Advertisement
E-Paper

বৌবাজারের পাশে মমতা, মেট্রো-কর্তৃপক্ষের লিখিত প্রতিশ্রুতি চান দুর্গতেরা

দুর্গতদের অভিযোগ, শনিবার রাতে বিপর্যয়ের পরে দু’দিন কেটে গিয়েছে। মেয়র এসেছেন, বিধায়ক এসেছেন। মুখ্যমন্ত্রীও এলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:০২
বেহাল বৌবাজার: সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

বেহাল বৌবাজার: সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

এলাকা পরিদর্শন করলেন সোমবার বিকেলে। দাঁড়িয়ে অনেকের সঙ্গে কথাও বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ক্ষোভ কমল না ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জেরে ভেঙে পড়া বা ফাটল ধরা বাড়ির বাসিন্দাদের। দুর্গা পিতুরি লেন, গৌর দে ও সেকরাপাড়া লেনের ওই বাসিন্দাদের একটাই দাবি, মেট্রো-কর্তৃপক্ষকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। তাঁরা কোনও রকম মৌখিক আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না।

দুর্গতদের অভিযোগ, শনিবার রাতে বিপর্যয়ের পরে দু’দিন কেটে গিয়েছে। মেয়র এসেছেন, বিধায়ক এসেছেন। মুখ্যমন্ত্রীও এলেন। কিন্তু মেট্রোর কোনও কর্তা আসেননি। অথচ মেট্রোর জন্যই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খালি হাতে আশ্রয়হীন হতে হয়েছে তাঁদের। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন, আজ, মঙ্গলবার বেলা ৩টেয় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করবেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘বিপর্যয় নিয়ে কোনও রাজনীতি নয়। সকলকে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে।’’

মমতা পরে সাংবাদিকদের জানান, যে-সব বাসিন্দার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে, তাঁদের অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ কাগজ, নথি, পরিচয়পত্র, টাকা-সহ সব কিছু হারিয়েছেন। তাঁদের একটি তালিকা তৈরি করতে বলেছেন তিনি। সেই তালিকা মেট্রো-কর্তৃপক্ষের হাতে দেওয়া হবে, যাতে তাঁরা যথাসম্ভব ক্ষতিপূরণ দেন। কিন্তু দুর্গতদের ক্ষোভ মেটেনি। কয়েকশো বছরের পৈতৃক ভিটে-সহ সব কিছু হারিয়েছেন তাঁরা। ওই বাসিন্দাদের বক্তব্য, ক্ষয়ক্ষতি যে হতে পারে, তা জানিয়ে মেট্রো-কর্তৃপক্ষ কয়েক মাস ধরে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের মৌখিক আশ্বাস দিয়ে আসছেন। কিন্তু বিপদ যখন এল, তার পরে আর কিছুই মিলছে না। তাই কোনও রকম অলিখিত আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেন না তাঁরা।

মেট্রো-কর্তৃপক্ষ এ দিন একটি চিঠিতে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারের থাকার বন্দোবস্ত হচ্ছে। যে-সব বাড়ির ক্ষতি হয়েছে, সেগুলো সারিয়ে দেওয়া হবে। যেগুলো ভেঙে পড়েছে, তৈরি করে দেওয়া হবে সেগুলোও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মূল চিঠির ফোটোকপি দেওয়া হয়েছে তাঁদের। তাতে লেখা নেই, কত দিনের মধ্যে বাড়ি মেরামত বা তৈরি করে দেওয়া হবে। তাই বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট অবরোধ করেন তাঁরা। তার জেরে ওই রাস্তায় দীর্ঘ ক্ষণ যানজট হয়।

মুখ্যমন্ত্রী আসছেন শুনে বিভিন্ন হোটেলে আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দারা হাজির হন নিজেদের বিপন্ন বাড়ি সংলগ্ন গলির মুখে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কেউ পৌঁছতে পেরেছেন। অনেকেই পারেননি। বিপর্যয় ঘনিয়ে আসতেই স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে কোনও মতে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন বৃদ্ধ রাধাপদ দেবনাথ। নিতে পারেননি ব্যাঙ্কের কাগজপত্র বা পেনশনের নথিটুকুও। এক কাপড়ে কোনও মতে ঠাঁই মিলেছে হোটেলে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মেয়ের হাত ধরে কোনও মতে ফিরে যান হোটেলে।

বাড়িতে ধস। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

দুর্গতদের চিন্তা, বাড়ি ফিরবেন, কবে, আদৌ ফিরতে পারবেন তো! অনেকেই সকাল-বিকেল ঘুরে যাচ্ছেন গোয়েনকা কলেজে স্পেশ্যাল কন্ট্রোল রুমে। যদি মেট্রো-কর্তৃপক্ষের আশ্বাস মেলে। কিন্তু কিছুই মেলেনি। জানতেও পারেননি, কত দিন হোটেলে কাটাতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে ঢুকে জরুরি নথিপত্র আনতে পারবেন কি না! বাড়ি দূরের কথা, গলিতেই ঢুকতে পারছেন না কেউ। দুর্ঘটনা এড়াতে গলির মুখে বসেছে পুলিশ পিকেট। কেউ কেউ রাতে বাড়িতে ঢুকে আলমারি খোলার চেষ্টা করছিলেন। আলমারি খোলেনি। এ দিন কিছু বাড়িতে ফাটল ধরায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে অন্যান্য গলিতেও।

সুড়ঙ্গে জল ঢুকে এই বিপর্যয়ের জন্য মেট্রো-কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ‘‘কাজ করতে গিয়ে মেট্রোই বিপত্তি ঘটিয়েছে। তাই দায়িত্বও ওদের। দোকান-বাড়ি মিলিয়ে ৩৯ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে সরকারের কাছে,’’ বলেন মেয়র।

Mamata Banerjee Kolkata Metro Metro East West Metro Video
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy