Advertisement
E-Paper

আট বছর ধরে নিখোঁজ ছেলের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাবা, অবশেষে ফের ফাইল খুলল পুলিশ

সকাল সাড়ে ১১টা। সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল কম্পিউটার সায়েন্সের এক তরুণ পড়ুয়া। তার পর আট বছর কেটে গিয়েছে। সেই তরুণ আর ফিরে আসেননি। রাজ্য পুলিশ থেকে শুরু করে কলকাতা পুলিশ— তদন্ত করেছে সবাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৪:৪৩
পূর্ব রেলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী মানিকলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। ইনসেটে ছেলে সুদীপ্ত। —নিজস্ব চিত্র।

পূর্ব রেলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী মানিকলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। ইনসেটে ছেলে সুদীপ্ত। —নিজস্ব চিত্র।

সকাল সাড়ে ১১টা। সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল কম্পিউটার সায়েন্সের এক তরুণ পড়ুয়া। তার পর আট বছর কেটে গিয়েছে। সেই তরুণ আর ফিরে আসেননি। রাজ্য পুলিশ থেকে শুরু করে কলকাতা পুলিশ— তদন্ত করেছে সবাই। কিন্তু, কোনও কিনারা হয়নি। সেই ছাত্র নিঁখোজের বন্ধ ফাইল ফের খুলল পুলিশ। এ বার তাঁদের ভরসা এমসিএ পাঠরত সেই ছাত্রের কম্পিউটার।

দিনটা স্পষ্ট মনে আছে পূর্ব রেলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী মানিকলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ২০১০-এর ২১শে জুলাই তিনি অফিসে ছিলেন। বিকেলে বাড়ি ফিরে জানতে পারেন, তাঁর একমাত্র ছেলে বছর তেইশের সুদীপ্ত সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। তার পর আর ফেরেনি। রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে বেহালা থানায় নিখোঁজের অভিযোগ জানিয়েছিলেন মানিকবাবু। তখনও বেহালা থানা কলকাতা পুলিশের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বেহালা থানাকে জানানোর পাশাপাশি তিনি ভবানী ভবনে সিআইডি-র ‘মিসিং পারসনস ব্যুরো’তেও অভিযোগ জানান। তারাও কোনও হদিশ পায়নি।

বাড়ি থেকে বেরনোর সময় সুদীপ্ত তাঁর মোবাইলটা বাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার ঠিক এক মাস বাদে ওই বছরের ২১ অগস্ট রাত ৯টা ৫১ মিনিটে সেই মোবাইলে একটি ফোন আসে। ফোনটি ধরেছিলেন সুদীপ্তর মা ঝর্না দেবী। তাঁর কথায়, “ফোনের ওপার থেকে আমি সুদীপ্তর গলা স্পষ্ট শুনতে পাই। ফোন ধরতেই বলেছিল, মা আমি বাবু বলছি। জিজ্ঞাসা করি, তুই কোথায়? বাবু শুধু উত্তর দেয়, শ্যামবাজার। তার পরেই লাইনটা কেটে যায়।”

আরও পড়ুন: আজও বাতিল অনেক ট্রেন, অবরোধ উঠলেও পুরো স্বাভাবিক নয় দক্ষিণ-পূর্ব রেল

যে নম্বর থেকে ফোনটা এসেছিল, সঙ্গে সঙ্গে সেই নম্বরে ফোন করেন সুদীপ্তর মা। তখন অন্য কেউ ফোন ধরেন। অজ্ঞাত সেই ব্যক্তি জানান, তিনি সুদীপ্ত বলে কাউকে চেনেন না। মানিকবাবু বলেন, “ওই ফোনটি যিনি ধরেছিলেন, তিনি নিজেকে সৌম্যদীপ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।” এই ঘটনার কথাও তিনি বেহালা থানার পুলিশকে জানিয়েছিলেন। যদিও সেই ফোন নম্বরের সূত্র ধরে সেই সময় পুলিশ বিশেষ এগোতে পারেনি।

আরও পড়ুন: নেই তাই খাচ্ছ, থাকলে কোথায় পেতে..., পার্থর মন্তব্যে হতভম্ব শিক্ষামহল

তবে সেই ঘটনার পর মানিকলাল এবং ঝর্নার দৃঢ় ধারণা হয় সুদীপ্ত হারিয়ে যাননি। তাঁদের ছেলেকে কেউ বা কোনও চক্র অপহরণ করেছে এবং কোথাও হয়তো আটকে রেখেছে। এর মধ্যেই বছরখানেকের বেশি সময় কেটে যায়। তত দিনে কলকাতা পুলিশের এলাকাভুক্ত হয়েছে বেহালা থানা। সেই সময়ে ওই এলাকার দায়িত্বে থাকা ডেপুটি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন মানিকবাবু। তাঁর কাছে সমস্ত ঘটনা শুনে অপহরণের মামলা দায়ের করে ফের নতুন করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।

ইতিমধ্যে আগের ফোন নম্বর থেকে সুদীপ্তর মোবাইলে তিন বার ফোন এসেছে। অন্য কয়েকটি নম্বর থেকেও ফোন আসতে থাকে। সেই নম্বরের সূত্র ধরে জানা যায় প্রতিটা নম্বরই নেওয়া হয়েছে ভুয়ো নামে। পুলিশ এক জনকে গ্রেফতারও করেছিল সেই সময়, ফোনের সূত্র ধরে। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কোনও উল্লেখযোগ্য তথ্য পায়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ফাইল বন্ধ করে দেয়।

আরও পড়ুন: শঙ্কর গ্রেফতার হলে কেষ্ট-জ্যোতিপ্রিয় নয় কেন? নিশানায় পুলিশ

কিন্তু হাল ছাড়েননি সুদীপ্তর বাবা। তিনি এখনও বিশ্বাস করেন সুদীপ্তকে কেউ আটকে রেখেছে। সেই বিশ্বাস থেকেই ৬৬ বছরের বৃদ্ধ মানিকবাবু ছেলের ছবি দিয়ে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “আমার স্থির বিশ্বাস সুদীপ্তকে কেউ টাকার জন্য লুকিয়ে রেখেছে। তাই আমি ফেসবুকে ছেলেকে খুঁজে দেওয়ার জন্য সাত লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছি। এখনও সে ভাবে কোনও কোনও উত্তর আসেনি।’’ তবে তিনি আশাবাদী। সেই আশায় বুক বেঁধেই সম্প্রতি তিনি দেখা করেন কলকাতা পুলিশের এক কর্তার সঙ্গে। সমস্ত কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখে তিনি মানিকবাবুকে আর ফেরাতে পারেননি। সেই কর্তার উদ্যোগেই ফের খুলছে সেই তদন্তের ফাইল। এ বার তদন্তকারীরা সুদীপ্তর বাড়িতে তাঁর কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক পরীক্ষা করতে চান। তাঁরা আশাবাদী, ওই হার্ড ডিস্ক থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে যা থেকে ৩১ বছরের সুদীপ্তর হদিশ মিলতে পারে।

Crime Kolkata Police Missing Student কলকাতা পুলিশ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy