মাঝরাতে কলকাতা পুলিশের এসএমএস পেয়ে চমকে উঠেছিলেন বেহালার এক যুবক। ওই এসএমএস থেকেই তিনি জানতে পারলেন, চার বছর আগে শহরের রাস্তায় গাড়ি নিয়ে তিন বার আইন ভেঙেছিলেন তিনি! এত দিন পরে পুলিশ সেই আইন ভাঙার জন্য জরিমানা দিতে বলেছে। গত দু’সপ্তাহে এমন এসএমএস পেয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ব্যক্তি।
এই এসএমএস পাঠানোর কথা স্বীকার করেছে লালবাজার। তারা জানিয়েছে, সম্প্রতি প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ আইনভঙ্গকারীকে এসএমএস পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে পুরনো মামলার ক্ষেত্রে আদালতে গিয়ে জরিমানা দিতেও বলা হয়েছে। যাঁরা এসএমএস পেয়েছেন, তাঁদের কেউ ২০১১ সালে ‘আইন ভেঙেছিলেন’, কেউ বা ২০১৬ সালে। পাঁচ বছর আগে সত্যিই তাঁরা সে সময়ে ওই রাস্তায় গিয়েছিলেন কি না, সে কথা মনে করতেও পারছেন না। এক গাড়িচালকের প্রশ্ন, ‘‘এত বছর আগে সত্যিই আইন ভেঙেছিলাম কি
না, তা নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন আসা কি ভুল?’’
যদিও পুলিশের এই ‘সক্রিয়তা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তাঁরা বলছেন, ২০১১ কিংবা ২০১৩ সালে যদি কেউ আইন ভেঙে থাকেন তা হলে এত দিন পরে পুলিশের টনক নড়ল কেন? এত দিন কেনই বা সংশ্লিষ্ট আইনভঙ্গকারীকে তা জানানো হল না? শহরে নিত্যদিন গাড়ি চালিয়ে যাতায়াত করা এক চিকিৎসকের মন্তব্য, ‘‘বহু সময়েই পুলিশ ভুল মামলা করে। আমার বিরুদ্ধে চার দিন সিগন্যাল ভাঙার মামলা করা হয়েছে। অথচ যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে তখন গাড়ি বাড়ি থেকেই বেরোয়নি!’’ কারও প্রশ্ন, চার বছর আগে তিনি শহরের কোন রাস্তায় কোন সময়ে ছিলেন তা কি মনে করা সম্ভব?
এ নিয়ে ডিসি (ট্র্যাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমারকে ফোন করা হলে সাড়া মেলেনি। তবে পুলিশের একটি সূত্রের মতে, বহু দিন ধরে মামলা জমে থাকলেও কর্তাদের তা নিয়ে টনক নড়ত না। ইদানীং জরিমানা আদায় করে ভাঁড়ার ভরার তাগিদ হয়েছে বলেই এক লপ্তে সব এসএমএস পাঠানো হয়েছে। লালবাজার এ-ও জানাচ্ছে, আগামী ৮ এপ্রিল ব্যাঙ্কশাল আদালতে লোক আদালত চলবে। ওই িদন আদালতে হাজির হয়ে জরিমানা দেওয়া যাবে। তা না হলে ট্র্যাফিক গার্ডে হাজির হয়ে জরিমানা দেওয়া যেতে পারে।
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে মেসেজ পেয়েছেন এমন অনেকেই অভিযোগ করেছেন, ওই এসএমএসে জরিমানা না দিলে সমন জারি করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এত দিন পরে জরিমানার কথা জানিয়ে সমন জারি করার হুমকি দেওয়া উচিত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁদের একাংশ। পুলিশ সূত্রের অবশ্য দাবি, সমন জারি করার হুমকি দেওয়া হয়নি। জরিমানা না দিলে আদালতের সমন জারি হতে পারে, সেই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের এসএমএস পাঠানোর সময়ে ওই সতর্কবার্তা দেওয়া দস্তুর। যদিও পুলিশেরই খবর, সম্প্রতি এসএমএস থেকে সমনের প্রসঙ্গ বাদ দেওয়া হয়েছে। দস্তুর হলে তা মুছে দেওয়া হল কেন? লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় এসএমএস থেকে সমন জারির সতর্কতা মুছে দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy