Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সিন্ডিকেটের নারদ-নারদে তপ্ত আলিপুর

পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া হামলা, পাল্টা হামলার ঘটনায় আহত অন্তত দশ জন। এই ঘটনায় ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ভাঙা হয়েছে পার্টি অফিস। গোপালনগরে। নিজস্ব চিত্র

ভাঙা হয়েছে পার্টি অফিস। গোপালনগরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৮ ০১:১৭
Share: Save:

সিন্ডিকেট নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াই এ বার মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ায়!

আলিপুরের গোপালনগর রোডে এলাকার দুই তৃণমূল নেতার অনুগামীদের মধ্যে বুধবার রাতভর চলল গুলি-বোমার যুদ্ধ। রাস্তার ধারে সার দিয়ে রাখা মোটরবাইক ভেঙেই ক্ষান্ত হয়নি যুযুধান দুই পক্ষ। সেগুলিতে ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন। রাস্তায় রাখা গাড়ি বা ট্যাক্সিও ছাড় পায়নি। দুই পক্ষের ল়ড়াইয়ের জেরে ভাঙচুর করা হয় তৃণমূল নেতা বিপ্লব মিত্রের অফিস। তারই পাল্টা হিসেবে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা প্রতাপ সাহার বাড়িতে হামলা হয়। প্রতাপ ও তাঁর দলবলকে গ্রেফতারের দাবিতে বিপ্লব গোষ্ঠী বিক্ষোভ দেখায় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বাড়ির সামনে।

পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া হামলা, পাল্টা হামলার ঘটনায় আহত অন্তত দশ জন। এই ঘটনায় ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোটা এলাকা ঘিরে রেখে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। দুই গোষ্ঠীই পরস্পরের বিরুদ্ধে বহিরাগত দুষ্কৃতী এনে হামলার অভিযোগ করেছে। বৃহস্পতিবার এলাকা ছিল থমথমে। আরও বড় সংঘর্ষের আশঙ্কায় রয়েছেন এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হলে ধৃতদের ৪ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত হয়।

৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিপ্লব মিত্র হামলার জন্য তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহাকে দায়ী করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘বুধবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ প্রতাপ দলবল নিয়ে হামলা চালায়। বন্দুকের বাঁট দিয়ে আমার মাথায় ও কপালে আঘাত করা হয়। ওরা আমার সমর্থকদের লাঠি-রড দিয়ে বেধড়ক মারে।’’ তাঁর দুই ছেলেও হামলায় আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করে বিপ্লব বলেন, ‘‘ওরা আমাদের পার্টি অফিসও ভেঙে দিয়েছে।’’ আলিপুর থানায় হামলার ঘটনায় জড়িত প্রতাপ অন্য একটি মামলায় জামিনে মুক্ত রয়েছেন। তিনি কী ভাবে পুলিশের নাকের ডগায় বন্দুক নিয়ে হামলা চালালেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিপ্লবের সমর্থকেরা।

পুলিশের অভিযোগ, হামলার সময়ে প্রতাপ নিজে বন্দুক থেকে শূন্যে এক রাউন্ড গুলি চালান। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি গুলির খোল পেয়েছে। এর পরে বিপ্লব গোষ্ঠী সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে প্রতাপের দলবলের উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। লাঠি, রড, বোমা— কিছুই বাদ যায়নি। দুই যুযুধান গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করতে ভোর হয়ে যায় বলে পুলিশ সূত্রে খবর। রাতে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বাড়ি ঘেরাও করে প্রতাপের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় বিপ্লব গোষ্ঠী। প্রতাপ মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।

ঘটনার পর থেকেই প্রতাপ এলাকাছাড়া। তাঁর গোষ্ঠীর দাবি, প্রতাপ জনপ্রিয় ও জনদরদি বলেই তাঁকে এলাকাছাড়া করার পরিকল্পনা করছিল অন্য গোষ্ঠী। তার জেরেই এই গোলমাল। প্রতাপের ফোন সকাল থেকেই বন্ধ ছিল। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, সবাই মিলে প্রতাপকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাইছে।

দুই গোষ্ঠীর এই রেষারেষি কেন? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, আলিপুরে নানা সরকারি নির্মাণকাজ চলছে। ওই সব প্রকল্পের বরাত পেতেই দুই তৃণমূল নেতার দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে।

বুধবার দুপুরে উন্নয়ন ভবনে বিপ্লবের অনুগামীরা ফিরহাদের কাছে প্রতাপের বিরুদ্ধে নির্মাণকাজে বাধা দেওয়া ও তোলাবাজির অভিযোগ করেন। এর পরেই রাতে গোপালনগর রোডে বিপ্লবের অফিসে প্রতাপ দলবল নিয়ে হামলা চালান বলে অভিযোগ। রাতে তার পাল্টা হিসেবে প্রতাপের বাড়িতেও হামলা হয়।

স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘ওই সব সরকারি প্রকল্প এখন মধুভাণ্ডার। সেই মধুর দখল নিতেই দুই গোষ্ঠী বোমা-পিস্তল হাতে নেমে পড়েছে।’’ গোপালনগরের ঘটনায় অস্বস্তিতে তৃণমূল। বিপ্লব মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। প্রতাপও পুরমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ। মন্ত্রী বলেন, ‘‘পুলিশকে বলা হয়েছে, দোষীদের গ্রেফতার করতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Alipore group clash syndicate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE