লড়াই: রাস্তায় বাস কম। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে একটি বাসের দেখা মিলতেই প্রাণপণ ওঠার চেষ্টায় যাত্রীরা। শনিবার, ধর্মতলায়। নিজস্ব চিত্র
গত কয়েক দিনে ডিজেলের দাম আকাশছোঁয়া হতেই শহরের রাস্তা থেকে বেসরকারি বাস প্রায় উধাও হয়ে যেতে বসেছে বলে খবর।
ফলতা-বাবুঘাট, সরশুনা-হাওড়া, ঠাকুরপুকুর-পালবাজার, ধর্মতলা-ব্যারাকপুর, গড়িয়া-বারাসতের মতো বহু রুটে বাসের সংখ্যা অস্বাভাবিক কমে গিয়েছে
বলে নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ। এ ছাড়াও প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড-নিমতলা, যাদবপুর-বিমানবন্দর, টবিন রোড-বি বা দী বাগ, তপসিয়া-টবিন রোড, শীলপাড়া-সল্টলেক-সহ বহু রুটে মিনিবাসের সংখ্যা কার্যত দু-একটিতে এসে ঠেকেছে।
বার বার ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে সরব হয়েও ফল না পেয়ে হতাশ বাস মালিকেরা জানিয়েছেন, তেলের দাম যে ভাবে বেড়েছে তাতে অর্ধেকের বেশি বাস রাস্তায় নামতে পারছে না। নতুন করে ধর্মঘট ডেকে কী হবে? বাস মালিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, গত কয়েক দিনের ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির জেরে প্রায় সাত হাজার বেসরকারি বাসের মধ্যে অন্তত ৪ হাজারই রাস্তায় নামছেনা। ১২০০ মিনিবাসের মধ্যে অন্তত ৭০০ বাস কম চলছে বলে দাবি মিনিবাস সংগঠনের কর্তাদের।
অভিযোগ উঠেছে, দুপুরের দিকে যাত্রী কম হওয়ায় অনেক রুটেই বাস চালাতে চাইছেন না বহু ড্রাইভার–কন্ডাক্টরেরা। সকালে অফিসের ব্যস্ত সময়ে কয়েক বার বাস নিয়ে পুরো রুটে যাতায়াত করে ফের সন্ধ্যের জন্য অপেক্ষা করছেন। বেশ কিছু রুট কার্যত উঠে যাওয়ার মুখে বলে অভিযোগ বাসমালিক সংগঠনগুলির।
জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বেসরকারি বাসের ভাড়া এখনও ৬ টাকায় থমকে রয়েছে। অথচ যন্ত্রাংশ, জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ থেকে বিমা সবকিছুরই খরচ বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। কিন্তু ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে বেসরকারি বাসের আর কোনও ভাড়া বাড়েনি। অথচ ঘুরপথে ভাড়া বেড়েছে সরকারি বাসের। পরিবহণ নিগমগুলির বাসের ভাড়া গড়ে ৯-১০ টাকা।
মিনিবাস কোঅর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসুর অভিযোগ, কসবা-হালতু থেকে হাওড়া, ঊষাগেট থেকে হাওড়া, সিঁথির মোড় থেকে বেকবাগান, বিমানবন্দর থেকে বি বা দী বাগ, টালাপার্ক থেকে খিদিরপুর, নোয়াপাড়া থেকে হাওড়া, সল্টলেক সেচ ভবন-যাদবপুরের মতো বেশ কিছু রুট কার্যত উঠে গিয়েছে।
বাসের সংখ্যা কমে গিয়ে বহু রুটে অটোর ব্যবসা বাড়ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা। বাস না পেয়ে যাত্রীরা অনেক বেশি টাকা দিয়ে অটোয় যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও অভিযোগ বাস মালিকদের। প্রদীপনারায়ণের অভিযোগ মিনিবাসে যাত্রী পিছু খরচ প্রায় ১৪ টাকায় পৌঁছে গেলেও বাসের ন্যূনতম ভাড়া এখনও ৭ টাকায় আটকে।
বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সহ সভাপতি দীপক সরকার বলেন, “তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে পুলিশি জুলুমও রয়েছে। আমরা পরিবহণ দফতরকে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি একাধিক বার জানিয়েছি।”
পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য পরিবহণ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নারায়ণস্বরূপ নিগমের নেতৃত্বে একটি কমিটি বাস মালিকদের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে বাসভাড়া বাড়ানো হবে কি না এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’ রাস্তায় বেসরকারি বাসের সংখ্যা কম, তা মানতে চাননি শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘গণ পরিবহণ স্বাভাবিক রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy