Advertisement
E-Paper

পনেরো মিনিট পিছিয়ে দিল এক মিনিটের ঝড়

বিভ্রান্ত ওই ব্যক্তি হাতের ঘড়িটা খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করলেন। বিভ্রান্তি কাটাতে পকেট থেকে মোবাইল বার করেও সময় দেখলেন।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০২:১৮

চড়া রোদে মুচিবাজারে দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করছিলেন এক ব্যক্তি। ঘন ঘন হাত-ঘড়ি দেখছেন তিনি। চোখেমুখে ব্যস্ততার ছাপ। বারোটা বাজতে ঠিক সাত মিনিট বাকি। তখনই মুচিবাজার মোড়ে নতুন তৈরি ‘গীতাঞ্জলি’ ঘড়ি ঢং ঢং শব্দে জানান দিল, সময় দুপুর বারোটা!

বিভ্রান্ত ওই ব্যক্তি হাতের ঘড়িটা খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করলেন। বিভ্রান্তি কাটাতে পকেট থেকে মোবাইল বার করেও সময় দেখলেন। ‘গীতাঞ্জলি’ ঘড়ির সঙ্গে হাতঘড়ি এবং মোবাইল ফোনের সময় মিলিয়ে দেখতে দেখতে তিনি বললেন, ‘‘বারোটা এক মিনিটে বিধাননগর থেকে ট্রেন ধরব। বাসের জন্য অনেক ক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। তার মধ্যে ওই ঘড়িটা ভুল সময় বলছে। বারোটা বাজার সাত মিনিট আগেই বারোটার ঘণ্টা পড়ে গেল!’’ অবশেষে বাস পেয়ে গন্তব্যে রওনা দেওয়ার আগে তাঁর টিপ্পনি, ‘‘ভাগ্যিস দেরিতে ঘণ্টা পড়ছে না!’’

শুক্রবার মুচিবাজারের এলাকাবাসী জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জোড়া ঝড়ের পর থেকেই ঘড়ির সময় বিগড়ে গিয়েছে। এক মিনিটের ঝড় ঘড়ির কিছুটা সময় কেড়ে নিয়েছে। ঘড়ির ঘণ্টা পড়ছে নির্ধারিত সময়ের আগেই। কখনও তা পনেরো মিনিট আগে, কখনও বা সাত থেকে দশ মিনিট আগে। ঘড়ি মিলিয়ে কাজ করার আর উপায় নেই স্থানীয়দের! মুচিবাজার সংলগ্ন কবিরাজবাগানের বাসিন্দা এক শাড়ির ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘বুধবার আর রবিবার ভোরে ব্যবসার কাজে হাটে যাই। বাড়ির কাছে ঘড়ি বসেছে দু’দিন হল। ওই ঘড়ির আওয়াজ শুনেই রাত তিনটেয় উঠছি। বুধবার দেখলাম ঘড়ি ১৫ মিনিট আগেই উঠিয়ে দিয়েছে।’’ ওই বাসিন্দার সাবধানবার্তা, ‘‘আগে উঠলে ক্ষতি নেই, ঘড়ি শুনে ট্রেন ধরার থাকলে কিন্তু সাবধান।’’

মুচিবাজার অরবিন্দ সেতুর কাছে ‘গীতাঞ্জলি’ ঘড়ি তৈরি করান কলকাতা পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তী। পয়লা বৈশাখের দিন ঘড়িটির উদ্বোধন হয়। ৪০ ফুট লম্বা মিনারের উপরে চার দিকে চারটি ঘড়ি বসানো হয়েছে। প্রতিটির ব্যাস চার ফুট। ঘড়িটির বিশেষত্ব, এর ডায়ালে সংখ্যাগুলি বাংলা অক্ষরে লেখা। মিনারটি তৈরি করা হয়েছে লোহার কাঠামোয় ফাইবার গ্লাস দিয়ে। তাতে রয়েছে টেরাকোটার কাজ। মিনারের মধ্যে বসানো হয়েছে রবীন্দ্রনাথের মূর্তি। প্রতি ঘণ্টায় প্রথমে মিউজিক এবং পরে ঘণ্টা সহযোগে সময় জানান দেওয়ার কথা ওই ঘড়ির। তবে গত কয়েক দিন ধরে তা হচ্ছে না।

ঘড়িটি বানিয়েছেন শহরের ‘ঘড়িবাবু’ স্বপন দত্ত। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ওই ঘড়ির ডায়াল মেকানিক্যাল। তবে তাতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় মিউজিক বাজে বৈদ্যুতিন পদ্ধতিতে। নিশ্চয়ই সংযোগ ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ঝড়ে এরকম হতে পারে।’’

শুক্রবার দুপুরেই অবশ্য লোক আনিয়ে ঘড়ি মেরামতি শুরু করেন কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তী। রাতে অবশ্য ঠিক হয়ে যায় ঘড়িটি। সব শেষে কাউন্সিলর বললেন, ‘‘ঝড়ে কত কিছু ভেঙে গিয়েছে। আমাদের ঘড়িটা পড়ে যায়নি এটাই ব়ড় কথা।’’

Gitanjali Clock Muchibazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy