E-Paper

বন্দিদের খাওয়ার খরচে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে কলকাতা পুলিশ

পুলিশ সূত্রের খবর, বেশ কয়েক বছর ধরেই বন্দিপিছু খাবারের দৈনিক খরচ বরাদ্দ ছিল ৪৭ টাকা। কলকাতা পুলিশ এলাকার এক-একটি ডিভিশনে দরপত্র ডেকে এক-একটি সংস্থাকে খাবার তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৩৬
An image of jail

—প্রতীকী চিত্র।

বন্দিপিছু খাওয়ার খরচের জন্য দৈনিক বরাদ্দ বাড়াতে চলেছে কলকাতা পুলিশ। এত দিন কলকাতা পুলিশের হেফাজতে থাকা বন্দিদের জন্য দৈনিক বরাদ্দ ছিল ৪৫ টাকা। এ বার তা বেড়ে ৭৩ টাকা ৫০ পয়সা হতে চলেছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। এতে বন্দিদের জন্য বরাদ্দ খাবারের গুণমান বাড়বে বলেই পুলিশকর্তাদের ধারণা। তবে, এর পাশাপাশি লালবাজারের জন্য একটি আলাদা সংস্থাকে দরপত্র ডেকে খাবার তৈরির বরাত দিলেও থানার জন্য স্থানীয় হোটেল থেকে ওসিদের মাধ্যমে খাবার আনিয়ে দেওয়ার ভাবনাচিন্তা করছে পুলিশ। যদিও এ নিয়ে বাহিনীর একাংশের মধ্যেই একাধিক প্রশ্ন উঠছে।

প্রশ্ন উঠছে, দরপত্র ডেকে কোনও সংস্থাকে দায়িত্ব না দিলে পুরোটাই তো সংশ্লিষ্ট থানার কর্তাদের সদিচ্ছার উপরে নির্ভর করবে। সে ক্ষেত্রে ভাল খাওয়ার সুবিধা বন্দিরা আদৌ পাবেন তো? অনেকের আবার প্রশ্ন, এতে বন্দিদের নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে না তো? তাঁরা বলছেন, ‘‘টেন্ডার করার বদলে যে কোনও জায়গা থেকে খাবার আনাতে গিয়ে যদি খাবারে কিছু মিশিয়ে বন্দিদের প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটে, তখন কাকে ধরা হবে?’’ লালবাজারের কর্তারা অবশ্য বিশ্বাসের উপরেই ছাড়ছেন বিষয়টা। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-নগরপাল (অর্গানাইজ়েশন) ওয়াকার রাজা এ বিষয়ে বলেন, ‘‘খাবারে কিছু মিশিয়ে কাউকে মেরে ফেলার হলে সেটা তো টেন্ডার পাওয়া সংস্থার কর্মীরাও করতে পারেন! এই ভাবে অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না। তা ছাড়া, পুরো বিষয়টাই সদিচ্ছার উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নির্দেশের কোনও রকম অন্যথা হচ্ছে কি না, থানা স্তরে সে দিকে কড়া নজর রাখা হবে। এক জন বন্দিও মানুষ— এই ভাবনা থেকে কাজ করলে কোনও সমস্যা হবে না।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, বেশ কয়েক বছর ধরেই বন্দিপিছু খাবারের দৈনিক খরচ বরাদ্দ ছিল ৪৭ টাকা। কলকাতা পুলিশ এলাকার এক-একটি ডিভিশনে দরপত্র ডেকে এক-একটি সংস্থাকে খাবার তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হত। বন্দিপিছু ৪৫ টাকায় ওই সংস্থা খাবার তৈরি করে দিত। লালবাজারের জন্য দরপত্র পেত একটি পৃথক সংস্থা। দক্ষিণ কলকাতার একটি থানার ওসি জানান, সকালে-বিকেলে চা-বিস্কুট দেওয়া হয় বন্দিদের। দুপুরে ভাত, ডাল, তরকারির সঙ্গে কোনও কোনও দিন দেওয়া হয় মাংস ও ডিম। তবে মাছ এড়িয়ে চলা হয় যতটা সম্ভব। তাঁর কথায়, ‘‘কাঁটার ভয়েই মাছ দেওয়া হয় না। বন্দির গলায় কাঁটা ফুটে বিপদ হতে পারে, বন্দিও কাঁটা ব্যবহার করে নিজের বা অন্য কারও ক্ষতি করতে পারেন।’’

কিন্তু এই খাবারের গুণমান নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন উঠছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এ ব্যাপারে সমীক্ষা শুরু করেন কলকাতা পুলিশের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট দলের সদস্যেরা। তাঁরা দেখেন, ৪৫ টাকায় খাবার দেওয়ার নাম করে বরাত পাওয়া সংস্থা আরও কম মূল্যের খাবার বাজার থেকে তুলে বন্দিদের জন্য দেয়। এতেই জনমানসে ‘জেলের ভাত খাওয়া’ নিয়ে খারাপ ধারণা বদলানো যাচ্ছে না বলে রিপোর্ট জমা পড়ে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-নগরপাল (অর্গানাইজ়েশন)-এর কাছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে এর পরে নবান্নে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠান কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল। তাতেই বাড়ে বন্দিদের খাবারে দৈনিক বরাদ্দের পরিমাণ।

কিন্তু দরপত্র ছাড়া থানা স্তরে ওসিদের মাধ্যমে খাবার আনানো নিয়ে পুলিশের আর এক কর্তার দাবি, ‘‘সব চেয়ে বেশি বন্দি থাকেন লালবাজারের লক-আপে। এক-একটি থানায় খুব বেশি হলে দিনে ২৫-৩০ জন বন্দি থাকেন। ধরা যাক, কোনও দিন এমন হল যে, থানায় ১০০ জন বন্দি আছেন। তা হলেও ৭৩ টাকা ৫০ পয়সা করে ধরলে ৭৩৫০ টাকা খরচ হতে পারে। এক-একটি থানার দিনে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করার সুযোগ রয়েছে। ফলে টাকার সমস্যা নেই। দরকার ছিল সরকারি ছাড়পত্র আর কাজ করার সদিচ্ছার।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kolkata Police West Bengal government Jail Inmates Jail Custody

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy