Advertisement
E-Paper

‘অবৈধ’ ব্যবসা থেকে লাইসেন্স ফি আদায়

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ইটভাটা ব্যবসার যে শর্তাবলী, তাতে কলকাতার মতো জনবহুল এলাকায় তা কখনওই থাকতে পারে না। ভাটার ধোঁয়া থেকেও দূষণ ছড়াচ্ছে।’’

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৫৫
অনিয়ম: নাদিয়ালের একটি ইটভাটা। ছবি: সুমন বল্লভ

অনিয়ম: নাদিয়ালের একটি ইটভাটা। ছবি: সুমন বল্লভ

যে ব্যবসার ‘বৈধতা’ নেই সেই ব্যবসা থেকেই লাইসেন্স ফি আদায় করছে কলকাতা পুরসভা। ফলে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে পুরসভার অন্দরে। ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে বন্দর এলাকা নাদিয়ালের ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ইটভাটা। পরিবেশকর্মীদের প্রশ্ন, তা হলে কি কর্তৃপক্ষ অবৈধ ব্যবসা থেকে লাইসেন্স ফি আদায় করে তার বৈধতা দিচ্ছেন?

নাদিয়ালে রিভার সাইড রোডে গঙ্গার ধারে একটি পুরনো ইটভাটা রয়েছে। নিয়ম মতো কলকাতা পুর এলাকায় কোনও ইটভাটা থাকতে পারে না। ২০১৫ সালের ২৯ মে নবান্ন থেকে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তাতে বলা হয়েছিল, জনবসতি এবং হাসপাতালের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনও ইটভাটা রাখা যাবে না। এমনকি রাস্তার দুশো মিটার এবং নদী পাড়ের দুশো মিটারের মধ্যে ইটভাটা থাকাও আইনবিরুদ্ধ। অভিযোগ, গঙ্গা লাগোয়া ওই ভাটায় ইট তৈরির জন্য নদী তীরের মাটি অবাধে কেটে পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। রাস্তা লাগোয়া রয়েছে জনবসতি এবং সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালও। অতএব ইটভাটার ক্ষেত্রে কোনও নিয়মই মানা হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তাঁদের আরও অভিযোগ, ‘‘১৪১ নম্বর ওয়ার্ডে গঙ্গা লাগোয়া এমন একাধিক ইটভাটা ভূমিক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নদীর মাটি কাটায় ধীরে ধীরে পাড় ধসে গোটা নাদিয়াল বিপদের সামনে দাঁড়িয়েছে।’’

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ইটভাটা ব্যবসার যে শর্তাবলী, তাতে কলকাতার মতো জনবহুল এলাকায় তা কখনওই থাকতে পারে না। ভাটার ধোঁয়া থেকেও দূষণ ছড়াচ্ছে।’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের অভিযোগ, ‘‘কলকাতার মতো শহরে ইটভাটা থাকতেই পারে না। ভাটা চালানোর লাইসেন্স ফি আদায় করে পুরসভা অবৈধ ব্যবসারই প্রশ্রয় দিচ্ছে।’’

নাদিয়ালের রিভার সাইড রোডের ভাটাটির মালিকানা শিখা চোংদার, অংশুমান চোংদার এবং অনির্বাণ চোংদারের নামে। ওই পরিবারের দাবি, সেটি ১৯০৫ সালে তৈরি হয়েছিল। শিখাদেবীর পুত্র পলাশ চোংদারের দাবি, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, ভূমি ও ভূমি সংস্কারের থেকে ছাড়পত্র নিয়ে নিয়ম মেনে সেটি চালানো হচ্ছে। এমনকি নতুন করে হাওয়া-ভাটা বা ফিক্সড চিমনিও তৈরি হয়েছে।’’

যদিও সে সবের কোনও নথি তিনি দেখাতে পারেননি। পলাশবাবুর মতে, ‘‘আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার আওতাধীন ছিল এই জায়গা। যদি ব্যবসা অবৈধই হয়, তবে ১৯৮০-র পরে বন্দর এলাকা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরে কেন পুর প্রশাসন ভাটা বন্ধ করে দেয়নি? বরং এলাকার ন’টি ইটভাটা থেকে নিয়মিত কর আদায় করে পুরসভা।’’

এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের দাবি, ‘‘শহরে কোনও কারখানার লাইসেন্স পুরসভা দেয় না। কেউ ব্যবসা করলে পুরসভা তার থেকে লাইসেন্স ফি নেয়।’’ ইটভাটা বেআইনি হওয়া সত্ত্বেও পুরসভা কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? অতীনবাবু বলেন, ‘‘ইটভাটার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের বক্তব্য, ‘‘সংযুক্ত এলাকা কলকাতা পুর এলাকায় ঢোকার পরে বহু ইটভাটা বন্ধ করা হয়েছে। জাতীয় পরিবেশ আদালত সম্প্রতি ইটভাটা নিয়ে একাধিক নিষেধ আরোপ করেছে। নাদিয়াল এলাকায় যে সব ভাটা রয়েছে, সেগুলি ওই নিয়ম মানছে কি না তা দেখা হবে।’’

Licence Fees Kolkata Municipality
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy