Advertisement
E-Paper

বিদ্যাসাগরের স্কুলে ভাষা হবে ইংরেজি-হিন্দি!

বাংলা ভাষায় পড়ুয়ার অভাবেই স্কুলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা দায় হয়েছে কর্তৃপক্ষের। তাই পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সৃষ্টি ওই স্কুলকে বাঁচিয়ে রাখতেই সেটি অবাঙালি ভাষায় পরিবর্তিত করার যুক্তি দেখাতে চান তাঁরা।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৫:৪২
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের তৈরি করা এই স্কুলই বাংলা মাধ্যম পড়ুয়ার অভাবে প্রায় অবলুপ্তির পথে। পি কে টেগোর স্ট্রিটে। —নিজস্ব চিত্র

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের তৈরি করা এই স্কুলই বাংলা মাধ্যম পড়ুয়ার অভাবে প্রায় অবলুপ্তির পথে। পি কে টেগোর স্ট্রিটে। —নিজস্ব চিত্র

বাংলা ভাষার পড়ুয়া নেই, তাই অবলুপ্তির পথে বর্ণ পরিচয়ের স্রষ্টা বিদ্যাসাগরের তৈরি স্কুল। তাই স্কুল বাঁচাতে সেখানে হিন্দি ও ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠন শুরু করাতে চায় বর্তমান পরিচালন সমিতি।

বস্তুত, বাংলা ভাষায় পড়ুয়ার অভাবেই স্কুলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা দায় হয়েছে কর্তৃপক্ষের। তাই পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সৃষ্টি ওই স্কুলকে বাঁচিয়ে রাখতেই সেটি অবাঙালি ভাষায় পরিবর্তিত করার যুক্তি দেখাতে চান তাঁরা।

১৩১ বছর আগে, ১৮৮৭ সালে উত্তর কলকাতার বড়বাজারে, কলাকার স্ট্রিটে বাংলা ভাষায় শিক্ষালাভের এক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল ওই স্কুল। মূল উদ্যোক্তা ছিলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ১৮৯১ সালে তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ওই স্কুলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ছিলেন তিনি। ১৯২৩ সালে প্রসন্নকুমার ঠাকুর স্ট্রিটে স্থানান্তরিত হয় স্কুলটি। দোতলা ওই বাড়িটি ঠাকুর পরিবারের থেকে ভাড়া নেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। বর্তমান পরিচালন সমিতির এক সদস্য জানান, ১৯৫৪ সালে ওই বাড়িটি ঠাকুর পরিবারের কাছে থেকে কিনে নেওয়া হয়। স্কুল কতৃর্পক্ষের কথায়, স্কুল তৈরির আগে মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর শর্মিষ্ঠা নাটকটি লিখেছেন এই বাড়িতে বসেই।

এখন ১০ নম্বর পি কে টেগোর স্ট্রিটের উপর দোতলা বিশাল বাড়িটির প্রবেশ পথেই লেখা মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন, ব শা অর্থাৎ বড়বাজার শাখা। উত্তর ও মধ্য কলকাতায় বিদ্যাসাগর কলেজ, মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন মেন, বউবাজার শাখা এবং বড়বাজার শাখা— সবই গড়ে ওঠে বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে। বিদ্যাসাগর ইনস্টিটিউশন নামে এক ট্রাস্টের অধীনেই রয়েছে ওই সব প্রতিষ্ঠান। বাকিগুলো হেরিটেজ হিসেবে চিহ্নিত হলেও এখনও বড়বাজারের ওই বিদ্যালয়ের হেরিটেজ স্বীকৃতি মেলেনি বলে জানান পরিচালন সমিতির এক কর্তা। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘সকাল-দুপুর ছেলে এবং মেয়েদের জন্য আলাদা করে স্কুল চলত রমরমিয়ে।’’

আজ সে সব অতীত। সেই বিল্ডিং এখন প্রায় পোড়ো বাড়িতে পরিণত হয়েছে। মূল স্কুল বিল্ডিংয়ের পিছন দিকে দালানের কাঠামোয় গজিয়ে উঠেছে বড় বড় গাছ। চুন-সুরকির পলেস্তারা, চাঁই খসে পড়ছে আশপাশের এলাকায়। সম্প্রতি স্কুলের ভিতরে নজরে পড়ল শতাব্দীপ্রাচীন ওই ভবনের আকর্ষণীয় কাঠামো। ঢুকতেই বড় লোহার গেট। ভিতরে লম্বা ঠাকুরদালান। চার পাশে একতলা, দোতলায় বড় বড় ক্লাস ঘর। চাতালের শেষ প্রান্তে ছোট ছোট স্তম্ভে নানা মূর্তির কারুকার্য করা মঞ্চ। সবই আছে, তবে দৈন্য দশা। উপরে ওঠার মুখে সিঁড়ির পাশে প্রতিষ্ঠাতার আবক্ষ প্রস্তর মূর্তি। একতলা ও দোতলায় স্কুলের ঘরগুলোর ভিতরেও পলেস্তারা খসে পড়ছে। বাসা বেঁধেছে পায়রার দল।

ওই বাড়িতে সিঁড়ির পাশে থাকেন স্কুলেরই এক প্রাক্তন কর্মীর পরিবার। বললেন, ‘‘দুপুরের স্কুল আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সকালে মেয়েদের স্কুল চললেও উপস্থিত পড়ুয়ার সংখ্যা খুবই কম। মেরেকেটে ৮-১০ জন।’’ সম্প্রতি ওই স্কুলের পিছন দিকে একটা চাঁই খসে পড়ায় এলাকায় আতঙ্ক বাড়ে। স্থানীয় কাউন্সিলর পুরসভার বিল্ডিং দফতরে খবর দিতেই বিপজ্জনক অংশ ভেঙে দেওয়া হয়।

এর পরেই বিদ্যাসাগরের হাতে গড়ে ওঠা এই স্কুল বাঁচাতে এককাট্টা কাউন্সিলর থেকে এলাকার সব মানুষেরা। যে হেতু স্কুলটি সরকার পোষিত, তাই মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে বিষয়টি আনতে চান বাসিন্দারা। স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক প্রমথনাথ পালিত বলেন, ‘‘স্বয়ং বিদ্যাসাগর ওই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। বাংলা ভাষায় শিক্ষাদান তাঁর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু এখন আর বাংলা ভাষায় পড়ুয়া মিলছে না। কিন্তু স্কুলটি বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। তাই হিন্দি, ইংরেজি ভাষায় স্কুল করতে চায়। সরকারের সহায়তা পেলে তা সম্ভব।’’ আর বিল্ডিংয়ের হাল ফেরানোর প্রশ্ন তুলতেই জানালেন, সাংসদ তহবিল থেকে ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল নতুন বিল্ডিং স্থাপনের জন্য। কিন্তু এখন প্রয়োজন সংস্কারের। তাই ওই টাকা খরচ করা যায়নি। ফেরত চলে গিয়েছে। কাউন্সিলর ইলোরা সাহা বলেন, ‘‘এলাকাবাসীও চান বিদ্যাসাগরের হাতে তৈরি ওই স্কুল ফের স্বমহিমায় ফিরে আসুক। সেই উদ্দেশ্যে পরিচালন সমিতির সঙ্গে কথাও বলা হচ্ছে।’’

Ishwar Chandra Vidyasagar Vidyasagar School Syllabus Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy