তাপ্পি: চলছে রাস্তা সারানোর কাজ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, এন এস সি বসু রোডে। নিজস্ব চিত্র
প্রতি বছরই পুরসভার রাস্তা দফতরের ঘুম ভাঙে বর্ষার আগে। তড়িঘড়ি করে জোড়াতাপ্পি দিয়ে রাস্তা সারানো হয়। বৃষ্টি শুরু হতেই সেই ‘ফাঁকিবাজি’কে বেআব্রু করে দিয়ে ফের ভাঙতে শুরু করে রাস্তা। তখন আবার রাস্তা সারাতে হয়। যার জেরে আবার এক দফা অর্থদণ্ড দিতে হয়। বছরের পর বছর এ ভাবেই চলছে। কোটি কোটি টাকা গলে যাচ্ছে রাস্তার পিছনে। অথচ, স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে না।
এ বারের ছবিটাও ব্যতিক্রম কিছু নয়। মাত্র দেড় দিনের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল বেশ কিছু এলাকা। সেই পরিস্থিতি সামলে ওঠার আগেই দেখা যায়, শহরের বহু রাস্তার অবস্থা বেশ করুণ। এতটাই যে, বর্ষার মধ্যেই পিচ আর পাথরকুচি নিয়ে গর্ত বোজাতে নেমে পড়েছে পুরসভার বাহিনী। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এই কাজ করে ঠিকাদার ছাড়া কি আর কারও লাভ হবে? কারণ, রাস্তা যে অচিরেই আবার ভাঙবে, তা তো এক রকম নিশ্চিত। তা হলে এই মেরামতির অর্থ কী?
রাস্তা সারাই নিয়ে মঙ্গলবার জরুরি বৈঠক হয় পুর ভবনে। সেখানে পুরসভার প্রতিটি বরোর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নিজেদের এলাকার রাস্তা খারাপ থাকলে দ্রুত সারান। শহরের যে সব রাস্তা নিয়ে পুরসভার চিন্তা বেশি, সেগুলি হল: মহাত্মা গাঁধী রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, গড়িয়াহাট রোড, বন্ডেল রোড, তারাতলা রোড, বেহালার এম জি রোড-সহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এগুলির মধ্যে কয়েকটির কাজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়েছে। ওই তালিকায় ছোটখাটো কিছু রাস্তাও রয়েছে। আগামী বছর পুর নির্বাচন। তার আগে বেহাল রাস্তার বিষয়টি বিরোধীদের হাতে অস্ত্র হিসেবে দিতে নারাজ পুর কর্তৃপক্ষ।
সারা বছর ছেড়ে এখন বর্ষার সময়ে রাস্তা সারানোর তোড়জোড় কি সেই কারণেই? মেয়র পারিষদ (রাস্তা) রতন দে-র দাবি, ‘‘আমরা মোটেই বৃষ্টির মধ্যে রাস্তা সারাইয়ের কাজ করছি না। সোমবার আকাশ পরিষ্কার ছিল। শহরের কিছু রাস্তার গর্ত বোজানো হয়েছে। সকলকেই বলা হয়েছে, বৃষ্টি হলে কাজ করবেন না।’’ তাঁর দাবি, প্রতি বছরই দুর্গাপুজোর আগে শহরে রাস্তার কাজ হয়ে থাকে। এ বার পুজো এগিয়ে এসেছে। তাই কাজ শুরু হয়েছে।
আগে হয়নি কেন? এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারি থেকে মে ভোটের জন্য কাজ হয়নি। তাই দেরি।’’ এ শহরের রাস্তা যে কতটা ভঙ্গুর, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই তা পরিষ্কার। যার জেরে যানজট হচ্ছে, দুর্ঘটনাও ঘটছে। পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার রাতে বাইপাস সংলগ্ন উত্তর পঞ্চান্নগ্রামে বেহাল রাস্তার কারণে এক স্কুটার আরোহী গাড়িতে চাপা পড়ে মারা যান। তাতে বিচলিত প্রশাসন ও পুলিশও। শহরের কোন কোন রাস্তা অবিলম্বে সারানো দরকার, সম্প্রতি তার একটি তালিকা পুরসভাকে দিয়েছে পুলিশ। এখন সেই রাস্তা সারানোর কাজ তাড়াহুড়ো করে করতে গিয়ে ঠিকাদারেরা মানের সঙ্গে আপস করছেন বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে রতনবাবু বলেন, ‘‘পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা বিষয়টি দেখছেন। তেমন কিছু ধরা পড়লে ফের এই কাজ করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy