Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

প্রতাপকে ধরতে হবে, কড়া নির্দেশ পুলিশকে

খাস মুখ্যমন্ত্রীর পা়ড়ায় সরকারি প্রকল্পের ঠিকাদারের কাছ থেকে তোলাবাজি ছাড়াও সরকারি জমি দখল করে কলোনি তৈরির অভিযোগ উঠেছে প্রতাপের বিরুদ্ধে।

শুভাশিস ঘটক
শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০১:৫৪
Share: Save:

আলিপুরের গোপালনগরে দলীয় ব্লক সভাপতিকে মারধরের ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরেও ধরা পড়েননি অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহা।

খাস মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ায় সরকারি প্রকল্পের ঠিকাদারের কাছ থেকে তোলাবাজি ছাড়াও সরকারি জমি দখল করে কলোনি তৈরির অভিযোগ উঠেছে প্রতাপের বিরুদ্ধে। বুধবার রাতভর ওই এলাকায় প্রতাপ-বাহিনীর তাণ্ডবের পরে দলীয় স্তরেও তাঁকে নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। এই হামলার ঘটনার সূত্রেই আলিপুর এলাকায় প্রতাপের বিরুদ্ধে জমি দখলের একের পর এক অভিযোগ সামনে আসছে। শুধু জমিই নয়, আলিপুর জেলের আশপাশে সরকারি জমির দখল করে সেখানে বেআইনি পার্কিং লট তৈরির মূল মাথাও প্রতাপ বলে অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার রাতে এলাকার দখল নিয়ে বিবাদের জেরে ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল ব্লক সভাপতি বিপ্লব মিত্রের উপরে প্রতাপ দলবল নিয়ে হামলা চালান বলে অভিযোগ। তার পর থেকেই তৃণমূলের এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত প্রতাপ গা-ঢাকা দিয়েছেন। ব্লক সভাপতি বিপ্লববাবু মুখ্যমন্ত্রীর খুবই কাছের লোক বলে পরিচিত। তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রেসিডেন্সি জেল সংলগ্ন এলাকায় অডিটোরিয়াম নির্মাণ-সহ একাধিক সরকারি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এলাকায় সিন্ডিকেটের দাপট রুখতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই সব কাজ দেখভালের দায়িত্ব বিপ্লবকে দিয়েছিলেন। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘ওই সব প্রকল্পে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ এবং সেই সঙ্গে সরকারি খাস জমি দখল করা মানে বহু কোটি টাকার কারবার। বিপ্লব দায়িত্ব পাওয়ায় প্রতাপের সেই কারবার ধাক্কা খাচ্ছিল।’’

মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত প্রতাপ নিজের দলবল নিয়ে ওই সব কাজ থেকে তোলাবাজি শুরু করেছিলেন বলে অভিযোগ। বিপ্লব সেই তোলাবাজির প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু কোনও ভাবেই প্রতাপকে রোখা যাচ্ছিল না। তৃণমূলের অন্দরের খবর, বুধবারের ঘটনার কথা শুনে মুখ্যমন্ত্রীও প্রবল ক্ষুব্ধ। ঘটনার পরের দিনই একাধিক নেতা ও মন্ত্রীকে তিনি তা জানিয়েও দিয়েছেন। প্রতাপের বিষয়ে তিনি কড়া অবস্থান নিয়েছেন বলেই দলীয় সূত্রের খবর।

মাস ছয়েক আগে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকে ওই এলাকার বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজ দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি নিজেই সে কথা জানিয়েছিলেন প্রভাবশালী এক মন্ত্রীকে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের বিষয়টি প্রতাপেরও অজানা নয়। তা সত্ত্বেও প্রতাপ এলাকায় নিজের
দাপট বজায় রাখতে সরকারি নির্মাণকাজের ঠিকাদার সংস্থার এক বাস্তুকারকে বেধড়ক মারধর করেছিলেন বলে অভিযোগ।

বুধবারের ঘটনার পরে অবশ্য সব তথ্যই মুখ্যমন্ত্রীর কানে দেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। ওই ঘটনার তদন্ত করছেন লালবাজারের পুলিশকর্তারা। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রশাসনের শীর্ষ মহল থেকে প্রতাপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতেই বলা হয়েছে পুলিশকে।

বছর কয়েক আগে একটি সরকারি জমি দখলের ঘটনা নিয়ে প্রতাপের নেতৃত্বে আলিপুর থানায় হামলা চালানো হয়েছিল। আলিপুরে ভোটের প্রচারে যাওয়া এক বিজেপি নেত্রীর উপরে হামলার ঘটনাতেও এফআইআর হয়েছিল প্রতাপের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনাতেও আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছিলেন প্রতাপ। প্রতাপের ফোন শুক্রবার সারা দিন বন্ধ ছিল। তাই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর অনুগামীরা দাবি করেছেন, ‘পরোপকারী’ ও ‘জনপ্রিয়’ বলেই প্রতাপকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে যে গোপন ডেরা থেকে প্রতাপ যোগাযোগ রাখছেন, সে কথাও জানান অনুগামীরা। লালবাজারের এক কর্তা জানান, খোঁজ চলছে। খুব তাড়াতাড়ি প্রতাপকে ধরা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE