প্রতীকী ছবি।
বিকেলের রেড রোড। এঁকেবেঁকে চলেছে একটি হলুদ ট্যাক্সি। গলগল করে কালো ধোঁয়া ছড়াতে ছড়াতে। শহরের পথেঘাটে এমন দৃশ্য ব্যতিক্রম নয়। যে কোনও ব্যস্ত রাস্তায় কয়েক মিনিট দাঁড়ালেই এমন দৃশ্য আকছার চোখে পড়বে। পরিবেশকর্মীদের একাংশ বলছেন, কলকাতার দূষণে এই গা়ড়ির ধোঁয়াই সব থেকে বেশি দায়ী।
এক সময় দিল্লি ছিল দেশের বায়ুদূষণের রাজধানী। কিন্তু শেষ শীতের মরসুমে মার্কিন দূতাবাস এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বিশ্লেষণ করে পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, নিয়মিত দিল্লিকে টপকে ক্রমশ দূষণ রাজধানীর শিরোপা ছিনিয়ে নেওয়ার পথে এগোচ্ছে কলকাতা। প্রশ্ন উঠেছে, এমন যখন পরিস্থিতি তখন এই গাড়ির দূষণে নজর দেওয়া হচ্ছে না কেন?
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের অভিযোগ, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ১৫ বছরের পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিল করার কথা। কিন্তু সেই নির্দেশ পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। বহু ট্যাক্সিও তার মধ্যে রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘কলকাতা এখন গাড়ির বৃদ্ধাশ্রম হয়ে উঠেছে। এত পুরনো গা়ড়ি কোনও শহরে দেখা যায় না।’’ বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিমল গুহের অবশ্য দাবি, পুরনো ট্যাক্সি নিয়মিত বাতিল করা হয়। কিন্তু বহু ট্যাক্সিই যে দূষণ ছড়াচ্ছে,
সে কথা মেনে নিয়েছেন তিনি।
বিমলবাবু বলছেন, পুলিশ কিংবা দূষণ পরীক্ষা কেন্দ্রগুলি ঠিক মতো গাড়ি পরীক্ষা করছে না। তার ফলেই এই অবস্থা। কী ভাবে দূষিত ট্যাক্সি রাস্তায় চলছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। ‘‘আমরাও চাই গাড়ির দূষণ বন্ধ হোক। মঙ্গলবার মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয় আমি জানিয়েছি’’— বলছেন তিনি। প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিমেন্স ইউনিয়নের নেতা শম্ভুনাথ দে-র কথায়, ‘‘প্রায় রোজই শ’খানেক পুরনো ট্যাক্সি বাতিল হচ্ছে। ফলে পুরনো গাড়ি চলছে এমনটা ঠিক নয়।’’ তবে দূষণের কথা মেনে নিয়েছেন তিনিও। বলছেন, ‘‘দূষণের ক্ষেত্রে নজরদারির ফাঁক রয়েছে, এটা ঠিকই।’’
গাড়ির দূষণ পরীক্ষা বা নির্দিষ্ট সময়ে পুরনো গাড়ি বাতিল করা হয় না, এই অভিযোগ মানতে চাননি কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের পদস্থ কর্তারা। তাঁরা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী পরিবহণ দফতর গাড়ি বাতিল করে। তার বাইরে ফাঁকি দিয়ে যে সব গাড়ি চলছে সেগুলি ধরতে নিয়মিত অভিযান হয়। দূষণ ধরা পড়লে জরিমানা করা হয়। তা হলে এমন দূষিত গাড়ি চলছে কী ভাবে? ওই পুলিশ অফিসারের জবাব, ‘‘এত গাড়ির মধ্যে দু’একটি ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।’’ এ ব্যাপারে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পরিবেশ দফতরের বক্তব্য, পথেঘাটে জরিমানা করার দায়িত্ব পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের। তাঁরা নির্দেশিকা দুই দফতরের কাছেই পাঠিয়ে দেন। পর্ষদের এক কর্তা বলেন, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে দূষণ পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিকে কড়া নিয়মের আওতায় আনা হচ্ছে।’’
কিন্তু কবে এই সব শুধরে নিয়ে দূষণ কমবে শহরে, তার উত্তর কিন্তু মিলছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy