Advertisement
E-Paper

ধোঁয়া-দূষণের মানচিত্রে দ্রুত সামনে আসছে শহর

যার প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি কলকাতা পুরসভায় জমা পড়া খড়গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞ ভার্গব মিত্রের একটি পর্যবেক্ষণ-রিপোর্টে। প্রসঙ্গত, পুরসভা শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে দিশা পেতে একটি কমিটি তৈরি করেছে।

নিজস্ব সংবাদদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০৩
বিষাক্ত: পুরনো গাড়ির ধোঁয়া থেকে ছড়াচ্ছে দূষণ। বৃহস্পতিবার, ধর্মতলায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

বিষাক্ত: পুরনো গাড়ির ধোঁয়া থেকে ছড়াচ্ছে দূষণ। বৃহস্পতিবার, ধর্মতলায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

যানবাহনের ধোঁয়ার বিষে ঢেকে যাচ্ছে কলকাতা। প্রতিদিনই সেই ধোঁয়া শহরের দূষণ মাত্রাতিরিক্ত করে দিচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। যেমন ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (সিএসই) প্রকাশিত একটি রিপোর্টই বলছে, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, মুম্বই-সহ সব মেগাসিটির মধ্যে একমাত্র দিল্লি ও কলকাতায় নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, যা মূলত যানবাহনের ধোঁয়া থেকে আসে, তার স্বাভাবিক মাত্রা (বার্ষিক প্রতি ঘনমিটারে ৪০ মাইক্রোগ্রাম) গত সাত বছরে ধারাবাহিক ভাবে বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে কলকাতাকে দূষণের অন্যতম ‘হটস্পট’ বলার কারণ শুধু বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম১০) বা অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণাই (পিএম২.৫) নয়, ধোঁয়াও অন্যতম।

যার প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি কলকাতা পুরসভায় জমা পড়া খড়গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞ ভার্গব মিত্রের একটি পর্যবেক্ষণ-রিপোর্টে। প্রসঙ্গত, পুরসভা শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে দিশা পেতে একটি কমিটি তৈরি করেছে। ভার্গববাবু ওই কমিটির এক জন সদস্য। পুরসভা সূত্রের খবর, জমা পড়া রিপোর্টটি ভার্গববাবুর ‘ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ’।

পুর কমিশনার খলিল আহমেদের কাছে পাঠানো ওই ‘পর্যবেক্ষণে’ ভার্গববাবু দূষণের মাত্রা কমাতে রাস্তায় কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করে এমন গাড়ির সংখ্যা দ্রুত কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন। একইসঙ্গে বেশি যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করতে পারে এমন গাড়ির ব্যবহার বাড়াতে বলেছেন। তেমনই উল্লেখযোগ্য হারে বিদ্যুৎচালিত এসি বাস এবং সিএনজি-চালিত বাসের সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলেছেন। রাস্তায় বাসকে অগ্রাধিকার দিতে পৃথক লেন তৈরির কথাও বলা হয়েছে ওই পর্যবেক্ষণে।

এমনিতে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে কলকাতার দূষণের সার্বিক চিত্র নিয়ে যে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট জমা দিয়েছে ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (নিরি), সেখানেও শহরের দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে যানবাহনের

ধোঁয়াকে উল্লেখ করা হয়েছে। মুম্বইয়ের মতো কলকাতায় যদিও গণপরিবহণের সংখ্যা বেশি, যা অন্য মেগা সিটির তুলনায় কিছুটা হলেও কলকাতাকে সুবিধাজনক অবস্থায় রেখেছে। কিন্তু পুরনো যানবাহনের সংখ্যা বেশি নিয়েই মূল সমস্যা। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘কলকাতা তো পুরনো গাড়ির বৃদ্ধাশ্রম। স্বল্প পরিসর রাস্তায় অত্যধিক গাড়ির চাপে যানজট

এবং ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির ঠিক মতো কাজ না করায় সমস্যা এত বেশি। পরিবেশ আদালত সাম্প্রতিক রায়ে শুধুই যানবাহনের ধোঁয়া নয়, দূষণের সব উৎসের দিকেই নজর দিতে বলেছে।’’

পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমাতে পরিবেশবান্ধব যান হিসেবে ট্রাম ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। মেট্রো স্টেশনগুলিতে যাতে যাত্রীরা দ্রুত পৌঁছতে পারেন, গণপরিবহণে সেই ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন মেট্রো পথের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ গড়ে তোলার কথাও রয়েছে। রাস্তার ভিড় কমাতে সড়ক পরিবহণের তুলনায় জলপথ ব্যবহারে মানুষকে আগ্রহী করে তোলার সুপারিশও উঠে এসেছে ভার্গববাবুর পর্যবেক্ষণে। শহরের পূর্ব থেকে পশ্চিম এবং উত্তর থেকে দক্ষিণের মধ্যে যাতায়াত যাতে দ্রুত করা যায় সে জন্য নির্দিষ্ট কিছু

পথকে সেই মতো গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।

রাস্তায় যথেচ্ছ পার্কিং বন্ধ, ট্র্যাফিক সিগন্যালগুলির মধ্যে সমন্বয়, গাড়ির গতি বাড়াতে পথচারীদের পারাপারের জায়গা নির্দিষ্ট করার মতো পুরনো কথাগুলিই আবার মনে করিয়ে দিয়েছেন ভার্গববাবু। সেখানে মিনিবাস এবং অটোর ব্যবহার কমিয়ে আনার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণের শর্ত যানবাহন মানছে কি না, তার উপরে কড়া নজরদারি রাখতে হবে। তথ্য দেখে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে গাড়ির ধোঁয়া থেকে ছড়ানো দূষণ কখনও কমানো যাবে না।’’

Smoke Pollution Pollution Kolkata Transport
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy