Advertisement
০৩ মে ২০২৪
National Library

জাতীয় গ্রন্থাগারে ভাঙছে চাঙড়, নষ্ট হচ্ছে বহু বই-নথি

জাতীয় গ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা গেল, মূল হেরিটেজ ভবনের বেসমেন্টে পুরনো স্ট্যাক রুমের ছাদ থেকে চাঙড় ভেঙে পড়ছে।

বেহাল: এমনই অবস্থা জাতীয় গ্রন্থাগারের স্ট্যাক রুমের। নিজস্ব চিত্র

বেহাল: এমনই অবস্থা জাতীয় গ্রন্থাগারের স্ট্যাক রুমের। নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১০:৩৭
Share: Save:

এ যেন প্রদীপের নীচেই অন্ধকার! বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে ঝাঁ-চকচকে একটি ভবন। অথচ, ভিতরের দশা বেহাল। এমনই অবস্থা জাতীয় গ্রন্থাগারের পুরনো স্ট্যাক রুমের।

জাতীয় গ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা গেল, মূল হেরিটেজ ভবনের বেসমেন্টে পুরনো স্ট্যাক রুমের ছাদ থেকে চাঙড় ভেঙে পড়ছে। অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে বহু পুরনো বই ও দুষ্প্রাপ্য নথি। দেশের অন্যতম বড় এই জাতীয় গ্রন্থাগারের সংস্কারের কাজ নিয়মিত হলেও হেরিটেজ ভবনের পুরনো স্ট্যাক রুমের এই ভগ্নদশা কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বইপ্রেমীরা।

জাতীয় গ্রন্থাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, সিঁড়ি দিয়ে উঠে মূল ভবনের দোতলায় ছিল রিডিং রুম। ২০০৫ সালে ওই রিডিং রুম সেখান থেকে উঠে মূল ভবনের উল্টো দিকের ভাষা ভবনে চলে যায়। পুরনো রিডিং রুম এখন ডিজিটাল প্রদর্শনীর কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

রিডিং রুম ভাষা ভবনে চলে যাওয়ার পরে বেসমেন্টের স্ট্যাক রুমও চলে যায় সেই ভবনে। পুরনো রিডিং রুমটি সংস্কার করে ডিজিটাল প্রদর্শনীর কক্ষে পরিণত করা হলেও অভিযোগ, দেখভালের অভাবে ও অবহেলায় পুরনো স্ট্যাক রুমের অবস্থা খুবই খারাপ।

অভিযোগ যে মিথ্যা নয়, পুরনো স্ট্যাক রুমটি ঘুরে দেখলেই তা বোঝা যায়। প্রায়ান্ধকার ওই স্ট্যাক রুমের বিভিন্ন জায়গায় ডাঁই করে রাখা বই ও পুরনো আসবাবপত্র। পুরনো বইয়ের স্তূপীকৃত ছেঁড়া পাতা মাড়িয়ে স্ট্যাক রুমের অন্য একটি ঘরে ঢুকে দেখা গেল, ছাদের চাঙড় এমন ভাবে খসে পড়েছে যে, কংক্রিটের ভিতরের লোহার অংশ বেরিয়ে পড়েছে। কোথাও আবার দেওয়ালের প্লাস্টার পুরো খসে পড়ায় ইট বেরিয়ে পড়েছে। দরজার উপরের অংশের প্লাস্টারও খসে পড়ায় মরচে ধরা রড বেরিয়ে রয়েছে। ফলে সেই দরজাও যথেষ্ট বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।

বিশাল ওই স্ট্যাক রুমের ভিতরে বেশ কয়েকটি আলমারি ও তাকে বইয়ের পাশাপাশি নানা নথিপত্রও পড়ে রয়েছে অবহেলায়। পুরনো পত্রিকা ও কাগজও পড়ে থাকতে দেখা গেল মাটিতে। জাতীয় গ্রন্থাগারের প্রাক্তন কর্মী তথা ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব অ্যাকশন’-এর রাজ্য শাখার সচিব শৈবাল চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘স্ট্যাক রুম থেকে যখন বইগুলো নতুন ভাষা ভবনে নিয়ে যাওয়া হল, তখন কিছু বই ফেলে যাওয়া হল কেন? ওখানে পড়ে থেকে বহু দুষ্প্রাপ্য বই ও নথিপত্র নষ্ট হচ্ছে।’’

দোতলায় ডিজিটাল প্রদর্শনীকক্ষটি দেখলে অবশ্য বোঝার উপায় নেই যে, নীচের স্ট্যাক রুমের কী দশা! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সোমনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘চাঙড় বেশি খসে পড়লে ওই ছাদের ধারণক্ষমতা কমে যেতে পারে। তখন দোতলার মেঝে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনকি, মেঝেয় ফাটলও দেখা দিতে পারে। এ সব ক্ষেত্রে নিয়মিত মেরামতি প্রয়োজন।’’ জাতীয় গ্রন্থাগারের এক কর্তা কে কে কচুকসি অবশ্য দাবি করলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় পূর্ত বিভাগ পুরনো স্ট্যাক রুমের রক্ষণাবেক্ষণ ও সারাইয়ের কাজ করে। ওখানে নিয়মিত ভাবে সংস্কারের কাজ হয় বলেই তো শুনেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

National Library Documents
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE