Advertisement
E-Paper

‘দাদাগিরি’ করে দমদমে ছিনতাই গাড়ি

পুলিশ জানায়, নতুন পাড়ার ‘দাদা’দের এমন কীর্তিতে হতবাক ইএসআই হাসপাতালের ওই কর্মী। এত কিছুর পরেও পুলিশের ভূমিকায় বিস্মিত স্থানীয়রা। এ দিন স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় ছিনতাই হওয়া গাড়িটি উদ্ধার করে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৮ ০২:০৪
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুনসান কোনও রাস্তা নয়। জনবহুল এলাকায় ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র নামাতে গিয়ে প্রথমে ‘দমদম দাওয়াই’ খেলেন মালবাহী গাড়ির চালক এবং খালাসি। প্রাণ বাঁচাতে দু’জনে আবাসনের ভিতরে ঢুকে গেলে গাড়িটি নিয়ে চম্পট দেন পাড়ার মত্ত যুবকেরা! মানিকতলার ইএসআই হাসপাতালের কর্মী কৃষ্ণচন্দ্র দাসের নতুন ফ্ল্যাটের সামগ্রী আনা হয়েছিল ওই গাড়িতে। অভিযোগ, শনিবার রাত সাড়ে
১২টা নাগাদ এমনই ঘটেছে দক্ষিণ দমদমের সুভাষনগরে।

পুলিশ জানায়, নতুন পাড়ার ‘দাদা’দের এমন কীর্তিতে হতবাক ইএসআই হাসপাতালের ওই কর্মী। এত কিছুর পরেও পুলিশের ভূমিকায় বিস্মিত স্থানীয়রা। এ দিন স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় ছিনতাই হওয়া গাড়িটি উদ্ধার করে পুলিশ। গাড়িটির চাবি অভিযুক্তের বাড়ি থেকে পুলিশই উদ্ধার করেছে। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, মূল অভিযুক্ত সুমন দাস ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ধনঞ্জয় মজুমদারের ‘ঘনিষ্ঠ’ হওয়ায় তাকে ধরা নিয়ে দুপুর পর্যন্ত দোটানায় ভুগেছে দমদম থানার পুলিশ। সুমনকে আটক করা হলেও রাত পর্যন্ত চলে শুধু জিজ্ঞাসাবাদই। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ঠিক কী ঘটেছিল শনিবার রাতে?

সম্প্রতি সুভাষনগরে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে এস পাল রিকশা স্ট্যান্ডের কাছে ফ্ল্যাট কিনেছেন কৃষ্ণচন্দ্রবাবু। মুর্শিদাবাদের রেজিনগর থেকে সেই বাড়িতে আসবাবপত্র আসছিল। যানজটের কারণে দমদম পৌঁছতে রাত হয়ে যায়। এ দিন কৃষ্ণচন্দ্র জানান, রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ আসবাব নামানোর কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। সেই সময়ে রাস্তা আটকে রাখার অভিযোগ তুলে গাড়ির চালক এবং খালাসিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে নীল রঙের একটি গাড়ির সওয়ারি সুমন এবং তার সঙ্গীরা। কৃষ্ণচন্দ্রের আরও অভিযোগ, চালক সোহেল শেখ গালিগালাজের প্রতিবাদ করলে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। বাধা দিতে গেলে প্রহৃত হন খালাসিও। এরই মধ্যে রাস্তায় পড়ে থাকা পাথর দিয়ে গাড়িটি ভাঙতে শুরু করেন অভিযুক্তেরা।

কৃষ্ণচন্দ্রের কথায়, ‘‘ছ’বছরের ছেলের ঘুম ভাঙায় ওকে নিয়েই নীচে নেমেছিলাম। গাড়ি থেকে আর কয়েকটি মাত্র জিনিস নামানো বাকি ছিল। নেমে দেখি, একদল মত্ত যুবক চালক-খালাসিকে বেধড়ক মারধর করছেন। বাধা দিলে ছেলের সামনেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, হুমকি দেওয়া শুরু করেন আমাকেও।’’ কৃষ্ণচন্দ্রবাবু যখন আক্রমণের মুখে তখন চালক ফ্ল্যাটের ভিতরে দৌড়ে ঢুকে যান। অভিযোগ, সেই সময়ে তাঁর মাথা লক্ষ্য করে লাঠি ছোড়েন অভিযুক্তদের মধ্যে এক জন। কৃষ্ণচন্দ্রের দাবি, ‘‘লাঠির বারি মাথায় লাগলে চালক ওখানেই লুটিয়ে পড়তেন। প্রাণহানিও হতে পারত। এর পরে আমার চোখের সামনেই গাড়ি নিয়ে চলে যান ওঁরা। বাধা দেওয়ার আর সাহস পেলাম না!’’

রবিবার সকালে গাড়ির মালিক রতন সাহা জানান, চালক এবং খালাসির মুখে ও ঘাড়ে চোট লেগেছে। দমদম পুর হাসপাতালে তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা করানোর পরে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। কৃষ্ণচন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘গাড়ি নেওয়ার আগে ওঁরা চালককে হুমকি দিচ্ছিলেন, ‘সকালে গাড়ি আর খুঁজে পাবি না’!’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, অভিযুক্তদের মধ্যে অনেকে আছেন যাঁরা জেসপ কারখানায় যন্ত্রাংশ চুরির কারবারের সঙ্গে যুক্ত। গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেই চালককে ওই হুমকি দেওয়া হয়।

এ দিন সকাল থেকে সুভাষনগরে গাড়িটির খোঁজ শুরু করে পুলিশ। ছ’নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল যুব সভাপতি সৈকত দাসের সহযোগিতায় এলাকার কার কার নীল রঙের ওই গাড়ি আছে, তার তালিকা তৈরি হয়। এর পরে সুমনের ছবি দেখালে তাঁকে চিহ্নিত করেন চালক সোহেল। মাছ বাজারে সুমনের বাড়িতে গেলে পরিবারের অন্য সদস্যেরা গাড়ির চাবি পুলিশের হাতে তুলে দেন। সুমন সেই সময়ে বাড়িতে ছিলেন না। এর পরে ওই এলাকাতেই একটি স্কুলের পিছনে গাড়িটি উদ্ধার হয়।

ঘটনাক্রমের প্রেক্ষিতে কৃষ্ণচন্দ্র বলেন, ‘‘নতুন পাড়ায় এই অভিজ্ঞতার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’’ ছ’নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর শিশির বল বলেন, ‘‘সুভাষনগর খালপাড় জুড়ে সমাজবিরোধীদের যে দৌরাত্ম্য বাড়ছে, প্রশাসনের তা অজানা নয়। তাতে প্রশ্রয় দিলে এ রকমই হবে।’’ যার সঙ্গে মূল অভিযুক্তের ‘ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে এলাকা সরগরম, সেই ধনঞ্জয় বলেন, ‘‘ওয়ার্ডের যেহেতু বাসিন্দা, তাই সঙ্গে নিয়ে চলতে হয়। তা বলে অন্যায় করলে বরদাস্ত করব না! সুমন যা করেছেন, তা সমর্থন করি না।’’

Snatching Dum Dum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy