Advertisement
E-Paper

দুর্ঘটনায় দুমড়োল গাড়ি, মৃত বাবা ও শিশুপুত্র

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন উলুবেড়িয়ার মনসাতলায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে তাঁদের গাড়িটি একটি দাঁড়িয়ে থাকা লরির পিছনে সজোরে ধাক্কা মারে। সংঘর্ষে দুমড়ে যায় গাড়িটি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৮ ০২:০৮

মাত্র এক সপ্তাহ আগেই নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছিল শিশুটি। সাত দিন মাত্র স্কুলে গিয়েছে সে। সপ্তাহান্তে দিদিমার জন্মদিন পালন করতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় ছারখার হয়ে গেল সব কিছু। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার ভোরের ওই দুর্ঘটনায় শিবম সাহা (৬) নামে সেই শিশুর সঙ্গে মৃত্যু হয়েছে তার বাবা প্রীতম সাহারও (৩৬)। সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিবমের মা ও দিদিমাও। কোলাঘাটের একটি ধাবা থেকে ফেরার পথে ঘটনাটি ঘটেছে। শিবম কলকাতা পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপি ঘোষের একমাত্র নাতি।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন উলুবেড়িয়ার মনসাতলায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে তাঁদের গাড়িটি একটি দাঁড়িয়ে থাকা লরির পিছনে সজোরে ধাক্কা মারে। সংঘর্ষে দুমড়ে যায় গাড়িটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় উল্টোডাঙার মুরারিপুকুর লেনের বাসিন্দা প্রীতম ও শিবমের। গুরুতর জখম হন কাউন্সিলরের স্ত্রী মধুমিতা ঘোষ, তাঁদের মেয়ে নবনীতা এবং প্রীতমের এক বন্ধু। তাঁদের প্রথমে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তাঁদের স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার ই এম বাইপাসের একটি হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বাপিবাবুর স্ত্রী ও মেয়ে, দু’জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। এ দিন বিকেলেই মধুমিতাদেবীর একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রীতম ‘গতিধারা’ প্রকল্পে গাড়ি কিনে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এ দিন নিজেই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তিনি। শনিবার ছিল বাপিবাবুর স্ত্রী মধুমিতাদেবীর জন্মদিন। শাশুড়ির জন্মদিন পালন করতে স্ত্রী, পুত্র এবং বন্ধুকে নিয়ে শনিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ কলকাতা থেকে কোলাঘাটের উদ্দেশে রওনা দেন প্রীতম।

মর্মান্তিক: এ ভাবেই দুমড়ে গিয়েছে গাড়িটি।

পারিবারিক সূত্রে জানানো হয়েছে, এর আগে বেশ কয়েক বার পরিবারের সকলে মিলে বাইরে খেতে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু নানা কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে কিছুতেই সময় করে উঠতে পারছিলেন না বাপিবাবু। শেষ পর্যন্ত মেয়ে-জামাই মধুমিতাকে সঙ্গে করেই কোলাঘাট যান। যাওয়ার আগে স্বামী ও ছোট ছেলের জন্য রাতের খাবারও রান্না করে রেখে যান মধুমিতা। ধাবা থেকে খেয়ে ফেরার পথেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনাটি কী ভাবে ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্থানীয়েরা জানান, দুর্ঘটনার খবর শুনে থেকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন বাপিবাবু। তাঁর এক সঙ্গী সিদ্ধার্থ নায়কের কথায়, ‘‘আমরা সকলে কাউন্সিলরের অফিসে বসেছিলাম। দাদাও সেখানেই বসেছিলেন। দাদা জানতেনও না যে বৌদি মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে যাচ্ছেন। কী ভাবে পুরো ঘটনাটি ঘটল, এখনও বুঝতেই পারছি না। রাত ১২টার সময়েও বৌদির সঙ্গে দাদার কথা হয়েছে।’’ আর এক পারিবারিক বন্ধুর কথায়, ‘‘নাতি বলতে তো অজ্ঞান বাপিদা। কী ভাবে যে দাদাকে সামলাব, বুঝতেই পারছি না।’’

বছর সাত আগে মুরারিপুকুর লেনের বাসিন্দা প্রীতমের সঙ্গে মেয়ে নবনীতার বিয়ে দেন ওই কাউন্সিলর। বাপিবাবুর পরিজনেরা জানাচ্ছেন, প্রীতম তাঁদের বন্ধুর মতোই ছিলেন। সকলের সঙ্গে সমান ভাবে মিশতেন। বাপিবাবুর সঙ্গেও প্রীতমের সম্পর্ক ছিল বাবা-ছেলের মতোই।

ঘটনার খবর পেয়ে ভিড় জমেছে প্রতিবেশী, আত্মীয়দের। রবিবার, বাগবাজারে।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে এ দিন সকাল থেকে দফায়-দফায় শাসক দলের মন্ত্রী ও স্থানীয় নেতারা বাপিবাবুর বাড়িতে যান। ফোনে তাঁর েখাঁজ নেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। পরিজনেরা জানান, বাপিবাবু সকলের কাছে একটাই প্রশ্ন করছেন, ‘‘আমার এত বড় ক্ষতি হল কী করে!’’

—নিজস্ব চিত্র।

Accident Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy