Advertisement
E-Paper

ছাত্রীদের ‘লেসবিয়ান’ বিতর্কে স্কুলের পাশেই পার্থ

গত সোমবার ওই স্কুলের ক্লাস নাইনের কয়েক জন ছাত্রী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার কাছে অভিযোগ করে। তারা জানায়, শিক্ষিকাদের অনুপস্থিতিতে ক্লাসের ভিতরেই জনা দশেক ছাত্রী নিজেদের মধ্যে নানা রকম ‘অশ্লীল’ কাজকর্ম করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ২০:৪২
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

অভিযোগটা উঠেছিল দু’দিন আগে। কলকাতার এক নামী স্কুলে নবম শ্রেণির দশ জন ছাত্রীকে দিয়ে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তারা ‘লেসবিয়ান’। এই ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন অভিভাবকরা। বুধবার সেই ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্কুল কর্তৃপক্ষের পাশেই দাঁড়ালেন। জানিয়ে দিলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষই যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিচ্ছেন। ওঁরাই সামলে নেবেন।

গত সোমবার ওই স্কুলের ক্লাস নাইনের কয়েক জন ছাত্রী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার কাছে অভিযোগ করে। তারা জানায়, শিক্ষিকাদের অনুপস্থিতিতে ক্লাসের ভিতরেই জনা দশেক ছাত্রী নিজেদের মধ্যে নানা রকম ‘অশ্লীল’ কাজকর্ম করে। ওই সব দৃশ্য দেখে বাকিরা খুব অস্বস্তিতে পড়ে। এর পরেই ওই দশ ছাত্রীকে ডেকে পাঠান প্রধান শিক্ষিকা। অভিযোগ, তিনি ওই ছাত্রীদের লিখিয়ে নেন যে তারা ‘লেসবিয়ান’।

এ প্রসঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়। স্কুলে এ রকম আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। স্কুল কর্তৃপক্ষ যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিচ্ছেন। ওরাই ওদের সামলে নেবে। সকলকে সহযোগিতা করতে আবেদন জানাচ্ছি।’’

আরও পড়ুন: ‘সত্য প্রকাশের জন্য এই লড়াইয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে পাশে চাই’

কিন্তু, কেন এ ভাবে লিখিয়ে নেওয়া হল?

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা জানিয়েছেন, ‘‘আমার কাছে মেয়েরা দোষ স্বীকার করে। তখন আমি তাদের বলি, লিখে দাও যে তোমরা স্কুলে আর এ সব কাজ করবে না। তখন ওরা লিখিত ভাবে সেটা জানায়।’’ তাঁর মত, তিনি মনে করেছিলেন বিষয়টি অভিভাবকদের জানানো প্রয়োজন। অভিভাবকদের ডেকে পাঠানো হয়। অভিযোগ, এর পরেই স্কুলে ঢুকে গোলমাল শুরু হয়। ছাত্রীদের স্বীকারোক্তির চিঠিগুলি ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।

আরও পড়ুন: ‘অত্যন্ত লোভী রত্নাদি’, মুখ খুলেই বিস্ফোরক বৈশাখী

অভিভাবকদের পাল্টা অভিযোগ, গত মাসে ওই স্কুলের এক অশিক্ষক কর্মচারীর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতেই অভিযোগকারী ওই ছাত্রী ও তার বান্ধবীদের মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু, এ ভাবে নাবালিকাদের দিয়ে কি লিখিয়ে নেওয়া যায়?

লেসবিয়ান, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্স মানুষদের (এলবিটি) অধিকার নিয়ে লড়াই করা শহরের এক ফোরাম স্যাফো-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা মালবিকা বলেন, “অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক একটি ঘটনা। ওই স্কুলের কোনও পড়ুয়া যদি চুরির অভিযোগে ধরা পড়ত, তা হলেও তাকে দিয়ে এ ভাবে মুচলেকা লিখিয়ে নিতে পারেন না কর্তৃপক্ষ। এটা চূড়ান্ত অমানবিক বিষয়। কোনও বাচ্চাকেই এ ভাবে মানসিক ভাবে নিপীড়ন করা উচিত নয়।”

পার্থবাবুর মন্তব্য প্রসঙ্গে মালবিকার মন্তব্য, ‘‘সমকামিতা আমাদের সংস্কৃতি নয় বলতে পার্থবাবু কী বোঝাতে চাইছেন তা ভেবে দেখতে হবে। সবটাই তো আর ভোটের রাজনীতি নয়। ভারতীয় সংস্কৃতিতে সমকামিতার বহু উদাহরণ মেলে। সংবিধান যেখানে গোপনীয়তার অধিকার, বাক-স্বাধীনতার অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে, সেখানে আমি কার সঙ্গে থাকব, কী খাব বা কোথায় যাব, তা নিয়ে কারও কথা বলার অধিকার নেই।’’

আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহার মতে, ‘‘ভয় দেখিয়ে বা চাপ দিয়ে যে কোনও বয়ান আদায় করাটাই অপরাধ। ১৮ বছরের নীচে কয়েকটি মেয়েকে দিয়ে এই কথাটা লিখিয়ে নেওয়া হল, তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল কি? এটা তো ওদের প্রতি নির্যাতন। অন্যায় করলে শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কাউকে দিয়ে জোর করে এমনটা লিখিয়ে নেওয়া যায় না।’’

School Agitation Lesbian lesbianism লেসবিয়ান Partha Chatterjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy