Advertisement
E-Paper

কলকাতার কড়চা

শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব সংস্কৃত শিক্ষক হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে (১৮৬৭-১৯৫৯) দীর্ঘ আঠাশ বছর ধরে বঙ্গীয় শব্দকোষ নির্মাণে নিয়োজিত থাকতে দেখে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন ‘পুস্তক-স্তূপের মধ্যে, অক্লান্ত-কর্মী জ্ঞান-তপস্বী, দীর্ঘদেহ শীর্ণকায় এই ব্রাহ্মণ, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বৎসরের পর বৎসর, আপন মনে তাঁহার সঙ্কলন-কার্য্য করিয়া যাইতেছেন, নানা অভিধান হইতে ও বাঙ্গালা ও সংস্কৃত পুস্তক হইতে শব্দচয়ন ও প্রয়োগ উদ্ধার করিয়া লিখিয়া যাইতেছেন।

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৬ ০০:৪০

সার্ধশতবর্ষে স্মরণ আভিধানিক হরিচরণকে

শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব সংস্কৃত শিক্ষক হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে (১৮৬৭-১৯৫৯) দীর্ঘ আঠাশ বছর ধরে বঙ্গীয় শব্দকোষ নির্মাণে নিয়োজিত থাকতে দেখে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন ‘পুস্তক-স্তূপের মধ্যে, অক্লান্ত-কর্মী জ্ঞান-তপস্বী, দীর্ঘদেহ শীর্ণকায় এই ব্রাহ্মণ, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বৎসরের পর বৎসর, আপন মনে তাঁহার সঙ্কলন-কার্য্য করিয়া যাইতেছেন, নানা অভিধান হইতে ও বাঙ্গালা ও সংস্কৃত পুস্তক হইতে শব্দচয়ন ও প্রয়োগ উদ্ধার করিয়া লিখিয়া যাইতেছেন।... এই দৃশ্য বাস্তবিকই আমার চিত্তকে বিশেষভাবে মুগ্ধ করিত।’ বিজ্ঞানী সত্যেন বসু মনে করতেন, হরিচরণের দান বাঙালির কাছে ‘অপরিশোধনীয়’। রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাজ সম্পর্কে ‘এরূপ সর্ব্বাঙ্গ সম্পূর্ণ অভিধান বাংলায় নাই’ লেখা সত্ত্বেও (সঙ্গে তারই প্রতিলিপি) সে-অভিধান ছাপতে সাহস পায়নি কোনও বিদ্বোৎসাহী প্রকাশক বা প্রতিষ্ঠান, শেষে নিজের চেষ্টায় তা খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশ করেন হরিচরণ। ১৯৬৬-তে অবশ্য সাহিত্য অকাদেমি দু’খণ্ডে প্রকাশ করে সমগ্র অভিধানটি, তারও যেমন পঞ্চাশ বছর পূর্তি, তেমনই হরিচরণের সার্ধশতজন্মবর্ষ শুরু হচ্ছে তাঁর জন্মদিনে, ২৩ জুন। এই উপলক্ষে এ-বছরই কোরক প্রকাশ করেছে হরিচরণ (সম্পা: তাপস ভৌমিক), তাতে বাংলা শব্দচর্চার এই বিস্ময়-পুরুষটির (তাঁরই প্রতিকৃতি, অনুপ রায়-কৃত, বইটির প্রচ্ছদে) কর্মপদ্ধতি ও জীবনযাপনের অবয়ব অনেকটাই ধরা পড়েছে বিশিষ্ট জনের লেখনীতে। পাশাপাশি প্রস্তুত হয়েছে দুই বাংলা মিলিত ভাবে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মসার্ধশতবর্ষ কর্মসমিতি। সভাপতি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সহ-সভাপতি শঙ্খ ঘোষ, আনিসুজ্জামান, পবিত্র সরকার ও শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতীয় ভাষা পরিষদে ২৩ জুন সন্ধে সাড়ে ৬টায় উদ্বোধন, কর্মসমিতির সদস্যদের সঙ্গে থাকবেন অমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। সংগীতে হরিচরণ-আত্মীয়া মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রচনাপাঠে রত্না মিত্র। ২০১৭-র সার্ধশতবর্ষ পূর্তি উৎসবে এই কর্মসমিতির নেতৃত্বে প্রকাশিত হবে একটি ‘আভিধানিক স্মারক গ্রন্থ’, লিখছেন দুই বাংলার অভিধান সংকলনের প্রাজ্ঞ মানুষ, ক্রোড়পত্রে হরিচরণ-সহ তাঁর বঙ্গীয় শব্দকোষ বিষয়ক বিভিন্ন অপ্রকাশিত চিঠিপত্র। এই আয়োজন হরিচরণ-আত্মীয় স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেবাশিস মজুমদারের উদ্যোগে। হরিচরণের ছবি তাঁদেরই সৌজন্যে।

চিত্রনাট্য

তখন অন্ধ্রের এক টিভি চ্যানেলে যাঁরা বাঙালি ছিলেন তাঁদের অনেকেই সত্যজিৎ-ভক্ত, তাঁরাই কর্ণধার রামোজি রাও-কে ফেলুদা-র জনপ্রিয়তা জানিয়ে ছবি বানানোর প্রস্তাব দেন। বাঙালি মাত্রেই ফেলুদা-ভক্ত, ‘তবুও ফেলুদার গল্প নিয়ে সিনেমা বানানোর প্রযোজক কলকাতায় পাইনি। বাঙালি তো নয়ই। শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এলেন ঊষাকিরণ মুভিজের রামোজি রাও। যিনি বাংলা বোঝেন না, বাংলা জানেন না, ফেলুদার থেকে হাজার মাইল দূরে।’ সরস গদ্যে লিখেছেন সন্দীপ রায়, ‘পরিচালকের কথা’য়, ফেলুদা নিয়ে তাঁর বড় পর্দায় প্রথম কাজ ‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’র (২০০৩) চিত্রনাট্যের শুরুতে। নির্মল ধরের সম্পাদনায় ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন আর এভেনেল প্রেস-এর উদ্যোগে প্রকাশ পাচ্ছে চিত্রনাট্যটি, সঙ্গে ছবির বেশ কিছু স্থিরচিত্র ও ছবিটি নিয়ে সে সময়ে পত্রপত্রিকায় বেরনো যাবতীয় লেখালেখি। ২৪ জুন নন্দনে বিকেল ৫টায় প্রকাশ-অনুষ্ঠানে থাকবেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী, পরমব্রত ও সন্দীপ রায়। ডব্লিউ বি এফ জে এ-র সঙ্গে যুগ্ম আয়োজক নন্দন, অধিকর্তা যাদব মণ্ডলও উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানের পর দেখানো হবে ‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’ ছবিটি।

স্মৃতি সংসদ

বেতার সম্প্রচারে বাংলা ভাষার বাচিকশিল্পকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ঐতিহাসিক মর্যাদায়। প্রকাশভঙ্গি ও উচ্চারণ শৈলীতে গড়ে তুলেছিলেন এক অনন্য ঘরানা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের হৃদয়স্পর্শী পাঠ দুই বাংলার শ্রোতারা মনে রেখেছেন আজও। ১৯৭২ সালে পান ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান। বাংলা ভাষা রক্ষা সমিতি বা একুশে আন্দোলনেরও তিনি অন্যতম কাণ্ডারি। তাঁর মৃত্যুর পাঁচ বছর পরে গড়ে উঠেছে ‘দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতি সংসদ’। এ বার তাদেরই উদ্যোগে ২৩ জুন বাংলা আকাদেমি সভাঘরে, বিকেল সাড়ে ৫টায় এক অনুষ্ঠানে তাঁর নামাঙ্কিত স্মারক বক্তৃতা দেবেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, ‘স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে বাচিকশিল্পী গৌরী ঘোষকে। তাঁর সংকলিত আবৃত্তি অনুষ্ঠান ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ পরিবেশন করবেন তাঁর ছাত্রছাত্রীরা।

হালফিল ইউরোপ

একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে ইউরোপ, তার সমাজ-অর্থনীতি, সঙ্গে সংস্কৃতিও, সে সবই আস্তে আস্তে স্পষ্ট হয়ে উঠছে সেখানকার অধিবাসীদের ব্যক্তিগত জীবনে। এই হালফিল ইউরোপের চালচিত্র নিয়েই নন্দনে শুরু হচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চলচ্চিত্র উৎসব। ২৪ জুন সন্ধে ৬টায় উদ্বোধন করবেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, অতিথি ব্রাত্য বসু সহ আরও বিশিষ্ট জন, সভাপতিত্বে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি শ্যামল সেন। সম্মিলিত উদ্যোগে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ, সিনে সেন্ট্রাল, নন্দন, ব্রিটিশ কাউন্সিল ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। নন্দনে ৩০ জুন অবধি, প্রতিদিন তিনটি করে ছবি; ১-২ জুলাই ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রেক্ষাগৃহে। উদ্বোধনী ছবি জার্মানির ‘জ্যাক’। অন্য দিকে উত্তর-পূর্ব ভারতের অধিবাসীদের অজানা জীবন, তাঁদের দিনযাপনের সঙ্গে জড়ানো নয়নাভিরাম নিসর্গ, এ সব নিয়েই ফিল্মস ডিভিশনের একগুচ্ছ ছবি, নন্দনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ২৩ জুন সন্ধে ৬টায়: ‘টেলিং টেলস ফ্রম নর্থ ইস্ট’।

আর্যভ

চার বছর আগে বিষ্ণুপুর থেকে ট্রেনে ফেরার পথে চিরঞ্জীব, অভিষেক ও ভাস্করের পরিকল্পনায় তৈরি হয়েছিল ‘আর্যভ’। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বিনোদনমূলক ক্ষেত্রে দুঃস্থদের সহায়তাই এদের অন্যতম লক্ষ্য। তাই, যখন সচেতনার অভাবে বেড়ে চলেছে মারণব্যাধি থ্যালাসেমিয়া, তখন সেই রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে ওরা। বছর দুই আগে আর্যভ-র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সু-গায়ক অভিষেকের মৃত্যু হয়। এ বার, তাঁর স্মৃতিতে এবং থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের সাহায্যার্থে ২৫ জুন রবীন্দ্রসদনে বিকেল সাড়ে ৫টায় এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হবে অভিষেকের দুটো সিডি। দেখানো হবে আর্যভ-র প্রযোজনায় চির়ঞ্জীব গোস্বামীর নাটক ‘হারিয়ে পাওয়া-The Musical’। সংগীত, আবহ ও নির্দেশনায় অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়। প্রধান উপদেষ্টা ও অভিনয়ে সব্যসাচী চক্রবর্তী। শেষ পর্বে ‘কিছু কথা কিছু গান’ পরিবেশন করবেন শ্রীকান্ত আচার্য, লোপামুদ্রা মিত্র ও শ্রীজাত।

তিন দশক

১৯৮২। রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির রবীন্দ্রজন্মোৎসব। নতুন শিল্পী দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের গান ‘ও চাঁদ চোখের জলের’ অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করল। তার পর গান্ধর্বী-র রবীন্দ্রজন্মোৎসবে সুবিনয় রায়ের আশীর্বাদ প্রাপ্তি। এই ভাবেই এগিয়ে চলা। গান শেখা গীতবিতান ও রবীন্দ্র ভারতীতে। ব্যক্তিগত ভাবে প্রফুল্লকুমার দাস, মায়া সেনের কাছে। ইন্দিরার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পেলেন সুভাষ চৌধুরী, প্রসূন দাশগুপ্তের তালিম। মায়া সেনের কাছে পিএইচ ডি, বিষয়: ‘ভাঙা গানে রবীন্দ্রনাথের স্বকীয়তা’। কিছু দিন আংশিক সময়ের প্রভাষক রূপে কাজ রবীন্দ্রভারতীতে। ইতিমধ্যে পরিণয়সূত্রে ‘মুখোপাধ্যায়’ থেকে ‘সোম’। ১৯৯২-তে রবীন্দ্রগানের প্রথম ক্যাসেট এইচ এম ভি-তে, তার পর ক্যাসেট-সিডি আশা অডিয়ো, প্রাইম, ভাবনা, মিউজিক ২০০০, অনন্য মিউজিক থেকে। দেবব্রত বিশ্বাস স্মৃতি সম্মান এবং সমতট পুরস্কারপ্রাপ্ত দেবারতি বেতার-দূরদর্শনের নিয়মিত শিল্পী। গান শুনিয়েছেন দেশে-বিদেশে। দেখতে দেখতে তিনটে দশক পেরিয়ে গেল। সেই উপলক্ষে উতল হাওয়ার আয়োজনে ২৩ জুন রবীন্দ্রসদনে সন্ধে ৬টায় দেবারতির গান, সঙ্গে স্বপন সোম ও দেবারতিরই হাতেগড়া ‘বৈতালিক’। আলাপচারিতায় উল্লাস চট্টোপাধ্যায়। অতিথি সুমিত্রা সেন।

সংগীতগুণী

আলাপে ভৈরবী রাগিণীর রূপটি যেই মূর্তি ধরে উঠেছে, ওস্তাদ তখনই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। অল্পক্ষণ চোখ বুজে চুপ করে থেকে আবার শুরু করলেন সেই আলাপ। শ্রোতারা নিঃশব্দে বসে। সকলেরই মনের মধ্যে একটা শিহরন। হঠাৎ বাইরে রাস্তায় মোটরগাড়ির হর্নের বিকট ও বেসুরো শব্দে সকলে চমকে উঠলেন। সঙ্গে সঙ্গে ওস্তাদ হাত ঝাড়া দিয়ে হতাশ কাতর স্বরে বলে উঠলেন, ‘যাঃ, সব চলে গেল।’ তার পরে আবার বাজনা শুরু হতেই বোঝা গেল, বাজনার আগের রসটি যেন আর নেই। এই ভাবেই বড় ওস্তাদের বাজনার মধ্যে ভিন্ন রূপকে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রবাদপ্রতিম সংগীতগুণী শান্তিদেব ঘোষ তাঁর সংগীত-সাধক আলাউদ্দিন খাঁ বইটিতে (ভূমিকা: সর্বানন্দ চৌধুরী, প্রকাশক: সূত্রধর)। বইটি বিশ্ব সংগীত দিবস উপলক্ষে ২১ জুন সন্ধে সাড়ে ৬টায় অবনীন্দ্র সভাগৃহে প্রকাশিত হবে। উপস্থিত থাকবেন সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও মিতা নাগ। অনুষ্ঠানে সুশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সংগ্রহ থেকে শোনা যাবে আলাউদ্দিন খাঁ এবং শান্তিদেব ঘোষের দুর্লভ সংগীত।

স্মারক বক্তৃতা

তিনি নিজেকে ব্যাপ্ত করেছিলেন নিজস্ব গবেষণার বাইরে, সমাজের নানা স্তরে। কৃষিক্ষেত্রে জিন প্রযুক্তি, বিপন্ন ভূ-জীববৈচিত্র, কেমিক্যাল হাবের দূষণ, বাজার অর্থনীতির আগ্রাসন— এ সবই ছিল তাঁর গবেষণার বিষয়। সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স-এর শিক্ষক অভীকান্তি দত্তমজুমদার বলতেন, আমাদের খাদ্যশৃঙ্খলে বিষ ঢুকেছে বলেই পঞ্জাবে এত মানুষের ক্যান্সার। আর এই মারণরোগই তাঁর জীবন কেড়ে নিয়েছিল আড়াই বছর আগে। প্রয়াত গবেষককে স্মরণ করতে ফ্রেন্ডস অব ডেমোক্রেসি আয়োজন করেছে তাঁরই নামাঙ্কিত স্মারক বক্তৃতামালার। ২১ জুন বিকেল ৫-৮টা, বাংলা আকাদেমিতে। ‘বাংলায় অন্ত্যজ উত্থান: বাস্তব না কল্পনা?’ এবং ‘বাংলার অর্থনীতি: সেকাল থেকে একাল’ বিষয়ে বলবেন যথাক্রমে মনোরঞ্জন ব্যাপারী ও অচিন চক্রবর্তী। সঞ্চালনায় পরিবেশবিদ কল্যাণ রুদ্র।

কাশীর ঘাট

কাশীর গঙ্গার ধারে এক সাধুর আশ্রমে তাঁর হাতেখড়ি হয়েছিল পাঁচ বছর বয়সে। সেই থেকে এখানকার গঙ্গা এবং তার ঘাটগুলি জায়গা করে নিয়েছিল লেখকের মনে। চাকরিজীবনে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা অক্ষুণ্ণ ছিল। শ্যামলকান্তি চক্রবর্তী এ বারে সেই কাজ নিয়েই তৈরি করলেন ঘাটস অব বারানসী (প্রিটোনিয়া)। পাঁচটি পরিচ্ছেদে বারাণসীর ইতিবৃত্ত, রয়েছে সেই আশিটি ঘাটের কথা— আধফালি চাঁদের মতো গঙ্গার তিন মাইল জুড়ে যা বিস্তৃত। আঠেরো-উনিশ শতকের দেশিবিদেশি চিত্রকরদের আঁকা ঘাটের ছবি সংযোজিত হয়েছে বইটিতে। সঙ্গে জেমস প্রিন্সেপের আঁকা মণিকর্ণিকা ঘাটের ছবি।

পথের সন্ধান

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যেন তাঁর আশৈশব আত্মীয়তা। গ্রামের পথ ধরে বা গঙ্গার পাড় দিয়ে যখন সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়াতেন তখন থেকেই। সম্ভবত সে জন্যেই সিক্তা বিশ্বাসের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের কাহিনিচিত্র ‘পথের সন্ধান’-এর অবলম্বন বিভূতিভূষণের গল্প ‘অনুসন্ধান’। সিক্তা নদিয়ার মেয়ে, চাকদহে জন্ম। বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী ছিলেন, বরাবর ভেবে এসেছেন, প্রথম ছবি করবেন বিভূতিভূষণকে ভর করেই। ‘সাদাকালোয় করেছি গোটা ছবিটা সেই সময়টাকে ধরবার জন্য। বিভূতিভূষণের জগৎ... সেখানে এক দরিদ্র শিক্ষক তাঁর জীবনের বহু বাধাবিপত্তি আর অস্বচ্ছন্দ বেঁচে-থাকাকে অগ্রাহ্য করে নিজের সঙ্কল্পে অবিচল থাকেন, এই নিয়েই আমার ছবি।’ বলতে-বলতে সিক্তা উল্লেখ করেন শিক্ষকের ভূমিকায় শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের কথা, ‘হারবার্ট’-এর পর আবার তাঁর চ্যালেঞ্জিং চরিত্র। শিক্ষকের স্ত্রীর চরিত্রে স্বয়ং সিক্তা— সাহিত্যের পাঠ নিতে নিতেই অভিনয়ের জগতে প্রবেশ তাঁর। অভিনয় করেছেন বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘শিল্পান্তর’ বা স্বপন সাহার ‘অনাম্নী অঙ্গনা’র মতো ছবিতেও। ‘ক্যামেরার সামনে প্রথম দাঁড়ানোর দিন থেকেই পরিচালনার কাজ আমাকে অসম্ভব টানত।’ প্রবল সে আকাঙ্ক্ষাই তাঁকে করে তোলে তথ্যচিত্রকার। প্রেমেন্দ্র মিত্র, বুদ্ধদেব বসু, আঠারো শতকের বৈষ্ণব পদকর্তা, চারণকবি মুকুন্দ দাস, পূর্ব ভারতের লোকনাট্য, উত্তর পূর্ব ভারতের সংস্কৃতি— বিবিধ বিষয়। ‘পথের সন্ধান’, ইতিমধ্যেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উৎসবে আমন্ত্রিত। কলকাতায় মুক্তি ২৪ জুন, নন্দন-সহ বিভিন্ন মাল্টিপ্লেক্সে।

নাট্যকর্মী

রুদ্র তোমার দারুণ দীপ্তি এসেছে দুয়ার ভেদিয়া... এই আবৃত্তি শুনে বাংলা থিয়েটারের শেষ ‘বড়বাবু’ অর্থাৎ শিশিরকুমার ভাদুড়ী তাঁকে বলেছিলেন, ‘তোমার হবে। আসা যাওয়া করো। খুব ভাল করে রিহার্সাল শুনবে। যে পার্টটার রিহার্সাল হবে, ভাববে সেই পার্টই তোমার।’ ১৯৫২-য় শিশিরকুমারের সম্প্রদায়ে অভিনেতা হিসেবে যোগ দেন অনিল মুখোপাধ্যায়। জন্ম ১৯২৪ সালে, মুর্শিদাবাদে। পড়াশোনা ও জীবিকার টানে কলকাতায়। ছেলেবেলা থেকে অদম্য অভিনয় স্পৃহা, যা জাগিয়ে তুলেছিলেন বাবা অবনীধর মুখোপাধ্যায়। কলেজেই বামপন্থায় জড়িয়ে পড়া, সঙ্গে গণনাট্য সঙ্ঘের প্রতি আকর্ষণ। ক্যান্সার আক্রান্ত নবতিপর অভিনেতা-নাট্যকর্মী বলছিলেন, ‘আমি তখন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্র; ১৯৪৪ সালে যখন গণনাট্য সঙ্ঘ বহরমপুরে নবান্ন-র অভিনয় করে ম্যারাপ বাঁধা স্টেজে, নানা গোলমাল ও হট্টগোলের মধ্যে নাটক তেমন জমেনি ঠিকই, কিন্তু পার্টির নাটক বলে আমরা কী রকম মুগ্ধ হয়েছিলাম!’ ১৯৫২-’৫৬ পর্যন্ত শ্রীরঙ্গম মঞ্চে ও তার পর ’৫৯ পর্যন্ত আমন্ত্রিত অভিনয়ে শিশিরকুমার ভাদুড়ীর সহ-অভিনেতা হিসেবে সমস্ত নাটকেই অভিনয় করেছেন। পেশাদার অভিনেতা হিসেবে রঙ্গনায় ১৯৭৪-’৭৭ ছিলেন। দীর্ঘদিন অভিনয় থেকে দূরে থাকার পরে নব্বইয়ের দশকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ‘কলাপী’ দল গড়ে প্রায় এক দশকের বেশি অপেশাদার অভিনয় করেছেন। সম্প্রতি, তাঁর লেখা নানা ঘটনাসমৃদ্ধ গ্রন্থ বাংলা থিয়েটার ও নাট্যচার্য শিশিরকুমার অনুষ্টুপের উদ্যোগে প্রকাশিত হল।

Kolkatar Karcha Karcha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy