Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Crime

তদন্তের কিনারায় গোয়েন্দারা, নেতাজিনগরের দম্পতি খুনে আততায়ী বৃদ্ধেরই ‘বিশ্বস্ত’ ব্যক্তি!

গোয়েন্দাদের ধারণা, ওই খুনের ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় ২০-২৫ জনকে জেরা করা হয়েছে। হাতে এসেছে ওই  এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজও। সে সব সূত্র ধরেই গোয়েন্দারা তদন্তের প্রায় কিনারায় এসে পৌঁছেছেন বলে জানা গিয়েছে।

দিলীপ এবং স্বপ্না মুখোপাধ্যায়।

দিলীপ এবং স্বপ্না মুখোপাধ্যায়।

সোমনাথ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৯ ২১:০২
Share: Save:

নেতাজিনগরের বৃদ্ধ দম্পতি দিলীপ এবং স্বপ্না মুখোপাধ্যায় খুনের ঘটনায় জড়িত রয়েছে তাঁদের পরিচিতরা। এমনটাই জানা গিয়েছে তদন্তকারীদের সূত্রে। গোয়েন্দাদের অনুমান, গৃহকর্তা দিলীপবাবুর সঙ্গে আততায়ীদের আগে থেকেই পরিচয় ছিল। তাঁদের ঘরের কোথায় কী রয়েছে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে, ঘরের কোন আলমারিতে টাকাপয়সা-গয়নাগাঁটি রাখা হত— সবই আততায়ীরা জানত।

গোয়েন্দাদের ধারণা, ওই খুনের ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় ২০-২৫ জনকে জেরা করা হয়েছে। হাতে এসেছে ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজও। সে সব সূত্র ধরেই গোয়েন্দারা তদন্তের প্রায় কিনারায় এসে পৌঁছেছেন বলে জানা গিয়েছে।

আততায়ীরা যখন ওই বাড়িতে এসেছিল, সে সময় বৃষ্টি পড়ছিল। এমনিতে রাত ১১টার পর ওই বাড়ির আলো বন্ধ হয়ে যায় বলে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানতে পারে পুলিশ। কিন্তু, ওই দিন অনেক রাত পর্যন্ত আলো জ্বলছিল। খুনের ঘটনাটি ঘটেছে রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে। দিলীপবাবুর স্ত্রী স্বপ্নাদেবী তাঁদের এক পরিচিতকে দেখেই দরজা খুলে ভিতরে আসতে দেন। তদন্তে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, বয়স্ক নাগরিকদের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন ডিসিরা

ওই বাড়ির নীচেই এক ব্যক্তির রঙের দোকান রয়েছে। মুখোপাধ্যায় পরিবারের সঙ্গে তাঁর বিশেষ ঘনিষ্ঠতাও ছিল। অনেক সময় দিলীপবাবুর ঘরে ওই ব্যক্তি সময় কাটাতেন। এমনকি দিলীপবাবুর কাছে টাকাও গচ্ছিত রাখতেন তিনি। বছরখানেক আগে নীচের ওই দোকান ভাড়া নিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কী ভাবে মুখোপাধ্যায় পরিবারের বিশ্বাস অর্জন করে ফেলেছিলেন, সেটাও ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। তাঁর মদতেই কি এই খুনের ছক সাজানো হয়েছিল? এ বিষয়ে পুলিশ মুখে কুলুপ এঁটেছে।

ওই বাড়ির নীচে একটি ইস্ত্রির দোকানও রয়েছে। সেই দোকানদার নিয়মিত ভাড়া দিতেন দিলীপবাবুদের। এক বার মুখোপাধ্যায় পরিবারের সঙ্গে তিনি পুরীও ঘুরতে গিয়েছিলেন। পুলিশের সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন ওই ব্যক্তিও।

ওই বাড়ির একাংশে থাকেন এক মহিলা। তিনি দিলীপবাবুর বাড়িতে আগে আয়ার কাজ করতেন। তাঁকে থাকার বন্দোবস্ত করে দেন দিলীপবাবুই। গত কয়েক বছর ধরে ওই মহিলা তাঁদের দেখাশোনা করার পাশাপাশি এক জায়গায় আয়ার কাজও করেন। তাঁকেও জেরা করা হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই তদন্তে রয়েছে আরও এক চরিত্র। তিনি দিলীপবাবুর দীর্ঘ দিনের পরিচিত এক ঠিকাদার। এক সময় দিলীপবাবু রং কারখানায় কাজ করতেন। তাঁর একটি রঙের কোম্পানিও ছিল। সেই সূত্রে ওই ঠিকাদারের সঙ্গে পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা। দিলীপবাবুর সঙ্গে অনেক রকমের মিস্ত্রিদের যোগাযোগ ছিল। নজরে রয়েছেন তাঁরাও।

এখনও পর্যন্ত পুলিশ জানতে পেরেছে, কয়েক দিন আগে ওই বাড়িতে প্লাস্টার এবং রঙের কাজ হয়েছে। সেই সময়ে বেশ কিছু মিস্ত্রির আনাগোনা ছিল ওই বাড়িতে। এ ছাড়া কয়েক জন প্রোমোটার দিলীপবাবুকে বিভিন্ন ভাবে চাপও দিচ্ছিল। প্রোমোটারদের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিলেন ওই রঙের দোকানদার। বাড়ির মালিকানা নিয়েও ভাইদের সঙ্গে তাঁর ভাল সম্পর্ক ছিল না বলেই, আত্মীয়দের দাবি।

সব দিক খতিয়ে দেখে, সমস্ত সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে শেষমেশ তদন্তের জাল প্রায় গুটিয়ে এনেছে কলকাতা পুলিশ। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘তদন্তের বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না। তবে, এই খুনের ঘটনায় ওই পরিবারের খুবই ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্ত কেউ জড়িয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE