বাড়িতেই পড়াশোনা, ম্যাট্রিক দেন প্রাইভেটে। আশুতোষ কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক— প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর, জুবিলি বৃত্তি ও একাধিক স্বর্ণপদক-সহ। সংস্কৃত, রুশ ভাষা জানতেন। ফরাসি শিখে ফ্রান্সের সরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও স্নাতকোত্তর, সেখানেও প্রথম শ্রেণিতে প্রথম! তিনি স্যর আশুতোষের বড় নাতনি প্রতিমা মুখোপাধ্যায় (১৯১৯-২০০৫), সঙ্গের ছবি। আশুতোষের বড় মেয়ে-জামাই, অমলা ও প্রমথনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় মেয়ে প্রতিমার বিয়ে হয় চার্টার্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার শ্মশানেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ১৯৫৫-৫৬’য় আমেরিকা, ইউরোপ ও মিশর সফর করেন। ১৯৭০-৭৬ মডার্ন হাই স্কুলে ইতিহাসের শিক্ষকতা করেন। শেষ দিন পর্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন পড়াশোনা আর সমাজকর্মে। আশুতোষ মুখার্জি মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউটের প্রতিমা মুখার্জি শতবর্ষ কমিটির আয়োজনে ১১ নভেম্বর বিকেল ৫টায় ইনস্টিটিউট প্রেক্ষাগৃহে তাঁর শতবার্ষিকী অনুষ্ঠান।
শেষ আইসিএস
অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ ছিলেন দ্বিতীয় হুগলি সেতু কমিশনের চেয়ারম্যান। কলকাতাবাসীকে বড় যত্নের সঙ্গে দেখাতেন বিদ্যাসাগর সেতু। সান ফ্রান্সিসকোর ঐতিহাসিক গোল্ডেন গেট সেতুর মতো কাঠামো তার। নিজের প্রতিটি কাজের প্রতিই ছিল তাঁর গভীর বাৎসল্য। তিনি মনীষীমোহন সেন। ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের ১৯৪৪-এর ব্যাচের অফিসার। শেষ আইসিএস ব্যাচ। প্রথম ভারতীয় হিসেবে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা পাশ করে নজির গড়েন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এমএম সেন সেই বিরল জ্যোতিষ্কপুঞ্জেরই উত্তরাধিকারী। শিক্ষায়, কর্মবৃত্তে এবং জীবনচর্যায়। ডা. নীলরতন সরকার তাঁর মাতামহ, পিতা প্রেসিডেন্সি কলেজ অধ্যক্ষ ভূপতিমোহন সেন। মনীষীমোহন নানা কেন্দ্রীয় দফতরে গুরুদায়িত্ব সামলেছেন। ধ্রুপদী সঙ্গীত ও ঐতিহ্যে বুঁদ মানুষটির যত্নে লালিত বাড়ির গোলাপবাগটিও ছিল দেখার মতো। জন্মশতবর্ষের দু’মাস আগে, ২৩ অক্টোবর প্রয়াত হয়েছেন তিনি।
উৎস মানুষ
‘উৎস মানুষ’-এর প্রয়াত সম্পাদক অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় কুসংস্কারের পাশাপাশি যুক্তিহীন সামাজিক ঘটনাগুলো নিয়ে মানুষের মনকে নাড়া দেওয়ার কাজে তৎপর ছিলেন। এই ভাবনা থেকেই একাদশ অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা-র বিষয় ‘নাড়ি টেপা ডাক্তারির দিন আজ আর নেই’। ‘ফ্যামিলি ফিজ়িশিয়ান’রা আজ অবলুপ্ত প্রজাতি। রোগী-ডাক্তার বিশ্বাসের শেকড় উপড়ে অবিশ্বাসের চারাগাছ আজ মহীরুহ! অপর দিকে, অনেক বিপন্ন লোক জ্যান্ত ভগবান চান। ডাক্তার তা সাজতে রাজি নন বলে সাধু সন্ন্যাসী দৈবজ্ঞ গুরু অবাধ ক্ষমতা পেয়ে থাকেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগান্তকারী অগ্রগতি সত্ত্বেও অবস্থা খুব কি বদলেছে? এই সব প্রশ্ন নিয়ে জমে উঠবে উৎস মানুষ আয়োজিত অনুষ্ঠানটি। মহাবোধি সোসাইটিতে ১৬ নভেম্বর বিকেল ৪টেয়। বক্তা চিকিৎসক গৌতম মিস্ত্রি।
কর্মশালা
এশিয়াটিক সোসাইটি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অন্তর্গত ভারতীয় ভাষা অনুবাদের চর্চা কেন্দ্র এবং ইংল্যান্ডের ইস্ট অ্যাংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে ২১-২৫ অক্টোবর পাঁচ দিন ধরে বড়ো ভাষার ছোটগল্পের বাংলা ও ইংরেজিতে অনুবাদ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালা কলকাতায় অনুষ্ঠিত হল। প্রথম তিন দিন এশিয়াটিক সোসাইটিতে আর শেষ দু’দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্বল্প চর্চিত একটি ভারতীয় ভাষার সাহিত্যকে কী ভাবে সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দিয়ে সামাজিক ও সাহিত্যিক দায়বদ্ধতা পালন করা যায়, তা ব্যাখ্যা করেন যাদবপুরের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের প্রধান সায়ন্তন দাশগুপ্ত। বড়ো ভাষা নিয়ে চর্চা করেন এমন ছ’জন লেখক-অধ্যাপকের তত্ত্বাবধানে দশটি বড়ো ছোটগল্প বাংলা ও ইংরেজিতে অনুবাদ করেন অনুবাদকেরা। সমাপ্তি অধিবেশনে তার অংশ পাঠ করা হয়।
বহুরূপী
বহুরূপী পত্রিকা-র (সম্পা: প্রভাতকুমার দাস) শারদ সংখ্যা শুরুই হচ্ছে সৌরীনবাবুর ‘স্মৃতির অ্যালবাম’ দিয়ে। যেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘‘রক্তকরবী-তে যে সাড়া পড়েছিল তার সবই আমার স্মৃতিতে আছে। এমনকি রক্তকরবী বিষয়ে কোনও কোনও মহলের বিরূপতা।’’ লুপ্ত উদ্ধার-এ এ বার পুনর্মুদ্রণ করা হয়েছে বহুরূপী-র প্রথম সভাপতি মহর্ষি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের ‘ব্রতচারিণী’ নাটকটি। নাটকে জমিদার বিহারী মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অহীন্দ্র চৌধুরী। পুনর্মুদ্রিত হয়েছে কে. এ. বসির বি-এ-র ‘উদ্বাস্তু’ নাটকটিও, তা নিয়ে আলোচনা সুমন ভট্টাচার্যের। প্রকাশ পেয়েছে দেবাশিস মজুমদারের ‘বৈজয়ন্তিকা’, কুন্তল মুখোপাধ্যায়ের ‘লালন’, প্রবালকুমার বসুর ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’-সহ একাধিক নাটকের পূর্ণ পাঠ। শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় লন্ডনে চারটি সাম্প্রতিক নাট্যপ্রযোজনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। আলোচিত হয়েছে বহুরূপী-র সাম্প্রতিক কর্মশালার কথা।
সুরসাধক
সুরসাধক ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায় সেই বিরল বাঙালি, যাঁকে গোটা ভারত ‘উস্তাদ’ ডাকত। পাঁচ বছর বয়সে খেলাচ্ছলেই শোনাতেন গহরজানের গান, গেয়ে দিতেন দুরূহ কেদার। ১২ বছর বয়সেই টপ্পার রেকর্ড। বিস্ময় বালকের তান শুনেই শিষ্য বানিয়ে নিয়েছিলেন স্বয়ং খলিফা বদল খান। ত্রিশের দশকে ভীষ্মদেবের রাগসঙ্গীতে সারা ভারত সম্মোহিত। একই সঙ্গে ছিলেন সুরকারও। রেকর্ডিং রুমে ঢুকতে ঢুকতে একটি বার গান দেখে নিলেই নাকি তাঁর চলত। কাজী নজরুল সেই দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুমি ভগবান না ভূত?’ তাঁর শিষ্য ছিলেন শচীন দেব বর্মন, কাননবালা, ছায়া দেবী, যূথিকা দেবী, পাহাড়ী সান্যাল। আপনভোলা এই সংবেদনশীল গায়ক বহু বার সঙ্গীতমঞ্চ থেকে অজ্ঞাতবাসে গিয়েছেন। ৮ নভেম্বর ছিল তাঁর ১১০তম জন্মদিন। স্মরণিকায় ৯ নভেম্বর কাঁকুড়গাছি মোড়ের উৎসব মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল ভীষ্মদেব সঙ্গীত সম্মেলন। হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শোনালেন ওঙ্কার দাদরকর। আচার্য জয়ন্ত বসু পরিবেশন করলেন তাঁর ‘ওমনি শৃঙ্গার’। আয়োজনে ভীষ্মদেব মেমোরিয়াল ট্রাস্ট।
বঙ্গে শেক্সপিয়র
বঙ্গে শেক্সপিয়র। উনিশ শতক থেকেই বঙ্গরঙ্গমঞ্চে তাঁর নাটকের আবির্ভাব। অনুবাদও হয় স্বাভাবিক ভাবেই। হয় বঙ্গীকরণ। স্বয়ং বিদ্যাসাগর ‘কমেডি অব এরর্স’ নিয়ে লেখেন ‘ভ্রান্তিবিলাস’। সেই ধারা স্বাধীনতা-উত্তর পর্বে উৎপল দত্ত সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে আজও বহমান। এ বার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ‘শেক্সপিয়র ইন বেঙ্গল’ প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে ভিক্টোরিয়ার কেন্দ্রীয় হল-এ প্রদর্শনী ‘শেক্সপিয়র ইন বেঙ্গল’। থাকছে উনিশ শতকের শেষ পর্ব থেকে আজ পর্যন্ত বঙ্গে শেক্সপিয়র প্রযোজনার আলোকচিত্র, কস্টিউমের ছবি, চলচ্চিত্র থেকে স্থিরচিত্র, টিকিট ও পোস্টার-সহ নানা এফিমেরা, শ্রেণিকক্ষে শেক্সপিয়র পঠনপাঠন সংক্রান্ত নানা নথি, ছবি প্রচ্ছদ গান আরও কত কী। ৮-১৭ নভেম্বর প্রদর্শনীর সঙ্গে ১৩ নভেম্বর সাড়ে ৫টায় সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে আলোচনা, কথোপকথনে সুকান্ত চৌধুরী, এরিক জনসন (ফলজার শেক্সপিয়র লাইব্রেরির অন্যতম অধিকর্তা) ও পারমিতা চক্রবর্তী। সঞ্চালনায় দয়িতা মজুমদার।
কোলাজ-শিল্পী