Advertisement
E-Paper

হেলমেট না পরার এত বড় মাসুল দিতে হবে ভাবিনি

ঋত্বিক জানিয়েছে, সুকুর আলি মোড়ে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া শেষে সাইকেল নিয়ে পাড়ায় ঘুরছিল সে। সেই সময় ফোন করে মালঞ্চের কুলিন অ্যাভিনিউয়ে তার বাড়িতে আসার জন্য ঋত্বিককে বলে শিবনাথ।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৩৯
অনুতপ্ত: হাসপাতালে ঋত্বিক। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

অনুতপ্ত: হাসপাতালে ঋত্বিক। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

আফশোস যাচ্ছে না বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের দুর্ঘটনায় জোধপুর পার্কের নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ১৭ বছরের কিশোরের।

শনিবার রাতে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বাড়ি ফেরার সময় দশ চাকার লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় দমদমের বাসিন্দা অভিষেক আচার্য (১৮) এবং শিবনাথ টুডুর (১৭)। ঘটনার বাহাত্তর ঘণ্টা পরেও আতঙ্ক কাটেনি ঘটনাচক্রে বেঁচে যাওয়া ঋত্বিক সিংহের। তিন বন্ধুর কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। স্থানীয় সূত্রের খবর, বাইকচালক অভিষেকের ড্রাইভিং লাইসেন্সও ছিল না। চোখের সামনে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা দুই বন্ধুর পরিণতি দেখার পরে মঙ্গলবার নার্সিংহোমের বিছানায় শুয়ে ঋত্বিক বলে, ‘‘বাইকে আর কোনও দিন চাপতে পারব কি না জানি না। যে ভুল আমরা করেছি, তা যেন আর কেউ না করে। হেলমেট না পরার এত বড় মাসুল দিতে হবে, দু’বন্ধুকে হারিয়ে ফেলতে হবে, কখনও ভাবিনি।’’

ঋত্বিক জানিয়েছে, সুকুর আলি মোড়ে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া শেষে সাইকেল নিয়ে পাড়ায় ঘুরছিল সে। সেই সময় ফোন করে মালঞ্চের কুলিন অ্যাভিনিউয়ে তার বাড়িতে আসার জন্য ঋত্বিককে বলে শিবনাথ। সেখানে আগে থেকেই হাজির ছিল মানিকপুর খালপাড়ের বাসিন্দা অভিষেক। এর পর তিন বন্ধু মিলে ঘুরতে বেরোয় মোটরবাইকে। ঋত্বিকের কথায়, ‘‘প্রথমে নীচের রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলাম। তখন শিবনাথ বাইক চালাচ্ছিল। এক জায়গায় খাওয়ার পরে ফিরছিলাম আমরা। সে সময়ে অভিষেক বাইক চালাচ্ছিল। একে বৃষ্টি, তার উপরে নীচের রাস্তা অন্ধকার। দেরি হয়ে যাচ্ছিল বলে এক্সপ্রেসওয়ে ধরলাম। সেটাই কাল হল।’’

অভিষেকের সঙ্গে গত বছর মাধ্যমিকের পরে আলাপ। শিবনাথের সঙ্গে একেবারে নিচু ক্লাস থেকে বন্ধুত্ব। ঋত্বিক জানিয়েছে, তাদের বাইকের সামনে একটি চার চাকার ছোট গাড়ি ছিল। পিছনে বড় লরি। অভিষেক বাইক চালাচ্ছিল, মাঝে শিবনাথ। বাইকের একেবারে পিছনে বসেছিল ঋত্বিক। মুখ ঘুরিয়ে ঋত্বিককে কিছু বলতে যায় অভিষেক। ‘‘কথা শেষ করে সামনের দিকে তাকিয়েই দেখে আচমকা ব্রেক কষেছেন সামনের গাড়ির চালক। সজোরে বাইকের ব্রেক কষলেও নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি অভিষেক। তিন জনেই রাস্তার উপরে ছিটকে পড়ি।’’— বলল ঋত্বিক। এর পরবর্তী দৃশ্য এখনও বিভীষিকার মতো তাড়া করছে ঋত্বিককে।

এ দিন সে বলে, ‘‘রাস্তার উপরে পড়ার পরে কয়েক মিনিটের জন্য জ্ঞান ছিল না। জ্ঞান ফিরলে দেখলাম আমি লরির মাঝ বরাবর পড়ে রয়েছি। চাকা চলছে। লরির চাকা অভিষেক এবং শিবনাথকে ঘষটে নিয়ে যাচ্ছে। ওই অবস্থায় শিবনাথকে চাকার তলা থেকে বার করার চেষ্টা করি। অভিষেক যে নেই তখনই বুঝে গিয়েছিলাম। ট্যাক্সিতে তোলার পরও শিবনাথ বেঁচে ছিল। আমার চোখের সামনে...।’’

বাক্য শেষ করতে পারল না বছর সতেরোর কিশোর। ঋত্বিকের বাবা তপন সিংহ বলেন, ‘‘ছেলে সুস্থ হয়ে উঠলে কাউন্সেলিং করাব। এ ভাবে বন্ধুদের মৃত্যু দেখেছে তো। কতটুকু আর বয়স।’’ ঋত্বিকের ডান পায়ের একাধিক জায়গা ভেঙে গিয়েছে। আজ, বুধবার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরে অভিষেক ও শিবনাথের বাড়ি যাবে বলে ঠিক করেছে সে। ‘‘ওদের বাড়ি যেতেই হবে। হয়তো অভিমান করবেন, হয়তো আমায় দেখে ওঁদের দুঃখ বহু গুণ বেড়ে যাবে। কিন্তু তবুও যাব।’’ এ কথা বলেই একরাশ আফশোস নিয়ে তার স্বগতোক্তি, ‘‘কেন যে এত ঝুঁকি নিয়ে হেলমেট ছাড়া বড় রাস্তায় উঠলাম।’’

Rittwik Singh friends Bike Accident Death Helmet
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy