Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

দশক পেরিয়ে দাদাসাহেব ফালকে-র পথে ১৯১৭-য় সেই নির্বাক যুগেই নিত্যবোধ বিদ্যারত্নের চিত্রনাট্যে রুস্তমজি ধোতিওয়ালার নির্মাণে স্বীকৃতি পেল বাংলার প্রথম কাহিনিচিত্র ‘সত্যবাদী রাজা হরিশ্চন্দ্র’।

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

চলচ্চিত্রে মঞ্চগান

সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, ‘থিয়েটারের পথ ধরেই বাংলা ছবিতে গানের প্রবেশ’। বিশ শতকের শুরুতেই নাচ-গানের সুরে ভরপুর ‘আলিবাবা’-র কথাহীন চিত্রায়ন মঞ্চের সরাসরি অনুগামী বলে ‘সিনেমা-জনক’-এর স্বীকৃতি মেলেনি হীরালাল সেনের। দশক পেরিয়ে দাদাসাহেব ফালকে-র পথে ১৯১৭-য় সেই নির্বাক যুগেই নিত্যবোধ বিদ্যারত্নের চিত্রনাট্যে রুস্তমজি ধোতিওয়ালার নির্মাণে স্বীকৃতি পেল বাংলার প্রথম কাহিনিচিত্র ‘সত্যবাদী রাজা হরিশ্চন্দ্র’। ছবির শেষে মিলনমন্ত্রে বেজে ওঠে কবি-নাট্যকার মনমোহন বসুর সাবেক মঞ্চনাট্য ‘হরিশ্চন্দ্র’-এর গানের সুর, ‘হলো সুমঙ্গল, বলো জয় জয় রে’। নীরব-অবসানে সবাক বা ‘টকি’-র গোড়াতেই ‘জোর বরাত’-এর নায়িকা কাননবালা গাইলেন পূর্ব-অভিনীত একই নাটকের গান, ‘কেন দেখা দিলে, কেন বা আঁকিলে’। নিউ থিয়েটার্সের সাড়া-জাগানো ‘চণ্ডীদাস’ ছবিতে কৃষ্ণচন্দ্র দে-র কণ্ঠে গীত হল সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের মঞ্চনাট্য ‘স্বয়ম্বরা’র গান, ‘ফিরে চলো আপন ঘরে’। সেদিন থেকে আজ— শতাব্দী পরিক্রমায়— বারবার তেমনই অনুসরণ, তেমনই পুনর্নির্মাণ। সিনেমার এমনই বহু অশ্রুত, অজ্ঞাত তথ্যস্রোতে মঞ্চগানের পূর্বাপর ইতিহাস ঘিরে দেবজিত্‌ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা ও নির্মাণ ‘মঞ্চ-গাথায় ছায়া-ছবি’। গানে দেবজিত্‌ ও ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভাষ্যে বাংলাদেশের সামিউল ইসলাম পোলাক। পরিবেশিত হবে অ্যাকাডেমি থিয়েটারের তেত্রিশ বছর পেরনো উৎসবে ৬ ডিসেম্বর সন্ধে সাড়ে ছ’টায় অ্যাকাডেমিতে। পাশাপাশি সিনেমানির্ভর থিয়েটারি পোস্টার-বুকলেট-রেকর্ডের প্রদর্শনী ৭-৮ ডিসেম্বর হাওড়ার ইন্দিরা গ্যালারিতে রোজ ২-৭টা। সঙ্গে ‘চণ্ডীদাস’ ছবিতে দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও উমাশশী।

শেষ রাজা

‘দ্য লাস্ট কিং ইন ইন্ডিয়া’। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ রোজি লিউলিন জোনস-এর লেখা, নবাব ওয়াজিদ আলি শা-কে নিয়ে বইটির নাম এমন কেন? ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে আয়োজিত সাম্প্রতিক এক সভায় রোজি ব্যাখ্যা দিলেন, বাহাদুর শা জাফর মুঘল সম্রাট, ‘এমপারার’। তাই তাঁকে ‘লাস্ট এমপারার’ বলা যেতে পারে, কিং নয়। তা ছাড়া ওয়াজিদ আলি কোম্পানির তৈরি করা ‘রাজা’। তাই বইটিতে ওয়াজিদ আলিকে (সঙ্গের ছবি বই থেকে) এই আখ্যা দেওয়া হয়েছে। দুর্লভ নানা ছবি দেখিয়ে সে দিন ওয়াজিদ আলির জীবন আলোচনা করলেন রোজি, সভাপতিত্ব করলেন ওয়াজিদ আলির উত্তরসূরি শাহেনশাহ মির্জা। জীবনের শেষ ত্রিশ বছর তো কলকাতাতেই কাটিয়েছেন রাজ্যহারা ওয়াজিদ আলি। ১৯৭২ সালে প্রথম লখনউ গিয়েই শহরটিকে ভালবেসে ফেলেন রোজি। লখনউ নিয়ে একাধিক বই লিখেছেন, সম্পাদনা করেছেন। ১৮৫৭-র সংগ্রাম নিয়ে তাঁর সম্পাদিত একটি বইও সদ্য উদ্বোধন হল কলকাতায়।

নৃত্যোৎসব

যখন তাঁর বাবা আর মা আলমোড়ার পর কলকাতায় নাচের স্কুলের সূচনা করেন, তখন তাঁর বয়স সবে দশ। ‘উদয়শঙ্কর ইন্ডিয়া কালচার সেন্টার’-এই মমতাশঙ্করের নাচ শেখা। ‘এর আগে আমি কখনও নাচ শিখিনি। বাবা আর মাকে নাচতে দেখতাম। দেখে দেখে আমিও নাচতাম।’ স্মৃতিতে ফিরছিলেন শিল্পী। ১৯৭৭ সালে মমতাশঙ্করের স্বামী চন্দ্রোদয় নাচের গ্রুপ ‘স্ট্র্যাডিভেরিয়াস’ তৈরি করেন। ১৯৭৮ সালে বিয়ের পর মমতাশঙ্কর যোগ দেন তাতেই। পরে নাম হয় ‘মমতাশঙ্কর ব্যালে ট্রুপ’, তার পর ‘মমতাশঙ্কর ডান্স কোম্পানি’। উদয়শঙ্করের (সঙ্গের ছবি) ১১৭তম জন্মবর্ষ উপলক্ষে ‘মমতাশঙ্কর ডান্স কোম্পানি’ ৮-৯ ডিসেম্বর, সন্ধে ৬টায় ইস্টার্ন জোনাল কালচারাল সেন্টার-এ আয়োজন করেছে নৃত্যোৎসব। প্রথম দিন শুক্লা দাসের পরিচালনায় উদয়শঙ্করকে নিয়ে তথ্যচিত্র ‘ডান্সিং ডিভা’, মমতাশঙ্করের পরিচালনায় নৃত্যনাট্য ‘হোরিখেলা’ ও শ্যামল মল্লিকের পরিচালনায় ‘হৃদমাঝারে’। দ্বিতীয় দিন মমতাশঙ্কর পরিচালিত ‘শবরী’ ও কোহিনুর সেন বরাট পরিচালিত ‘রাবণ’ নৃত্যনাট্য।

বিদেশ থেকে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলা থিয়েটারের চর্চা এখন বেশ ছড়িয়ে পড়েছে। তারই মধ্যে মিশিগান শহরের ‘মিলিটস’ নজর কেড়েছে তাদের বাংলা নাটকের উৎসবের সংগঠনে। এ বারে ‘মিলিটস’-এর সদস্যরা কলকাতায় আসছেন তাঁদের নাটক নিয়ে। বিদেশি নাটকের ছায়ায় গড়ে ওঠা তাঁদের নাটকটির নাম ‘রণাঙ্গন’। নির্দেশনা ও অভিনয়ে আছেন মালা চক্রবর্তী, যিনি এক সময়ে কলকাতার একটি প্রধান নাট্যদলে নিয়মিত অভিনয় করতেন। মুখ্য ভূমিকায় আনন্দ সেন, যিনি দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে বসে বাংলা নাটক, শ্রুতিনাটক, আবৃত্তি ও সাহিত্য চর্চায় নিজেকে বিশিষ্ট করে তুলেছেন। নাট্যকার বিশ্বদীপ চক্রবর্তীও গল্পলেখক হিসাবে নজর কেড়েছেন। ১০ ডিসেম্বর দুপুর ২.৪৫-এ নাটকটি প্রযোজিত হবে অ্যাকাডেমি মঞ্চে। সঙ্গে থাকবে থিয়েটার ওয়ার্কশপের রবীন্দ্রনাটিকা ‘বশীকরণ’। উপস্থাপনায় থিয়েটার ওয়ার্কশপ ও রংরূপ।

অমিতার গল্প

পাখির মতো খোলা গলায় নাকি গাইতে পারতেন তিনি। দিনেন্দ্রনাথের গোড়ার দিকের অন্যতম ছাত্রী অমিতা সেন আশ্রমে ছিলেন সকলের খুকু। আশ্রমের পাঠ সেরে সিটি কলেজ থেকে ১৯৩৪-এ সংস্কৃতে স্নাতক। বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাপ সহাধ্যায়ী শম্ভুনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। প্রণয়ে বাঁধা পড়েন অমিতা, তার পর থেকেই বদলাতে থাকে তাঁর জীবনের ধারা। রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু গান রেকর্ড করেন। কলকাতার স্কুলের চাকরি ছেড়ে কবির ডাকে যোগ দেন সংগীতভবনে শিক্ষকতায়। হঠাৎ করে ছেড়েও দেন সে কাজ। কবি আর অমিতার সম্পর্কে ঘনিয়ে ওঠে তিক্ততা। অমিতার যাবতীয় রেকর্ড প্রচারে জারি হয় নিষেধাজ্ঞা। ১৯৪০-এ মাত্র ২৬ বছর বয়সে দুরারোগ্য অসুখে ঢাকায় প্রয়াত হন অমিতা। তাঁর জীবন নিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন প্রগতি সংহার। তাঁকে নিয়ে গানে-কথায় এক মঞ্চ-উপস্থাপনার আয়োজন করেছে পুনশ্চ— ‘অমিতার গল্প’।
৯ ডিসেম্বর সন্ধে ৬টায় রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবনে। পরিকল্পনায় কৃষ্ণেন্দু সেনগুপ্ত।

অন্য সুচিত্রা

এই প্রথম খুলে গেল সুচিত্রা মিত্রের ডায়েরির পাতা। সতেরোর সুচিত্রা তখন শান্তিনিকেতন আশ্রমে। লিখছেন, ‘এই পৃথিবীতে একলা এসেছি, একলাই যাব’। আবার দিনান্তবেলায় লিখছেন, ‘প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে অর্থের বিনিময়ে গানকে বিক্রি করে যেতে বাধ্য হলাম।’ সুচিত্রার লিখন পাতায় পাতায় বিস্ময় সৃষ্টি করে আমার না বলা কথা গ্রন্থে। আবার রবীন্দ্রনাথের বলয়েই রবীন্দ্র নৃত্যনাট্যকে ভেঙেচুরে নিজের মতো গড়লেন সুচিত্রা। ছিন্নপাতার ভিন্ন সুচিত্রা গ্রন্থটি তারই পরিচয় বহন করে। সুচিত্রা মিত্র আসলে কে? রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী? শিক্ষক? বন্ধু? মা? সুচিত্রা সংকলন গ্রন্থে তারই কথা। সুচিত্রা মিত্রের অচেনা জগৎ তিনটি পৃথক বইয়ের মাধ্যমে প্রকাশিত হবে পাঠকের সামনে, কারিগরের উদ্যোগে, আজ ৪ ডিসেম্বর জ্ঞানমঞ্চে, সন্ধে ৬টায়। উপস্থিত থাকবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, আলপনা রায়, সুবীর মিত্র, প্রমিতা মল্লিক, শ্রীনন্দা মুখোপাধ্যায়, কুণাল মিত্র। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে থাকবে রবীন্দ্রসংগীত।

স্মারক ফলক

উনিশ শতকের ত্রিশের দশকে বিশ্ব জুড়ে ক্রীতদাস প্রথা অবলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে বিদেশের কৃষি-সমৃদ্ধ এলাকায় চাহিদা বাড়তে থাকল চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকের। ঔপনিবেশিক ভারত থেকে শ্রমিকরা দল বেঁধে পাড়ি জমাতে লাগলেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ঘূর্ণাবর্তে। ল্যাটিন আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূলে ডাচ উপনিবেশ সুরিনামের উদ্দেশে বিহার-উত্তরপ্রদেশের শ্রমিকদের প্রথম তরী ভেসেছিল ১৮৭৩ সালে, এই কলকাতা বন্দর থেকেই। আখ চাষের জন্য এঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বিদেশের মাটিতে ক্রীতদাসের বিকল্প হিসাবে এই শ্রমিকেরা গৃহীত হলেও পরবর্তী কালে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে এঁদের ভূমিকা অপরিসীম। এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণ করে ২০১৫ সালে সুরিনামের রাজধানী পারামারিবো-র ‘মাই বাপ’ স্মারকের আদলে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয় কলকাতা বন্দরের সুরিনাম ঘাটে, এলাকায় যা বালুঘাট নামে পরিচিত। গত ২৫ নভেম্বর সুরিনামের ৪৩তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সুরিনাম ঘাটে বসল একটি ডাচ ফলক। উপস্থিত ছিলেন ভারতের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর, ভারতে সুরিনামের রাষ্ট্রদূত আশনা কানহাই, ভারতে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আলফোন্সাস স্টোয়েলিঙ্গা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সিন্থিয়া ম্যাকলিওডের ঐতিহাসিক উপন্যাস ইট হ্যাপেনড অ্যাট মারিনবার্গ, সুরিনাম (মূল ডাচ থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন গেরাল্ড আর মেট্টাম) বিতরিত হয়।

মার্গসংগীত

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা তথা ভারতের মার্গসংগীত সাধনায় বীরেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (১৯০৩-১৯৭৫) গুরুত্বপূর্ণ একটি নাম। গৌরীপুরের এই বহুমুখী সংগীতজ্ঞ মানুষটি প্রখ্যাত রবাবিয়া মুহাম্মদ আলি খানসহ বহু প্রথিতযশা উস্তাদের কাছে সংগীতের জ্ঞান লাভ করেছিলেন। ছিলেন বিচিত্রবিহারী লেখকও, তাঁর নিজের লেখা ও সংগ্রহে ধরা আছে উনিশ ও বিশ শতকের বাংলায় হিন্দুস্থানি মার্গসংগীত চর্চার ইতিহাস। সেই সব বিপুল লেখালিখি কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস-কে দিয়েছিলেন বীরেন্দ্র-কন্যা রানি রায়। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক ও বেঙ্গালুরুর আই এফ এ-এর সহযোগিতায়, ডিজিটাইজড সেই সংগ্রহ নিয়ে একটি প্রদর্শনী করছে সেন্টার। থাকছে বীরেন্দ্রকিশোরের বই, জার্নাল, হাতে-লেখা নোট, স্বরলিপি, সাংগীতিক রচনা, রেডিয়ো রেকর্ডিং। ৬-৯ ডিসেম্বর, ১০ লেক টেরেস-এর যদুনাথ ভবন মিউজিয়াম অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টারে চলবে প্রদর্শনী।

প্রয়াণ

গণনাট্য আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় তাঁর মনে প্রশ্ন ছিল যে সাধারণের সংগ্রামে নাটক গান নৃত্য কী ভাবে জায়গা করে নেবে। রাজ্য গণনাট্য সংঘের সম্পাদক হিসাবে ৪৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছিলেন শিশির সেন। ‘নীলদর্পণ’, ‘সংক্রান্তি’, ‘নৌকাডুবি’ ইত্যাদি নাটকে অভিনয় করেন। ‘বিসর্জন’ নাটকে রঘুপতির ভূমিকায় অভিনয় ছাড়া পরিচালনাও করেন। একাধিক যাত্রাও পরিচালনা করেছেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে ‘হারানের নাতজামাই’-সহ বেশ কিছু নাটক রচনা করেন। অনুবাদও করেছেন বিদেশি নাটকের। ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘ ও পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী ও লোকসংস্কৃতি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা-সংগঠক। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন আকাদেমির সদস্য ছিলেন। জন্ম ও-পার বাংলার নড়াইল, অকৃতদার মানুষটি ছিয়াশি বছর বয়সে ২২ নভেম্বর প্রয়াত হলেন।

নবতিপর

হালকা শীত পড়তেই কলকাতায় শুরু হয়ে গিয়েছে নানা মেলা-পার্বণ। এরই মধ্যে অভিনব ও ব্যতিক্রমী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ‘কলকাতা কালচারাল সেন্টার’। ১০ ডিসেম্বর বিকেল চারটেয় কলকাতা প্রেস ক্লাব সভাঘরে শহরের নব্বই-উত্তীর্ণ কয়েক জন নাগরিক ‘পুরোনো সেই দিনের কথা’ শিরোনামে শোনাবেন ফেলে আসা জীবনের কথা। থাকছেন অমর পাল, জলিমোহন কল, রমাপ্রসাদ দে, সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সরোজমোহন মিত্র, বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিয় চট্টোপাধ্যায়, দিলীপকুমার রায় প্রমুখ অনেকেই। তাঁদের সংবর্ধিত করবেন অনুষ্ঠানের সভাপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়। নবতিপরদের মিলনোৎসবে গান শোনাবেন ৯৫ বছর বয়সি সন্তোষ চন্দ।

বাউল

গুরু সনাতন দাস বাবাজিকে (বাউল) একবার প্রশ্ন করেছিলাম, ‘মনের মানুষ’কে? ওঁর চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকাতে বলে কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞাসা করলেন, কী দেখতে পেলে? আমি ‘নিজেকে’ উত্তর দিতেই বললেন এইটাই হল ‘মনের মানুষ’, স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন পার্বতী দাস বাউল। পিতৃদত্ত নাম মৌসুমি পাড়িয়াল। ট্রেনে অন্ধ বাউলের গান শুনে মোহিত হন। শান্তিনিকেতন কলাভবনে ভিজুয়াল আর্ট নিয়ে পড়াশোনার সময় ফুলমালা দাসীর কাছে বাউল গানের পাঠ ও তাঁর পরামর্শেই সোনামুখীর সনাতন দাস বাউলের কাছে যাওয়া, পনেরো দিনের মাথায় দীক্ষা, সাত বছর পর গাওয়ার অনুমতি লাভ। পরে গুরু শশাঙ্ক গোঁসাই বাউলের সান্নিধ্যে আসা। এহেন পার্বতী, বাউল গানকে উচ্চ মার্গে উন্নীত করে গুরুর আদেশে বিশ্বের সর্বত্র পৌঁছে দিতে আজ পরিব্রাজক। বাউল জীবনের সহজ সাধারণ বেঁচে থাকা আর গভীর সাধনায় মগ্ন আজও একতারাটিই তাঁর সম্বল। মাটিতে মাদুরে শয়ন ও অত্যন্ত সাধারণ ভাত ডাল আহারে দিন গুজরান। কেরলের তিরুঅনন্তপুরমের কাছে নেদুমঙ্গদে ‘একতারা বাউল সংগীত কলারি’-তে ভবিষ্যতের বাউল তৈরিতে ব্রতী, দেশে বিদেশে বহু কনসার্টে প্রাপ্ত অর্থে বিশ্বের বাউল সম্প্রদায় ও বাউল অনুরাগীদের মিলনক্ষেত্র রূপে প্রান্তিকের কাছে কোপাইয়ের ধারে চার একর জমিতে ‘সনাতন সিদ্ধাশ্রম’ গড়ার কাজে ব্যস্ত বাউল ফিরে গেলেন শান্তিনিকেতন হয়ে বিশ্বের অন্য কোনও প্রান্তে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkatar Korcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE