আচমকাই অসহ্য মাথার যন্ত্রণা, সঙ্গে শরীরের ভারসাম্যের সমস্যা।পরীক্ষায় দেখা গেল, বছর চব্বিশের তরুণীর মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে বড় টিউমার। তড়িঘড়ি বেঙ্গালুরুতে গিয়ে অস্ত্রোপচারেও সমস্যা মেটেনি। বরং মাস কয়েক পর থেকে ফের একই সমস্যার শুরু। কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে ধরা পড়ল, অস্ত্রোপচার হলেও টিউমারটি পুরোপুরি বাদ যায়নি। উল্টে তা আরও বড় হয়েছে।
সম্প্রতি মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করে অসংখ্য রক্তনালি জড়ানো টিউমারটি পুরোপুরি বাদ দিয়ে তরুণীকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়েছে আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল। আপাতত হাসপাতালের কাছেই ঘর ভাড়া নিয়ে রয়েছেন বছর পঁচিশের ওই তরুণী ও তাঁর পরিজনেরা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি পরিজনদের সঙ্গে উত্তরবঙ্গে ফিরতে পারবেন।
উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দা, কলেজপড়ুয়া রোজি বানুর গতবছরের শুরু থেকে প্রায়ই মাথায় যন্ত্রণা হত, সঙ্গে বমি। এমনকি দাঁড়াতে বা হাঁটাচলা করতে গিয়ে বার বার পড়ে যেতেন। তরুণীর দাদা মহসিন রাজা জানাচ্ছেন, ২০২৪ সালের মে মাসে তাঁকে শিলিগুড়ির এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলেমস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ে। তখন বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যাওয়া হয় রোজিকে। ওই যুবক বলেন, ‘‘প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা খরচ করে তড়িঘড়ি অপারেশন করা হল। ডাক্তারেরা বলেছিলেন, সব ঠিকঠাক হয়েছে। কিন্তু তিন মাস পর থেকে আবার একই সমস্যার শুরু।’’
তরুণীর পরিজনেরা জানাচ্ছেন, ফের শিলিগুড়িতে এনে দেখানো হয় রোজিকে। সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, টিউমারটি রয়েছে। বিষয়টি বেঙ্গালুরুর চিকিৎসককে জানানো হলে, বলা হয়েছিল আরও কয়েক দিন পরে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। রাজা বলেন, ‘‘মাসকয়েক পরে এমআরআই-এ দেখা গেল, টিউমারটি আরও বড় আকারে রয়েছে। অস্ত্রোপচারের জন্য ফের বোনকে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু আর সেখানে নিয়ে যাইনি।’’ সেই সময়ে সিএমআরআই হাসপাতালের স্নায়ু-শল্য চিকিৎসক অমিতাভ চন্দের কাছে নিয়ে আসা হয় রোজিকে।
অমিতাভের কথায়, ‘‘ফের এমআরআই করে দেখা যায়, টিউমারটি আরও বড় হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছিল, অস্ত্রোপচার করে পুরো টিউমার বাদ দেওয়া হয়নি। পুরো বাদ দিলে এত তাড়াতাড়ি টিউমার ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে না।’’ তিনি জানাচ্ছেন, ওই তরুণীর ‘ব্রেন স্টেম’ (মস্তিষ্কের এই অংশের দ্বারা শ্বাসপ্রশ্বাস, হৃদ্স্পন্দন, শরীরের তাপমাত্রা, রক্তচাপ, গিলে ফেলার মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রিত হয়) এবং সেরিবেলামের (শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে) সংযোগস্থলে টিউমারটি ছিল। তবে দ্বিতীয় বারের অস্ত্রোপচার খুব জটিল ও ঝুঁকির ছিল বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
অমিতাভ আরও জানাচ্ছেন, প্রথম অস্ত্রোপচারে খুলিতে যে অংশ ফুটো করা হয়েছিল, তা দিয়ে টিউমারের চাপে মস্তিষ্কের খানিকটা অংশ বেরিয়ে এসেছিল। আর টিউমারটি অসংখ্য রক্তনালিতে গঠিত হওয়ায় অস্ত্রোপচারের সময়ে প্রচুর রক্তক্ষরণের ঝুঁকি ছিল। অমিতাভ বলেন, ‘‘রোগীর শরীরের রক্ত কমে যাওয়ার পাশাপাশি, অস্ত্রোপচারের জায়গায় প্রচুর রক্তে ভরে যায়। তাতে টিউমারটি যেমন ঠিক মতো দেখা যায় না, তেমনই সংলগ্ন অংশেও আঘাতের ঝুঁকি ছিল।’’ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বার বার রক্তক্ষরণ বন্ধ করে প্রায় ছ’ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে পুরো টিউমার কেটে বাদ দেওয়া হয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)