিন্ন সময়ে তিনি ‘জীবনস্মৃতি’কে দান করেছেন অনেক বই, গুগাবাবা-য় হাল্লা রাজার সভাগৃহে ব্যবহৃত একটি চাঁদমারি আর সত্যজিৎ রায়-সহ নানা পরিচালকের যে সব ছবিতে তিনি চিত্রগ্রাহকের কাজ করেছেন সে সবের শুটিং স্টিলের ডিজিটাল কপি। গত বারো বছরের চেষ্টায় সৌমেন্দুর করা কাহিনিচিত্র তথ্যচিত্র ও টেলিচিত্রের প্রায় নব্বই শতাংশের ডিজিটাল কপি এখন ‘জীবনস্মৃতি’র সংগ্রহে। আছে তাঁর সাক্ষাৎকার, সৌমেন্দুর আলোকচিত্র প্রশিক্ষণের ধারাবাহিক চার বছরে প্রায় তিন হাজার মিনিটের অডিয়ো-ভিজ়ুয়াল— যা আগামী প্রজন্মের এই শিল্প চর্চার জন্য অমূল্য। গবেষকদের ব্যবহারের জন্য সৌমেন্দু রায়ের এই দানকে সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও ব্যবহারের যথাযথ ব্যবস্থা করবে ‘জীবনস্মৃতি’, জানালেন অরিন্দম। তাদেরই উদ্যোগে ১৪ জুন বিকেল ৫টায় চিত্রবাণী সভাগৃহে ‘গুগাবাবা ৫০’ শীর্ষকে বলবেন দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। দেখানো হবে অরিন্দম সাহা সরদার নির্মিত ৭২ মিনিটের ‘সৌমেন্দু রায়’ (২০০৭) তথ্যচিত্রটি।

প্রয়াণ

ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত সুদর্শন ভদ্র মিতবাক তথ্যনিষ্ঠ মানুষটির কণ্ঠ আর শুনতে পাবেন না উনিশ শতকে আগ্রহী মানুষজন। অলোক রায় (১৯৩৬-২০১৯) অধ্যাপনা করতেন স্কটিশ চার্চ কলেজে। পড়িয়েছেন উত্তরবঙ্গ, যাদবপুর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে পড়ানোর বাইরে তাঁকে সবাই চিনতেন রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্তের ভাষায় ‘ঊনবিংশ শতাব্দীর বঙ্গদেশ সম্বন্ধে এক বহুশ্রুত গবেষক ও লেখক হিসেবে।’ তাঁর সম্পাদিত ‘নাইনটিন্থ সেঞ্চুরি স্টাডিজ়’ ও ‘কাউন্টারপয়েন্ট’ উনিশ শতক চর্চার আকরগ্রন্থ। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির জীবনী গ্রন্থমালার সম্পাদক হিসেবে জীবনীগ্রন্থ নির্মাণের চমৎকার একটি কাঠামোর পরিকল্পক। তাঁরই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে বঙ্কিমচন্দ্রের সুমুদ্রিত সুবিন্যস্ত রচনাবলি, প্যারীচাঁদ মিত্র রচনাবলি। তাঁর ভারতবিদ্যাচর্চার ইতিহাস ও রাজেন্দ্রলাল মিত্র নিয়ে গবেষণা দেশে বিদেশে স্বীকৃত। এ দেশে মিশনারিদের কাজকর্মের সালতামামি ছিল তাঁর নখদর্পণে। তাঁর সম্পাদিত মধুসূদনের ‘কৃষ্ণকুমারী’ ও বিহারীলালের ‘সারদামঙ্গল’ পড়লে টের পাওয়া যায় পড়ুয়াদের জানার পরিধি কতটা সম্প্রসারিত করতে পারতেন তিনি। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর জীবনব্যাপী উনিশ শতক চর্চার ফসল ‘উনিশ শতকে নবজাগরণ/ স্বরূপ সন্ধান’। পেয়েছেন নানা সম্মান। ৬ জুন তাঁর প্রয়াণে বঙ্গদেশের উনিশ শতক চর্চার ধারাটি রিক্ত হল সন্দেহ নেই।

শতবর্ষে

বনফুল ওরফে বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের অনুজ, চিত্রপরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় ওরফে ঢুলুবাবুর (১৮.৬.১৯১৯-১০.০২.২০১৬) জন্ম বিহারের কাটিহার জেলার মণিহারি গ্রামে। ম্যাট্রিক পাশ করে শান্তিনিকেতনে, এর পর বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে পড়তে যান। ডাক্তারি পড়া ছেড়ে নিউ থিয়েটার্সে তাঁর চলচ্চিত্রজীবন শুরু। বনফুল রচিত ‘কিছুক্ষণ’ চলচ্চিত্রায়ন দিয়ে হাতেখড়ি। ২৬টি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছবি, ৩টি টেলিফিল্ম এবং একটি ধারাবাহিকের তিনি সফল পরিচালক। ‘কিছুক্ষণ’-এ যেমন রবি ঘোষের আত্মপ্রকাশ, তেমনই ‘শীলা’তে শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, ‘নিশিপদ্ম’-এ উত্তমকুমারের অন্য ধরনের চরিত্রে (টাইপ) প্রথম অভিনয়, ‘ধন্যি মেয়ে’-তে জয়া ভাদুড়ী, ‘মৌচাক’-এ রঞ্জিত মল্লিক, ‘নদী থেকে সাগরে’তে মিঠুন চক্রবর্তী প্রথম বাংলা ছবিতে নায়ক এবং দেবশ্রী রায় নায়িকা। তাঁর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ১৮ জুন বিকেল ৫টায় নন্দন ২-এ আলোচনায় রঞ্জিত মল্লিক, মাধবী মুখোপাধ্যায়, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, সূর্য বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ‘অগ্নীশ্বর’ ছবিটি দেখানো হবে।

গানের পিছনে

১৯২৬-এ মুসোলিনির আমন্ত্রণে ইটালি যান রবীন্দ্রনাথ। কবি ও তাঁর সফরসঙ্গীরা কেউ ইটালির ভাষা জানতেন না। এই সুযোগে কবির কিছু বক্তব্য সে দেশের সংবাদমাধ্যমে বিকৃত ভাবে পরিবেশিত হয়— যা পড়ে মনে হতে পারে তিনি ফ্যাসিস্ট শাসনকেই সমর্থন করছেন। রম্যাঁ রলাঁ-র কাছে পৌঁছে বিষয়টি বুঝতে পারেন রবীন্দ্রনাথ। দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ়কে চিঠিতে জানান তাঁর প্রকৃত মতামত, সে চিঠি ছাপা হয় ‘ম্যাঞ্চেস্টার গার্ডিয়ান’ পত্রিকায়। সফরের শেষ দিকে, অনেক দিন পর গানের ঝরনা নামে তাঁর কলমে। লেখেন ২৪টি গান। এমনই ক’টি গান নিয়ে তার পটভূমির খোঁজে কৃষ্ণেন্দু সেনগুপ্তের বিন্যাসে ‘গানের দল পুনশ্চ’ এই পর্বের গল্প শোনাবে ‘অন্তবিহীন ফেরাফেরি’ অনুষ্ঠানে। ১৪ জুন সন্ধে সাড়ে ৬টায় রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবনে।

প্রতিষেধক

২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের কিছু কাল আগে তিনি বলেছিলেন, ‘‘যে-ভারতবর্ষ নরেন্দ্র মোদীকে ভোটে জিতিয়ে আনতে চলেছে, সে-ভারতবর্ষে আমি বাঁচতে চাই না।’’ হিন্দুত্ববাদীরা তাঁকে পাকিস্তানে গিয়ে বাঁচতে বলেছিল। তার দরকার হয়নি; কারণ, ফল প্রকাশের আগেই তাঁর প্রয়াণ ঘটে। তিনি বিশিষ্ট সাহিত্যিক ইউ আর অনন্তমূর্তি। বাবরি মসজিদ যখন ভাঙা হয়েছিল, সাহিত্য অকাদেমির সভাপতি হিসেবে তিনি বলেছিলেন, হিন্দুত্ববাদীদের এই সেয়ানা পাগলামির যথার্থ সাংস্কৃতিক প্রতিষেধক হল রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’ উপন্যাস। আনন্দময়ীকে ঘিরে ধর্মসম্প্রদায়ের পরিচয়মুক্ত, মানবিক এক ভারতবর্ষের যে-চিত্র এঁকেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তা এই হিন্দুত্ববাদের অসারতাকে ব্যবচ্ছেদ করে দেখিয়ে দিয়েছিল। আজ অনন্তমূর্তির কথা খুব বেশি করে মনে পড়ে। তাঁর পরামর্শ মেনে, ‘গোরা’কে হাতিয়ার করে বই-চিত্র কালচারাল সোসাইটি আয়োজন করেছে ‘কালবেলায় রবীন্দ্র-স্মরণ’ অনুষ্ঠান। আলোচনায় সলিল বিশ্বাস, অভ্র ঘোষ, আশীষ লাহিড়ী। ‘গোরা’র নির্বাচিত কিছু অংশের নাট্যপাঠ করবেন তারক গঙ্গোপাধ্যায়, ব্রততী দাস, ছোটন দত্তগুপ্ত। গান গাইবেন কৃষ্ণেন্দু সেনগুপ্ত। কলেজ স্ট্রিটের বই-চিত্র সভাঘরে, ১৩ জুন বিকেল পাঁচটায়।

তিন জন কবি

ভিন্ন দৃষ্টিকোণ অথচ অন্য চিন্তকের মনের প্রশ্নে অহংহীন তার্কিক অনুশীলনের তাগিদে জন্ম নেওয়া তিনটি সংগঠন— পরিচয় (১৯৩১), প্রগতি লেখক সংঘ (১৯৩৬) ও আইপিটিএ (১৯৪৩) এ বার একযোগে স্মারক আলোচনার আয়োজন করেছে। আলোচনার কেন্দ্রে শতবর্ষ পেরিয়ে আসা তিন ব্যক্তিত্ব সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১৯১৯-২০০৩), কাইফি আজ়মি (১৯১৯-২০০২) ও অমৃতা প্রীতম (১৯১৯-২০০৫)— বাংলা উর্দু ও পঞ্জাবি ভাষার তিন বিশিষ্ট কবিকে নিয়ে বলবেন পবিত্র সরকার, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, দবীর আলম ও গীতেশ শর্মা। ১৪ জুন বিকেল ৫টায়, মহাবোধি সোসাইটি হলে।

রসিকেষু

‘‘আমি কবে ছবি আঁকা আরম্ভ করি জানা নেই। সে-কথা কারোর পক্ষে মনে থাকার কথাও নয়। এই ব্যাপারটা ছোট বয়সের গোপনীয়তার আড়ালেই লালিত হয়। একদিন হঠাৎ কারোর নজরে পড়ে বাহবার জাদুমন্ত্রেই বিকশিত হতে থাকে।...’’ শিল্পী গণেশ হালুই (জন্ম ১৯৩৬) লিখেছেন তাঁর স্মৃতিচিত্র আমার কথা-য় (দেবভাষা)। এ বার তাঁরই স্বাক্ষরিত ছবির প্রিন্ট নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাসে, ১৫-৩০ জুন (মঙ্গলবার বাদে রোজ ২-৮.৩০)। ছবি যাতে সাধারণ শিল্পরসিকের কাছে পৌঁছতে পারে, সে জন্যই মূল ছবির হুবহু উন্নত মানের প্রিন্ট সহজলভ্য করার উদ্যোগ। ১৫ জুন, উদ্বোধনী সন্ধ্যায় প্রকাশিত হবে গণেশ হালুইয়ের আমার শিল্পভাবনা বইটি।

স্মরণসভা

চলে গেলেন বাংলা কল্পবিজ্ঞান আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা অদ্রীশ বর্ধন। তাঁরই সম্পাদনায় ১৯৬৩ সালে জন্ম নেয় ভারতের প্রথম কল্পবিজ্ঞান পত্রিকা ‘আশ্চর্য!’। ক’বছর পরেই প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতের প্রথম ‘সায়েন্স ফিকশন সিনে ক্লাব’। সভাপতি সত্যজিৎ, সম্পাদক অদ্রীশ। স্ত্রী-র আকস্মিক মৃত্যুতে ‘আশ্চর্য!’ বন্ধ করে দিলেও বছর কয়েক পরে জন্ম নিল ‘ফ্যানট্যাসটিক’। এ বার কেবল পত্রিকা নয়, প্রকাশনাও। সত্যজিৎ, সুনীল, শীর্ষেন্দু, সিরাজরা লেখা দিতেন। উঠে আসছিলেন তরুণরাও। তবু পত্রিকার পাতা ভরাতে দু’হাতে ‌লিখেছেন তিনি। প্রফেসর নাটবল্টু চক্র বা গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্রকে নিয়ে মৌলিক লেখার সঙ্গে জুল ভের্ন, অ্যালান পো, এইচপি লাভক্র্যাফট, কোনান ডয়েলের রচনার অনুবাদ নিঃসন্দেহে তাঁর অবিস্মরণীয় কীর্তি। গত ২১ মে ৮৬ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন তিনি। তাঁর বহু বই-ই আজ আর বাজারে লভ্য নয়। তবে আশার কথা, কল্পবিশ্ব প্রকাশনী শুরু করেছে তার পুনঃপ্রকাশ। তাঁকে নিয়ে ১৫ জুন বিকেল ৫টায় কলেজ স্ট্রিটে ত্রিপুরা হিতসাধিনী সভাঘরে একটি স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

রবীন্দ্র-সহযোগী

রবীন্দ্রনাথ নতুন নতুন সুর তৈরি করলেই ডাক পড়ত দিনুর। সেই সব সুরকে স্বরলিপির স্থায়ী বাহনে বসাতেন দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৮২-১৯৩৫)। ফাল্গুনী নাটকের উৎসর্গপত্রে এই ভ্রাতুষ্পুত্রটির সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন: ‘আমার সকল গানের ভাণ্ডারী’। দ্বিপেন্দ্রনাথ-পুত্র দিনেন্দ্রনাথ বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়তে গিয়ে পাশ্চাত্য সঙ্গীতে তালিম নিয়ে ফিরে এলেন। দক্ষ অভিনেতা ছিলেন। বহু ভাষা শিক্ষা করেছেন, তার মধ্যে ইংরেজি ও ফরাসিতে বিশেষ ব্যুৎপন্ন ছিলেন। অনুবাদ করেছেন বিদেশি গল্প। বীণ কাব্যগ্রন্থটি তাঁর কবিপ্রতিভার প্রমাণ। ১৯ জুন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় তাঁকে নিয়ে বলবেন পিনাকেশ সরকার, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেকানন্দ হলে, শিরোনাম ‘রবীন্দ্র-সহযোগী দিনেন্দ্রনাথ’। দ্বিতীয় পর্বে রবীন্দ্রনাথের ভাঙাগানের ডালি নিয়ে কথা ও গানের অনুষ্ঠান ‘রূপান্তরী’। নিবেদনে শুভশ্রী ভট্টাচার্য। মার্গ ও রবীন্দ্র সঙ্গীতে দীক্ষিত শুভশ্রী কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, প্রসাদ সেনের সুযোগ্য ছাত্রী। তাঁর সঙ্গে এসরাজে থাকবেন শিউলি বসু, তবলায় অপর্ণা মণ্ডল। আয়োজক অহর্নিশ।

হৃদি ভেসে যায়

গঙ্গার সঙ্গে মানুষের জীবন ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। ‘‘গঙ্গা নানা বাধাবিপত্তির মধ্যে দিয়ে চিরপ্রবহমান, তেমনি মানুষের জীবনটাও। গঙ্গা তার পূর্ণ যাত্রায় বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে— কখনও সে দেশ ভাগ করে; কখনও বা সে ভিন্ন সংস্কৃতিকে মিশিয়ে অদ্ভুত মেলবন্ধন ঘটায়। অথচ তার কষ্ট কেউ বোঝে না, তাই তাকে আমরা কলুষিত করতে দ্বিধাবোধ করি না। আশিয়ানা নৃত্যগোষ্ঠীর অনাথ ছেলেমেয়েদের জীবনচর্যাও এই গঙ্গার মতোই’’, বলছিলেন অনুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার এই কাহিনিসূত্রে রবীন্দ্রসদনে ১৪ জুন বিকেল ৫টায় তাঁর নৃত্যগোষ্ঠী দমদম রিদমস্কেপ ও তাঁর প্রশিক্ষিত আশিয়ানার ছেলেমেয়েরা পরিবেশন করবে ‘হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে’। দেখা যাবে কীর্তনের সঙ্গে দমদম রিদমস্কেপের ‘কৃষ্ণপ্রিয়া’ নৃত্যনাট্য। বিশেষ ভূমিকায় থাকবেন কোহিনুর সেন বরাট। সমগ্র অনুষ্ঠানটির ভাবনা, কোরিয়োগ্রাফি, পরিচালনায় অনুশ্রী স্বয়ং।

অপ্রতিরোধ্য

বাংলা রঙ্গালয়ের এক আশ্চর্য ব্যক্তিত্ব অমরেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৭৬-১৯১৬)। অল্প বয়সেই স্বশিক্ষিত নট হিসেবে উত্থান, মৃত্যুর আগে প্রায় দু’দশক তিনি ছিলেন বঙ্গরঙ্গমঞ্চে অপ্রতিরোধ্য। শুধু কি নট? কবি, নাট্যকার, প্রযোজক, নাট্যমঞ্চের স্বত্বাধিকারী, অধ্যক্ষ, শিক্ষক— বিবিধ ভূমিকা, আর প্রতিটিতেই সফল। রঙ্গমঞ্চের দৃশ্যপট ও সাজসজ্জার ভোল পাল্টে দিয়েছিলেন তিনি, নাটকের প্রচারেও এনেছিলেন নতুন মাত্রা। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের উপযুক্ত বেতন তিনিই শুরু করেন। প্রকাশ করেন ‘রঙ্গালয়’, ‘নাট্যমন্দির’-এর মতো নাট্যপত্রিকা। ১৯০৪ সালে তাঁর ‘হিরণ্ময়ী’ নাটকের ২৩টি শো থেকে আয় হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা, আজকের নিরিখেও যা বিস্ময়কর। আবার তাঁর ব্যক্তিজীবনও কর্মজীবনের মতোই চমকপ্রদ। অমরেন্দ্রনাথের জীবনে সমস্ত সম্পর্কই বিচিত্র সম্পর্ক। তা সে মায়ের সঙ্গেই হোক, স্ত্রীর সঙ্গেই হোক, নটী তারাসুন্দরী অথবা তাঁর আজীবন সঙ্গী নটী কুসুমকুমারীর সঙ্গেই হোক। তবে এই জটিল সম্পর্কগুলিকে মাথায় রেখেও বলা যায়, তাঁর সঙ্গে সবচেয়ে বিচিত্র, ব্যাখ্যাতীত সম্পর্ক ছিল নট, নাট্যকার, অভিনেতা গিরিশচন্দ্র ঘোষের। চির পরিচিত গিরিশ আমাদের কাছে নতুন করে ধরা দেন অমরেন্দ্রনাথের সংস্পর্শে এসে। কেমন সে সম্পর্ক, কী সেই সম্পর্কের সমীকরণ যার আবর্তে পড়ে গিরিশচন্দ্রের মতো প্রতিভাকেও নতুন করে চিনতে হয় আমাদের! মূলত অমরেন্দ্রনাথের থিয়েটার জীবন এবং গিরিশচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ভিত্তিতেই নির্মিত ‘সংযোগসূত্র’ নাট্যদলের নতুন নাটক ‘প্রথমাঙ্ক, একটি অমর নাট্যকথা’। রচনা ও নির্দেশনায় নীলা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখা যাবে ১১ জুন সন্ধে সাড়ে ৬টায় মিনার্ভায়। সঙ্গে ‘বুদ্ধদেব’ নাটকে (১৮৯৭) বুদ্ধের ভূমিকায় অমরেন্দ্রনাথ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE