Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

থইথই পথে জট, দুর্ভোগ শহর জুড়ে

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, ঠনঠনিয়া, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, স্ট্র্যান্ড রোড, বেলেঘাটা, ক্যামাক স্ট্রিট, লাউডন স্ট্রিট, সুইনহো লেন, কর্নফিল্ড রোড, এলগিন রোড, আশুতোষ মুখার্জি রোড, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড-সহ যাদবপুর ও বেহালার বহু এলাকায় জল জমে যায়। এর সঙ্গে যানজট যুক্ত হওয়ায় রীতিমতো দুর্বিষহ অবস্থা হয় সাধারণ মানুষ থেকে অফিসযাত্রীদের।

ভরসা: জলে আটকে বিকল অ্যাম্বুল্যান্স। বাধ্য হয়ে সেই জলের মধ্যে দিয়েই স্ট্রেচার ঠেলে রোগীকে অন্য গাড়িতে তুলছেন দুই পুলিশকর্মী। শুক্রবার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুমন বল্লভ

ভরসা: জলে আটকে বিকল অ্যাম্বুল্যান্স। বাধ্য হয়ে সেই জলের মধ্যে দিয়েই স্ট্রেচার ঠেলে রোগীকে অন্য গাড়িতে তুলছেন দুই পুলিশকর্মী। শুক্রবার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৭ ০১:২০
Share: Save:

ঘণ্টা দেড়েকের বৃষ্টিতেই নাজেহাল শহর। শুক্রবার দুপুরে উত্তর থেকে দক্ষিণ— মহানগরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এতটাই যে, জমা জলের জন্য পুরভবনের কন্ট্রোল রুমের সামনে নামতেই পারেননি খোদ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় (পরে অবশ্য প্রধান ফটকের ভিতর দিয়ে কন্ট্রোল রুমে যান তিনি)। রাস্তায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, ঠনঠনিয়া, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, স্ট্র্যান্ড রোড, বেলেঘাটা, ক্যামাক স্ট্রিট, লাউডন স্ট্রিট, সুইনহো লেন, কর্নফিল্ড রোড, এলগিন রোড, আশুতোষ মুখার্জি রোড, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড-সহ যাদবপুর ও বেহালার বহু এলাকায় জল জমে যায়। এর সঙ্গে যানজট যুক্ত হওয়ায় রীতিমতো দুর্বিষহ অবস্থা হয় সাধারণ মানুষ থেকে অফিসযাত্রীদের।

কেন এমন হাল?

কলকাতা পুরসভা সূত্রে বলা হয়েছে, এ বছর এত বৃষ্টি আগে হয়নি। এক ঘণ্টায় শহরের কোনও কোনও অঞ্চলে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পামারবাজারে বৃষ্টির পরিমাণ ১১৮ মিলিমিটার, নিউ মার্কেট এলাকায় ৮৩ মিলিমিটার। বৃষ্টি শেষ হতেই পুরভবনে শোভনবাবু জানান, অতিবৃষ্টি জল জমার প্রধান কারণ ঠিকই, তবে তার সঙ্গে ওই সময়ে গঙ্গায় জোয়ার থাকায় নিকাশি নালা দিয়ে জল বেরোতে পারেনি। সব ক’টি পাম্প চালু থাকলেও জল বেরোয়নি, বরং বেড়ে গিয়েছে।

মেয়র আরও জানান, ভাটা শুরু হওয়ার পরে জল নামতে শুরু করে। তাঁর দাবি, ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই শহরের অনেক এলাকা থেকে জল নেমে গিয়েছে। মেয়রের কটাক্ষ, ‘‘চিত্র সাংবাদিকেরা জলের ছবি নিয়ে অফিসে গিয়েই বুঝতে পারবেন, যে জায়গার ছবি তুলেছেন, সেখানে আর জল জমে নেই।’’

তবে মেয়র যা-ই বলুন না কেন, বহু জায়গাতেই সন্ধে পর্যন্ত জল জমে থাকতে দেখা গিয়েছে। বিকেল পাঁচটার পরেও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে গোড়ালি ডোবা জল ছিল। তাতে যানবাহনের গতিও অনেক শ্লথ হয়ে যায়। অনেক বাস নিজস্ব রুটে যেতে পারেনি। ঘুরপথে যাওয়ায় ৪০ মিনিটের যাত্রায় দু’-তিন ঘণ্টা লেগে গিয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার দুপুরের বৃষ্টিতে কার্যত বেহাল হয়ে পড়ে গোটা ট্র্যাফিক ব্যবস্থা। বেলা ১টার পরে দেখা যায়, টালা থেকে টালিগঞ্জ— সর্বত্র একই হাল। সর্বত্রই যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। উত্তরে যানজট ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সিঁথি মোড় পর্যন্ত। দক্ষিণেও চারু মার্কেট, টালিগঞ্জ, ঢাকুরিয়া এলাকায় আটকে পড়ে বহু গাড়ি। ফলে অনেকেই মাঝপথে বাস-ট্যাক্সি ছেড়ে মেট্রো ধরে গন্তব্যে পৌঁছেছেন।

ট্র্যাফিক পুলিশ জানিয়েছে, অবস্থা সামাল দিতে শহরের বিভিন্ন রাস্তা থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাতেও ভোগান্তি কমেনি।

লালবাজার সূত্রে খবর, বৃষ্টি থেমে যাওয়ার ছ’ঘণ্টা পড়েও শহরের প্রায় ২৫টি রাস্তায় কম-বেশি জল
জমে ছিল।

বৃষ্টিতে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় জল যত জমেছে, ততই দুর্ভোগ বেড়েছে নিত্যযাত্রীদের। উবের, ওলা-য় দু’তিন গুণ ‘সার্জ’ তো আছেই। তার সঙ্গে ট্যাক্সিচালকেরাও ইচ্ছে মতো ভাড়া হেঁকেছেন। মওকা বুঝে যাত্রীদের থেকে ইচ্ছে মতো ভাড়া নিয়েছে অনেক রুটের অটোও। রাজাবাজার থেকে ফুলবাগান, উল্টোডাঙা থেকে আহিরীটোলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত অটোর ভাড়া ১০-১২ টাকার জায়গায় নেওয়া হয়েছে ১৮-২০ টাকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rainy Day Monsoon Water Logging
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE