Advertisement
E-Paper

মরচে ধরা পাইপ ভেঙে মৃত্যু রক্ষীর

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আবাসনের বাসিন্দাদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য-বিনিময় চলছে নিরাপত্তাকর্মী ও বিভিন্ন ফ্ল্যাটের পরিচারিকাদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪৮
উমেশ ঠাকুর

উমেশ ঠাকুর

অন্যান্য দিনের মতোই সকালের শিফ্‌টে কাজ শুরু করেছিলেন উমেশ ঠাকুর। পার্কিং লটে নজরদারি চালাতে আবাসনের ছ’নম্বর টাওয়ার থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন তিনি। তার মধ্যেই হঠাৎ মাথায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল জীর্ণ রেন পাইপ। গুরুতর জখম অবস্থায় বছর তিরিশের ওই নিরাপত্তারক্ষীকে এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান ওই আবাসনের অন্য নিরাপত্তারক্ষীরা। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। বৃহস্পতিবার সকাল সওয়া আটটা নাগাদ এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে সার্ভে পার্ক থানা এলাকার এক বহুতল আবাসনে। যার জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আবাসন চত্বর।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আবাসনের বাসিন্দাদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য-বিনিময় চলছে নিরাপত্তাকর্মী ও বিভিন্ন ফ্ল্যাটের পরিচারিকাদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে হাজির হন পুলিশের আধিকারিকেরা। আবাসনের অন্য নিরাপত্তারক্ষী ও পরিচারিকাদের অভিযোগ, উমেশের মাথায় মরচে পড়া পাইপ ভেঙে পড়়তে দেখেছেন অনেকেই। তা সত্ত্বেও আবাসন কমিটি ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে দেখাতে চেয়েছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সতেরো বছরের পুরনো ওই আবাসনে ন’টি টাওয়ার রয়েছে। কয়েকটি একুশতলা, কয়েকটি আঠেরোতলা। কিন্তু অধিকাংশ টাওয়ারেরই ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ হয় না বলে অভিযোগ। এক নিরাপত্তাকর্মী এ দিন জানান, বুধবার বিকেলেও অন্য একটি টাওয়ার থেকে সিমেন্টের চাঙড় ভেঙে পড়েছিল। সেই সময়ে কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হলেও তাঁরা বিশেষ তৎপর হননি বলে অভিযোগ। ওই নিরাপত্তাকর্মীর দাবি, এর আগেও মরচে পড়া লোহার পাইপ ভেঙে পড়েছিল। আবাসন কর্তৃপক্ষ মেরামতির কাজ শুরু করার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি পাল্টায়নি।

আবাসনের এই উচ্চতা থেকেই ভেঙে পড়ে মরচে ধরা পাইপের অংশ। বৃহস্পতিবার, সার্ভে পার্ক এলাকার একটি আবাসনে।

উমেশের সঙ্গে এ দিন ডিউটি করছিলেন রূপকুমার নারদা। তিনি জানান, একুশতলা ওই বহুতলের বারোতলা থেকে পাইপের টুকরোটি ভেঙে পড়ে উমেশের মাথায়। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন তিনি। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও উমেশকে বাঁচানো যায়নি। কিন্তু উমেশ মারা গিয়েছেন শোনার পরেই রব ওঠে, তিনি নাকি আত্মহত্যা করেছেন। রূপকুমারও আঙুল তুলেছেন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের দিকে।

ছেলে গুরুতর অসুস্থ— এমনই খবর পেয়ে সকাল দশটা নাগাদ কালিকাপুরের বাড়ি থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছন উমেশের বাবা বৈদ্যনাথ ঠাকুর। সঙ্গে ছিলেন উমেশের দাদা রমেশ ঠাকুরও। মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে বৈদ্যনাথবাবু বলেন, ‘‘কী ভাবে যে বৌমা আর আট মাসের বাচ্চাটার সামনে গিয়ে দাঁড়াব, বুঝতে পারছি না!’’ বছর দুয়েক আগে উমেশের বিয়ে হয়। আট মাসের ছেলে রয়েছে তাঁর। স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ায় আপাতত বাপের বা়ড়িতে রয়েছেন।

আবাসনের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সে প্রসঙ্গে আবাসিকদের অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান গৌতম তালুকদার বলেন, ‘‘এই আবাসনের বিশাল আয়তন। তাই রক্ষণাবেক্ষণের কাজটাও সহজ নয়। কিন্তু আমরা নিয়মিত ভাবেই রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে বৈঠক করি। পরিকল্পনাও হয়। মেরামতির কাজও শুরু হয়েছে।’’ উমেশের মৃত্যু প্রসঙ্গে অবশ্য গৌতমবাবু বলেন, ‘‘এটা নিছকই দুর্ঘটনা। ওই বিল্ডিংয়ের নীচে আমিও থাকতে পারতাম। কখন লোহার পাইপ ভেঙে পড়বে, সেটা কী ভাবে বুঝব!’’

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন উমেশের বাবা বৈদ্যনাথ ঠাকুর।

কিন্তু প্রশ্ন হল, মেরামতির কাজ নিয়মিত হলে এমন মরচে ধরা পাইপ রয়ে গেল কী ভাবে? গৌতমবাবু অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। উমেশের মৃত্যুর পরে ওই আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীরা এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁদের প্রশ্ন, এমন বিপদ যে ভবিষ্যতেও ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে? গৌতমবাবু বলেন, ‘‘মেরামতির কাজ চলছে। কিন্তু দুর্ঘটনা নিয়ে কী-ই বা বলতে পারি!’’

পুলিশ জানিয়েছে, উমেশের দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পাইপ ভেঙে পড়ার দৃশ্য যাঁরা দেখেছেন বলে দাবি করেছেন, তাঁদের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে।

ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

Water Pipe Death Security Security Guard
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy