Advertisement
E-Paper

ই-হাওয়ায় মেতে মণ্ডপে ওয়াইফাই

‘‘উফ! কতক্ষণ ধরে হোয়াটসঅ্যাপ করছি, দেখিস না নাকি?’’ ‘‘আরে হোয়াটসঅ্যাপ ঢুকলে তো! নেট প্যাক তো সকালেই শেষ। এত ছবি আপলোড করলাম কাল রাতে! এখন আবার রিচার্জ করতে হবে।’’ কথোপকথনটা খুব চেনা। মোবাইলে ইন্টারনেট না থাকলে এখন অসহায় ই-জনতা। এই অস্বস্তি যেন মানিব্যাগ না নিয়ে বেরোনোর থেকেও বেশি! তবে পুজোর ক’দিন বেরিয়ে যাতে এই সমস্যা ভুলে ফুরফুরে মেজাজে আড্ডা মারা যায়, তা নিশ্চিত হচ্ছে কোথাও কোথাও।

অনির্বাণ রায় ও সুজিষ্ণু মাহাতো

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৫৬

‘‘উফ! কতক্ষণ ধরে হোয়াটসঅ্যাপ করছি, দেখিস না নাকি?’’

‘‘আরে হোয়াটসঅ্যাপ ঢুকলে তো! নেট প্যাক তো সকালেই শেষ। এত ছবি আপলোড করলাম কাল রাতে! এখন আবার রিচার্জ করতে হবে।’’

কথোপকথনটা খুব চেনা। মোবাইলে ইন্টারনেট না থাকলে এখন অসহায় ই-জনতা। এই অস্বস্তি যেন মানিব্যাগ না নিয়ে বেরোনোর থেকেও বেশি! তবে পুজোর ক’দিন বেরিয়ে যাতে এই সমস্যা ভুলে ফুরফুরে মেজাজে আড্ডা মারা যায়, তা নিশ্চিত হচ্ছে কোথাও কোথাও।

সৌজন্যে, পুজো কমিটির উদ্যোগে ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবস্থা। শুধু কলকাতাই নয়, এমন ই-হাওয়া বইছে জেলাতেও! উত্তর কলকাতার বাগবাজার সর্বজনীনেও এ নিয়ে ভাবনা চলছে। সকলে বলছেন, এখন মুখোমুখি আড্ডার মতোই জনপ্রিয় ভার্চুয়াল আড্ডা। তাই জলপাইগুড়ি-আন্দুলের পুজোর স্বাদ যাতে জোহানেসবার্স-আমস্টারডামে বসেও পাওয়া যায় তাই এই ব্যবস্থা।

ওয়াই-ফাই জোনের টানে ভিড় টানা অবশ্য হাল আমলের সফল ব্যবসায়িক কৌশল। শপিং মল থেকে রেস্তোরাঁ, হোটেলের বিজ্ঞাপনে ওয়াই-ফাই থাকার উল্লেখ করা হয়। মণ্ডপের ভিড়ে অন্যদের টেক্কা দিতে সেই পথে এখন হাঁটছেন পুজো উদ্যোক্তারাও। জলপাইগুড়ির কদমতলা দুর্গাবাড়ি সর্বজনীনের সঙ্গে অনেকে কলকাতার ম্যাডক্স স্কোয়ারের মিল খুঁজে পান। কমিটির সম্পাদক প্রসূন বাগচীর কথায়, ‘‘সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আড্ডাকে জমজমাট করতে এ বার ওয়াই-ফাই জোন তৈরি হবে।’’

জেন ওয়াইকে টানতে যে ওয়াই-ফাই জরুরি, মানছে শহরের অন্য পুজোও। দিশারী ক্লাবের পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ সত্যব্রত দে’র কথায়, ‘‘ধরুন মণ্ডপে আড্ডা দেওয়ার মাঝে আপনি নিজস্বী তুললেন। সেই নিজস্বী আপনার ফেসবুকে-ট্যুইটার বা ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করতে ইচ্ছে করল। আমাদের মণ্ডপে আপনি নিখরচায় সেই সেলফি আপলোড করতে পারেন। পুরো মণ্ডপ ওয়াইফাই জোনের মধ্যে।’’ শহরেরই সমাজপাড়া সর্বজনীন পুজো কমিটির সম্পাদক শান্তা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন সোশ্যাল সাইটেও জমজমাট আড্ডা চলে। মণ্ডপেও সেই স্বাদ পাইয়ে দিতে ওয়াইফাই বসানোর কথা ভেবেছি।’’ শহরের এই ‘বদলে’ উত্তেজিত দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী দেবপ্রিয়া পাল। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের আড্ডার ছবি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠিয়ে অন্য বন্ধুদেরও মণ্ডপে টানা যাবে।’’ ফেসবুকে সড়গ়ড় পঞ্চান্ন ছুঁইছুঁই শেখর মজুমদারও রাজি। বললেন, ‘‘এ বার না হয় পুজোর আড্ডা ওয়াইফাই মণ্ডপেই দেব!’’

ই-হাওয়ায় যদি উত্তর পাল তুলতে পারে দক্ষিণবঙ্গই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? মণ্ডপ চত্বরে ওয়াই-ফাই জোন করছে হাওড়ার আন্দুলের দুইল্যার নবনগর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটিও। এ বার তাদের থিম হল ‘বন্ধনেই শক্তি, বন্ধনেই মুক্তি’। পুজো কমিটির কর্তা সঞ্জীব ভৌমিক বলছেন, ‘‘বর্তমানে যোগাযোগের মূল মাধ্যম হল ইন্টারনেট। তাই বন্ধনের প্রতীক হিসেবে মণ্ডপে ওয়াই-ফাই ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।’’

তবে পুজোর আড্ডা বলতেই যে পুজোর কথা মনে আসে, সেই ম্যাডক্স স্কোয়্যার অবশ্য ই-হুজুগে নেই। তাদের বক্তব্য, ম্যাডক্সের আড্ডায় ভিড় টানার জন্য ওয়াই-ফাইয়ের দরকার হয় না। পুজোর বিজ্ঞাপন ও প্রচার সম্পাদক জয়দীপ বসাক বলছেন, ‘‘আমাদের মূলমন্ত্র নিষ্ঠাভরে পুজো ও নির্ভেজাল আড্ডা। আমরা সেই কথাতেই সকলকে আহ্বান জানাই। সেখানে মণ্ডপে ওয়াই-ফাই থাকল কি না সেটা কোনও ব্যাপার নয়।’’ তবে জলপাইগু়ড়ি ও আন্দুলের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন জয়দীপ। তার কথায়, ‘‘ইন্টারনেট তো মানচিত্রের গণ্ডির বাইরে। তাই যে কোনও জায়গাতে এটা হতে পারে। ওঁরা যেটা করছেন সেটা খুবই ভাল। পরে কোনও সময় হয়তো আমাদের পুজোতেও এমন হবে।’’

ওয়াই-ফাইকে অবশ্য নিছক আড্ডার জন্য নয়, প্রয়োজনীয় বলেই মনে করছেন বাগবাজার সর্বজনীনের সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, ‘‘অনেকে পুজোয় আসতে চেয়ে পারেন না। তার মধ্যে রয়েছেন বয়স্করা, প্রবাসীরা। তাঁদের কাছে পুজোর টাটকা ‘ফিল’ পৌঁছতে ইন্টারনেট ছাড়া গতি নেই। তাই মণ্ডপে ওয়াই-ফাই জোনটা সত্যি দরকার। আমাদের পুজোর সঙ্গেও একটি মোবাইল সংস্থার কথাবার্তা চলছে। হয়তো তা পাকাও হয়ে যাবে। তা হলে এখানেও আমরা ওয়াই-ফাই জোন করতে পারব।’’ আবার,
বাংলার দুর্গাপুজো এখন ভিনদেশী পর্যটকদের কাছেও খুবই আকর্ষণীয়। যে কোনও শহরেই তাঁদের ঘোরার ক্ষেত্রে গুগল ম্যাপ ও জিপিএস একটা বড় ভরসা। তাই মণ্ডপে ওয়াই-ফাই থাকলে তাঁরা পরের মণ্ডপে পৌঁছনোর রাস্তা একটা পুজো দেখেই দেখে নিতে পারবেন। সেটাও ওয়াই-ফাই জোন চালুর একটা কারণ বলে জানালেন সন্দীপবাবু।

তাই অষ্টমীর ভোগের সঙ্গে এ বার চলবে ফেসবুকে ‘ট্যাগ’ও। ই-জনতা গুনগুন করবে চন্দ্রবিন্দুর গান, ‘‘দুনিয়া ডট কম, দুনিয়া ডট কম, দুনিয়া ডট কম নমো নমহঃ...।’’

সহ প্রতিবেদন: অভিষেক চট্টোপাধ্যায়।

anirban roy sujisnu mahato kolkata puja pandal wifi puja pandal wi fi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy