Advertisement
১৫ জানুয়ারি ২০২৫

সর্বশক্তি দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখে ওরাও

ওরা মানুষের মতোই, বলছেন আলিপুর চিড়িয়াখানার কর্মীরা। তাই সন্তানের সামান্য শরীর খারাপে যেমন অস্থির হয়ে ওঠে মা জেব্রা, তেমনই সদ্যোজাত ছানাকে দেখতে এলে কর্মীদের তাড়া করে মা ম্যাকাও।

মায়েছায়ে: শাবকের সঙ্গে জিরাফ, জেব্রা। আলিপুর চিড়িয়াখানায়। নিজস্ব চিত্র

মায়েছায়ে: শাবকের সঙ্গে জিরাফ, জেব্রা। আলিপুর চিড়িয়াখানায়। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৮ ০১:৪৭
Share: Save:

ছটফটে অল্পবয়সি মা হলে যা হয়! সব সময়ে চোখে-চোখে রাখতে হয়। না হলেই যে কোনও সময় বিপদের সম্ভাবনা। সন্তান প্রসবের পরেও মাথাব্যথা সকলের। কারণ, আগে মা হওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। ‘মাতৃত্বের প্রবৃত্তি’ তৈরি হয়নি যে। তাই সন্তান দুধ খেতে চাইলেও অনেক সময় দিতে নারাজ মা। অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাজি করানো গেলেও তার পরে আর এক বিপদ! হঠাৎই সন্তানের শরীর খারাপ। ব্যস! চিকিৎসকেরা এক দিকে ঘিরে ধরে সন্তানের শুশ্রুষা করছেন, আর সে দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে মা। যতক্ষণ না সন্তান সুস্থ হয়ে উঠল, ততক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে মা জেব্রা।

ওরা মানুষের মতোই, বলছেন আলিপুর চিড়িয়াখানার কর্মীরা। তাই সন্তানের সামান্য শরীর খারাপে যেমন অস্থির হয়ে ওঠে মা জেব্রা, তেমনই সদ্যোজাত ছানাকে দেখতে এলে কর্মীদের তাড়া করে মা ম্যাকাও। এমনকি, রোজ যে কর্মী খাবার দেন, তাঁকেও সংশয়ের চোখে দেখে তখন। ১৪ এপ্রিল একটি জেব্রার শাবক জন্মায়। জেব্রাটির ‘কিপার’ রাজেশকুমার ভুঁইয়া বলেন, ‘‘বাচ্চার কাছে গেলেই মা ছানাকে লুকিয়ে রাখে। আমরা সারাক্ষণ দেখলেও অনেক সময়ে কাছে যেতে দেয় না!’’

‘‘আসলে মা যে। মানুষ যেমন সব শক্তিটুকু দিয়ে সন্তানকে রক্ষা করে, তেমন ওরাও করে। ওরা হয়তো মুখে বলতে পারে না, কিন্তু হাবভাবে বুঝিয়ে দেয়, সন্তানকে কতটা আগলে রাখে’’— বললেন চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত।

চিড়িয়াখানার কর্মীরা জানালেন, অনেক মা তো আবার বাচ্চা হয়েছে, এই ‘সুখবর’ পর্যন্ত প্রকাশ্যে আনতে নারাজ। যেমন, মাউস ডিয়ার। বিপন্ন প্রজাতির এই প্রাণীর বাচ্চা হয়েছিল কিছু দিন আগে। অধিকর্তার কথায়, ‘‘খড়ের গাদায় বাচ্চাদের লুকিয়ে রেখেছিল। প্রথমে টেরই পাওয়া যায়নি। পরে কর্মীরা দেখতে পান।’’ মেছো বিড়াল রাজ্যপ্রাণীর তকমা পাওয়ার পরেই তাদের বংশবিস্তারে উদ্যোগী হন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। আপাতত ছানাপোনা নিয়ে সুখে সংসার মেছো বেড়ালের। মা বিড়াল রীতিমতো আগলে রাখছে বাচ্চাদের।

চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, সন্তানসম্ভবা হলেই প্রাণীদের আলাদা করে রাখা হয়। প্রসবের সময় যত এগিয়ে আসে, ২৪ ঘণ্টার নজরদারি চলে। এক কর্মীর কথায়, ‘‘সন্তান এলে ওদের হাবভাবে পরিবর্তন আসে। তবে প্রথম বার মা হলে অনেক সময় সমস্যা তৈরি হয়। বাচ্চা দুধ খেতে চাইলে অনেক সময়েই মা তা দিতে রাজি হয় না। কারণ, বাচ্চা দুধ টানার ফলে বাঁটে যে সুড়সুড়ি হয়, তাতে অনেকেই অভ্যস্ত থাকে না।’’ সে কারণে অতীতে জেব্রার একটি বাচ্চাকে বাঁচানোও যায়নি। সন্তান শোকে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছিল জেব্রাটি। নানা উপায়ে তাকে পরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো হয়।

মেছো বিড়াল এবং লুটিনো প্যারাকিট।

সন্তান শোক রয়েছে পাইথনেরও। সন্তান শোকে পাইথন আবার ভীষণ ‘অ্যাগ্রেসিভ’ বলে চিড়িয়াখানার অধিকর্তা জানাচ্ছেন। আশিসবাবুর কথায়, ‘‘দু’বছর আগে পাইথন ডিম পেড়েছিল। আমরা যখন ডিম আনতে যাই, ও প্রায় তেড়ে এসেছিল। পরে মুখে কাপড় বেঁধে আমরা ডিম নিয়েছিলাম। কিন্তু যখন পাইথনটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন পাগলের মতো ও ডিমগুলো খুঁজছিল। বাচ্চাদের হারালে মানুষ যেমন করে আর কী!’’

তবে ‘খারাপ’ মায়েরাও আছে। যারা নিজেদেরই দুর্বল বাচ্চাদের খেয়ে ফেলে। হায়না, লেপার্ড, বাঘেদের ক্ষেত্রে তেমনটা হয়ে থাকলেও আলিপুরে সাম্প্রতিক সময়ে হয়নি বলেই জানান অধিকর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘হায়না, লেপার্ড জাতীয় প্রাণী যখন দেখে যে দুর্বল বাচ্চা হয়েছে, তখন তাদের খেয়ে ফেলে। কিন্তু এখনও আমার সে অভিজ্ঞতা হয়নি।’’

বরং অনেক মা বাচ্চাদের নিয়ে এতটাই স্পর্শকাতর যে, ছবি তুলতে দিতেও ঘোরতর আপত্তি তাদের। যেমন লুটিনো প্যারাকিট পাখি। ডিম দিলেই বারবার ভেঙে যাচ্ছে। তাই ডিম পাড়ার জন্য বিশেষ খাঁচা তৈরি করে দিয়েছিলেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। সেখানে ছানাপোনাদের নিয়ে দিব্যি রয়েছে মা লুটিনো প্যারাকিট। কিন্তু কেউ ছবি তুলতে গেলেই ভীষণ চেঁচামেচি-চিৎকার তার।

আজ, রবিবার মাদার্স ডে। চিড়িয়াখানায় অবশ্য মাদার্স ডে নেই, শুধু আবহমান স্নেহপ্রবণ মাতৃত্বটুকু রয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Motherhood Mothers Day Alipore Zoo Animals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy