শতবর্ষে
বনফুল ওরফে বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের অনুজ, চিত্রপরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় ওরফে ঢুলুবাবুর (১৮.৬.১৯১৯-১০.০২.২০১৬) জন্ম বিহারের কাটিহার জেলার মণিহারি গ্রামে। ম্যাট্রিক পাশ করে শান্তিনিকেতনে, এর পর বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে পড়তে যান। ডাক্তারি পড়া ছেড়ে নিউ থিয়েটার্সে তাঁর চলচ্চিত্রজীবন শুরু। বনফুল রচিত ‘কিছুক্ষণ’ চলচ্চিত্রায়ন দিয়ে হাতেখড়ি। ২৬টি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছবি, ৩টি টেলিফিল্ম এবং একটি ধারাবাহিকের তিনি সফল পরিচালক। ‘কিছুক্ষণ’-এ যেমন রবি ঘোষের আত্মপ্রকাশ, তেমনই ‘শীলা’তে শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, ‘নিশিপদ্ম’-এ উত্তমকুমারের অন্য ধরনের চরিত্রে (টাইপ) প্রথম অভিনয়, ‘ধন্যি মেয়ে’-তে জয়া ভাদুড়ী, ‘মৌচাক’-এ রঞ্জিত মল্লিক, ‘নদী থেকে সাগরে’তে মিঠুন চক্রবর্তী প্রথম বাংলা ছবিতে নায়ক এবং দেবশ্রী রায় নায়িকা। তাঁর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ১৮ জুন বিকেল ৫টায় নন্দন ২-এ আলোচনায় রঞ্জিত মল্লিক, মাধবী মুখোপাধ্যায়, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, সূর্য বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ‘অগ্নীশ্বর’ ছবিটি দেখানো হবে।
গানের পিছনে
১৯২৬-এ মুসোলিনির আমন্ত্রণে ইটালি যান রবীন্দ্রনাথ। কবি ও তাঁর সফরসঙ্গীরা কেউ ইটালির ভাষা জানতেন না। এই সুযোগে কবির কিছু বক্তব্য সে দেশের সংবাদমাধ্যমে বিকৃত ভাবে পরিবেশিত হয়— যা পড়ে মনে হতে পারে তিনি ফ্যাসিস্ট শাসনকেই সমর্থন করছেন। রম্যাঁ রলাঁ-র কাছে পৌঁছে বিষয়টি বুঝতে পারেন রবীন্দ্রনাথ। দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ়কে চিঠিতে জানান তাঁর প্রকৃত মতামত, সে চিঠি ছাপা হয় ‘ম্যাঞ্চেস্টার গার্ডিয়ান’ পত্রিকায়। সফরের শেষ দিকে, অনেক দিন পর গানের ঝরনা নামে তাঁর কলমে। লেখেন ২৪টি গান। এমনই ক’টি গান নিয়ে তার পটভূমির খোঁজে কৃষ্ণেন্দু সেনগুপ্তের বিন্যাসে ‘গানের দল পুনশ্চ’ এই পর্বের গল্প শোনাবে ‘অন্তবিহীন ফেরাফেরি’ অনুষ্ঠানে। ১৪ জুন সন্ধে সাড়ে ৬টায় রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবনে।
প্রতিষেধক
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের কিছু কাল আগে তিনি বলেছিলেন, ‘‘যে-ভারতবর্ষ নরেন্দ্র মোদীকে ভোটে জিতিয়ে আনতে চলেছে, সে-ভারতবর্ষে আমি বাঁচতে চাই না।’’ হিন্দুত্ববাদীরা তাঁকে পাকিস্তানে গিয়ে বাঁচতে বলেছিল। তার দরকার হয়নি; কারণ, ফল প্রকাশের আগেই তাঁর প্রয়াণ ঘটে। তিনি বিশিষ্ট সাহিত্যিক ইউ আর অনন্তমূর্তি। বাবরি মসজিদ যখন ভাঙা হয়েছিল, সাহিত্য অকাদেমির সভাপতি হিসেবে তিনি বলেছিলেন, হিন্দুত্ববাদীদের এই সেয়ানা পাগলামির যথার্থ সাংস্কৃতিক প্রতিষেধক হল রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’ উপন্যাস। আনন্দময়ীকে ঘিরে ধর্মসম্প্রদায়ের পরিচয়মুক্ত, মানবিক এক ভারতবর্ষের যে-চিত্র এঁকেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তা এই হিন্দুত্ববাদের অসারতাকে ব্যবচ্ছেদ করে দেখিয়ে দিয়েছিল। আজ অনন্তমূর্তির কথা খুব বেশি করে মনে পড়ে। তাঁর পরামর্শ মেনে, ‘গোরা’কে হাতিয়ার করে বই-চিত্র কালচারাল সোসাইটি আয়োজন করেছে ‘কালবেলায় রবীন্দ্র-স্মরণ’ অনুষ্ঠান। আলোচনায় সলিল বিশ্বাস, অভ্র ঘোষ, আশীষ লাহিড়ী। ‘গোরা’র নির্বাচিত কিছু অংশের নাট্যপাঠ করবেন তারক গঙ্গোপাধ্যায়, ব্রততী দাস, ছোটন দত্তগুপ্ত। গান গাইবেন কৃষ্ণেন্দু সেনগুপ্ত। কলেজ স্ট্রিটের বই-চিত্র সভাঘরে, ১৩ জুন বিকেল পাঁচটায়।
তিন জন কবি
ভিন্ন দৃষ্টিকোণ অথচ অন্য চিন্তকের মনের প্রশ্নে অহংহীন তার্কিক অনুশীলনের তাগিদে জন্ম নেওয়া তিনটি সংগঠন— পরিচয় (১৯৩১), প্রগতি লেখক সংঘ (১৯৩৬) ও আইপিটিএ (১৯৪৩) এ বার একযোগে স্মারক আলোচনার আয়োজন করেছে। আলোচনার কেন্দ্রে শতবর্ষ পেরিয়ে আসা তিন ব্যক্তিত্ব সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১৯১৯-২০০৩), কাইফি আজ়মি (১৯১৯-২০০২) ও অমৃতা প্রীতম (১৯১৯-২০০৫)— বাংলা উর্দু ও পঞ্জাবি ভাষার তিন বিশিষ্ট কবিকে নিয়ে বলবেন পবিত্র সরকার, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, দবীর আলম ও গীতেশ শর্মা। ১৪ জুন বিকেল ৫টায়, মহাবোধি সোসাইটি হলে।
রসিকেষু
‘‘আমি কবে ছবি আঁকা আরম্ভ করি জানা নেই। সে-কথা কারোর পক্ষে মনে থাকার কথাও নয়। এই ব্যাপারটা ছোট বয়সের গোপনীয়তার আড়ালেই লালিত হয়। একদিন হঠাৎ কারোর নজরে পড়ে বাহবার জাদুমন্ত্রেই বিকশিত হতে থাকে।...’’ শিল্পী গণেশ হালুই (জন্ম ১৯৩৬) লিখেছেন তাঁর স্মৃতিচিত্র আমার কথা-য় (দেবভাষা)। এ বার তাঁরই স্বাক্ষরিত ছবির প্রিন্ট নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাসে, ১৫-৩০ জুন (মঙ্গলবার বাদে রোজ ২-৮.৩০)। ছবি যাতে সাধারণ শিল্পরসিকের কাছে পৌঁছতে পারে, সে জন্যই মূল ছবির হুবহু উন্নত মানের প্রিন্ট সহজলভ্য করার উদ্যোগ। ১৫ জুন, উদ্বোধনী সন্ধ্যায় প্রকাশিত হবে গণেশ হালুইয়ের আমার শিল্পভাবনা বইটি।