বাংলা সাহিত্যে সমুদ্র, দ্বীপ, নাবিক-জীবন নিয়ে লেখায় তিনিই পথিকৃৎ। নীলসিন্ধু, জলকন্যার মন, স্বাতী নক্ষত্রের জল-এর মতো উপন্যাসে, ‘মৎস্যকন্যা’, ‘সাগর-বলাকা’র মতো ছোটগল্পে শুনিয়েছেন সমুদ্র কল্লোল। শুধু কি তাই, শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯২০-৯৯) দক্ষিণ ভারতীয় জনজীবনের কথা লিখেছেন তাঁর জনপদবধূ, অস্তি গোদাবরী তীরে উপন্যাসে। কলকাতার পটভূমিতে লিখেছেন একাধিক উপন্যাস। আবার নাট্যদেউলের বিনোদিনী তাঁর অন্যতম গবেষণাধর্মী উপন্যাস। বন্দরে বন্দরে উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন বঙ্কিম পুরস্কার। কিশোরদের গল্পেও ছিলেন সমান পারদর্শী। ভারতের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে তাঁর লেখা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ৬ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মশতবর্ষের সূচনা উপলক্ষে জীবনানন্দ সভাঘরে একটি সাহিত্যসভার আয়োজন করেছে ‘শচীন্দ্রনাথ সাহিত্য সংসদ’। প্রকাশিত হবে ‘শিলালিপি’ পত্রিকার একটি বিশেষ সংখ্যা।
কবির শতবর্ষ
‘‘সে রয়েছে বুকের মধ্যে, আদ্যিকালের মানিক/ আমার মনুষ্যত্ব।’’— ‘গান্ধিজি’ কবিতার দু’টি পঙ্ক্তি, তাঁর দেড়শো বছরে বড়ই প্রাসঙ্গিক। লেখকেরও শততম জন্মদিন আজ ২ সেপ্টেম্বর— কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯২০-১৯৮৫)। ঢাকা-বিক্রমপুরে জন্মানো মানুষটি বহন করতেন সারা দুনিয়ার বিপন্ন মানুষের বেদনা, যুক্ত ছিলেন আধুনিক কবিতার আন্দোলনে, সম্মানিত হন রবীন্দ্র পুরস্কারে। ‘‘তাঁর কবিতা তীক্ষ্ণ হয়ে উঠছে বিদ্রুপে, কখনও বা ঝল্সে উঠছে ক্রোধে।’’ লিখেছেন সব্যসাচী দেব, আজ রোটারি সদনে সন্ধে ৬টায় উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন তিনিই। আছে কবিতাপাঠ, তাঁর রচিত ও সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থাদির শতবর্ষ-সংস্করণ প্রকাশ। স্মারক বক্তৃতায় জহর সেন মজুমদার। গানে বিনয় চক্রবর্তী প্রতুল মুখোপাধ্যায়। আয়োজক বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শতবর্ষ উদ্যাপন কমিটি।
মঞ্চে সাজাহান
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘সাজাহান’ (১৯০৯) কালজয়ী নাটক। একশো বছর ধরে এর কত-না মঞ্চায়ন। প্রধান প্রধান চরিত্রে প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এক এক সময় নাটকের অভিমুখই পাল্টে দিয়েছেন। যেমন সাজাহান চরিত্রে অহীন্দ্র চৌধুরী কি শিশির ভাদুড়ী, আবার আওরঙ্গজেব চরিত্রে দানীবাবু। আজও এ নাটক প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। নাটকের সংলাপে যেমন উঠে আসে ক্ষমতার লালসা আর চিরন্তন সত্যের সংঘাত, তেমনই নাটকটি দেখাতে চায় মানুষের স্বাধীনতা, ভালবাসা ও মর্যাদা বজায় রাখার উপরেই নির্ভর করে জাতির উন্নতি। থেস্পিয়ান্স নাট্যদল তাদের রজতজয়ন্তী বর্ষে পার্থ মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ করেছে ‘সাজাহান’। ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায় জ্ঞান মঞ্চে নাটকটির তৃতীয় অভিনয়।
একাধারে
একাধারে তিনি আইনজীবী, সমাজসেবী, নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা। সত্তর বছরের ‘যুবক’ অনিমেষকান্তি ঘোষাল ছোটবেলা থেকেই নাটকের সঙ্গে ওতপ্রোত। পূর্ণাঙ্গ ও একাঙ্ক মিলিয়ে কুড়িখানা নাটক লিখে ফেলেছেন। তাঁর নাটক ‘তস্কর’ ইন্দর সেনের পরিচালনায় কলকাতা দূরদর্শনে প্রদর্শিত হয়েছে। এ ছাড়া ‘হুল্লোড়’, ‘স্বপ্ন পিঞ্জর’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘রানী রাসমণি’ ও ‘শ্রীমতী বিনোদনী’ ইত্যাদি নাটকও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ১৯৮৩ সালে ক’জন নাট্য অনুরাগীকে নিয়ে ‘কলাক্রান্তি’ নাট্য সংস্থা তৈরি করেন। ২০১৮-য় কলাক্রান্তি ছোট নাটক প্রতিযোগিতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করে। তাঁর পরিচালনায় সম্প্রতি তপন থিয়েটারে ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ মঞ্চস্থ হল।
কারাকাহিনি
ত্রিশের দশকে কারাগারে থাকাকালীন মেয়ে ইন্দিরাকে লেখা এক চিঠিতে লেনিনের আন্দোলনের সঙ্গে গাঁধীজির নেতৃত্বে ভারতে গণজাগরণের তুলনা টানেন জওহরলাল নেহরু। বিশের দশকে ইয়েরবেড়া জেলে কর্তৃপক্ষ চরকা কেড়ে নেওয়ায়, সুতো কাটতে না দিলে খাওয়া বন্ধ করে দেবেন তিনি, গাঁধীজির এ-কথায় ভয় পেয়ে তাঁরা চরকাটি ফেরত দেন। এ ভাবেই নেতাজি, ভগৎ সিংহ, অরবিন্দ, নজরুল প্রমুখ বিপ্লবীর জেলজীবনের ইতিবৃত্তে ভরে উঠেছে কোরক-এর (সম্পা: তাপস ভৌমিক) প্রাক্-শারদ সংখ্যা ‘পরাধীন ভারতের জেলখানা’। কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেল, আন্দামানের সেলুলার জেল, মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল, চট্টগ্রাম কারাগার... এ সবের ইতিহাস ঠাঁই পেয়েছে সংখ্যাটিতে। ‘‘আমরা স্বদেশীদের কারাজীবনের অভিজ্ঞতা ও ইতিহাস যতটা সম্ভব তুলে ধরতে চেয়েছি।’’ লিখেছেন সম্পাদক।
জীবনদর্শন
তিনে নেত্র, কথাটির মধ্যে কোথাও অন্তর্দৃষ্টির কথাও এসে পড়ে, শুধু বাইরের দু’টি শরীরী চোখ দিয়ে নয়, মনশ্চক্ষু দিয়েও দেখতে হবে জীবনকে।— এমন ভাবনা থেকেই ‘তিনে নেত্র’ নাটকটি লিখেছেন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়, ‘‘তিন প্রজন্মের কথা বুনেছি এ-নাটকে। নিশ্চয়ই তাদের বিরোধ আছে, অনৈক্য আছে, এমনকি দেওয়ালও উঠে গিয়েছে তাদের মধ্যে, তবুও জীবনের সঙ্গে বোঝাপড়ায় কোথাও যেন একটা পারস্পরিক সাযুজ্যও আছে। প্রজন্মগত স্বাতন্ত্র্য সত্ত্বেও মূল্যবোধ থেকে প্রেম, প্রতিটি ব্যাপারেই এক প্রজন্ম অন্যকে স্পর্শ করতে পারছে।’’ যোজক নাট্যগোষ্ঠী নাটকটি প্রথম অভিনয় করবে তাদের বারো বছরের জন্মদিনে, ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায় অ্যাকাডেমিতে। নির্দেশনায় দুলাল লাহিড়ী। মুখ্য ভূমিকায় গৌতম হালদার।
সঙ্গীত-সংস্কৃতি
সেই কবে ১৮৫৬-য় অওধ থেকে নির্বাসিত নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ তাঁর পরিবার, লোকলস্কর নিয়ে কলকাতায় এসে পৌঁছন। মেটিয়াবুরুজ হয়ে ওঠে ছোটা লখনউ। গঙ্গাপাড়ের সিবতেনাবাদ ইমামবাড়া প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে লখনউয়ের বড়া ইমামবাড়ার। মহরমের তাজিয়া থেকে শোকগীতি মরসিয়া— ধীরে ধীরে অওধি শিয়া সংস্কৃতি এই শহরের নিজস্ব হয়ে ওঠে। উত্তর ভারত থেকে নানাবিধ সঙ্গীত, গায়ক-বাদক, সঙ্গীততাত্ত্বিকরা কী ভাবে এলেন বাংলায়, আর কী কী সম্পর্ক তৈরি হল সঙ্গীতচর্চার মধ্যে দিয়ে, এই নিয়ে গবেষণা করেন স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ়ের এথনোমিউজ়িকোলজির অধ্যাপক রিচার্ড উইলিয়ামস। ৬ সেপ্টেম্বর তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মেটিয়াবুরুজে স্মৃতি ও মহরম’ শিরোনামে বলবেন। আয়োজক তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগ। দক্ষিণ এশিয়ার সংস্কৃতিতে আরবি-ফারসি উপাদানের প্রতিগ্রহণ নিয়ে এই বিভাগের প্রস্তাবিত পাঠ্যসূচির প্রস্তুতি পর্বের অংশ এটি। বেলা ৩টেয়, বুদ্ধদেব বসু সভাগৃহে।
পুরুষোত্তম