Advertisement
E-Paper

দাগিদের নজরে রাখতে নয়া পদক্ষেপ

গত মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি কড়েয়ায় এক প্রোমোটার গুলিতে খুন হওয়ার পরে দাগিদের দমাতে ও বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে গুন্ডা দমন শাখার গোয়েন্দারা এই পদক্ষেপ করছেন নতুন উদ্যমে।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৯

আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও নাম দেওয়া হয়নি সেই অভিযানের। তবে গোয়েন্দাদের একাংশ নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময়ে একটা শব্দবন্ধ ব্যবহার করছেন। তা হল— ‘অপারেশন রিনিউয়াল’। গোটা শহরের প্রায় সব পুরনো বা দাগি দুষ্কৃতীকে ফের ধরে আনার নতুন উদ্যোগ। পুলিশের খাতায় তাদের নাম ‘নবীকরণ’ করানো হবে। উদ্দেশ্য দু’টো— এক, জেল থেকে বেরোনো দাগিদের উপরেও যে নজরদারি রয়েছে, তা বোঝানো। দুই, বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র যত বেশি সম্ভব উদ্ধার করা।

গত মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি কড়েয়ায় এক প্রোমোটার গুলিতে খুন হওয়ার পরে দাগিদের দমাতে ও বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে গুন্ডা দমন শাখার গোয়েন্দারা এই পদক্ষেপ করছেন নতুন উদ্যমে।

লালবাজার সূত্রের খবর, রবিবার পর্যন্ত জনা ২৫ দাগি দুষ্কৃতীকে ধরা হয়েছে, উদ্ধার করা হয়েছে গোটা আষ্টেক আগ্নেয়াস্ত্র। এর অর্ধেক ওয়ান শটার ও বাকিগুলি সেভেন এমএম পিস্তল। এখনও পর্যন্ত রুজু করা হয়েছে প্রায় ছ’টি মামলা। ধরা পড়েছে তপসিয়া এলাকার তনবীর, এন্টালি এলাকার বোম্মাইয়া রাজুর মতো দাগি দুষ্কৃতীরা। আপাতত কসবা, তিলজলা, বেনিয়াপুকুর, তপসিয়া, এন্টালির দাগি দুষ্কৃতীদের একাংশকে ধরা হয়েছে। এর পর মধ্য, উত্তর ও বন্দর এলাকায় জোরদার অভিযান চালানো হবে।

গোয়েন্দাদের বক্তব্য, কড়েয়ার ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, শাস্তির মেয়াদ পূর্ণ করে কোনও দাগি জেল থেকে বেরিয়ে কয়েক বছর চুপচাপ থাকা মানেই যে তার থেকে বিপদের আশঙ্কা থাকে না, তেমনও নয়। লালবাজারের এক শীর্ষকর্তা বলছেন, ‘‘কড়েয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত, শেখ ইদ্রিস ওরফে লম্বু ভোলা সাত বছর টুঁ শব্দটি করেনি। আমরা কিছুটা নিশ্চিন্ত ছিলাম। কিন্তু সে-ই আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড় করে গুলি চালিয়ে এক জনকে বেমক্কা খুন করে দিল।’’ ওই অফিসারের কথায়, ‘‘ভোলার যে এত বড় কাণ্ড ঘটানোর ক্ষমতা বা দম এখনও আছে, ওর আওতায় আগ্নেয়াস্ত্রও আছে, সে সব আন্দাজ না করতে পারাটাই আমাদের ব্যর্থতা।’’ সেই জন্যই এখন চুপচাপ হয়ে যাওয়া কোনও পুরনো দুষ্কৃতী সম্পর্কে আর ঝুঁকি নিতে রাজি নয় লালবাজার।

‘অপারেশন রিনিউয়াল’–এ তাই পুরনো দুষ্কৃতীদের প্রথমে ধরে আনা হচ্ছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ও অন্যান্য সূত্রে খোঁজখবর নিয়ে অপরাধ জগতের সঙ্গে তাদের এখনকার সম্পর্কের হাল-হকিকত জানা হচ্ছে এবং হদিস করা হচ্ছে তাদের আওতায় থাকা মারণাস্ত্রের।

যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘সামনে দেখাচ্ছে সব ছেড়েছুড়ে ভাল হয়ে গিয়েছে, অথচ তলে তলে দুষ্কর্ম করছে, শহরের এমন দাগি দুষ্কৃতীদের সবাইকে গ্রেফতার করা হবে। আমরা সেই মতো ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতিমধ্যেই কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ যুগ্ম কমিশনারের কথায়, ‘‘কেউ সত্যিই ভাল হতে চাইলে তাকে আমাদের তরফে সহযোগিতাও করা হবে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে অপরাধ জগতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে কঠোর পদক্ষেপ করব।’’

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, দাগি বা পুরনো দুষ্কৃতীরা কেউ এখন সব সময়ে কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র রাখে না। ‘কাজ’ বা অপরাধের সময়ে সেটা নিয়ে বেরোয়। আতিকুলকে মারার সময়ে যেমনটা করেছিল ভোলা। গত বুধবার থেকে রবিবার— এই পাঁচ দিনে যে সব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, সেগুলির একটাও ধৃতদের সঙ্গে ছিল না। কেউ রেখেছিল নিজের বাড়ির কোনও গোপন কুঠুরিতে, কেউ মোটরসাইকেলের ডিকি বা সাইড বক্সে। আবার কেউ কেউ লুকিয়ে রেখেছিল আত্মীয়ের বাড়িতে, বাক্স বা থলেতে অন্য জিনিসপত্রের সঙ্গে।

Kolkata police Operation Renewal crime Lalbazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy