Advertisement
E-Paper

‘স্মৃতি ডি-কোড করতে পারে না পুরনো নাম’

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আমলেই জায়গা বা কোনও প্রকল্পের নতুন নামকরণ হয়েছে।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২০ ১০:৩০
বদল: ক্যামাক স্ট্রিটের নাম এখন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সরণি। নিজস্ব চিত্র

বদল: ক্যামাক স্ট্রিটের নাম এখন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সরণি। নিজস্ব চিত্র

স্মৃতির ‘কোড’-এ যে নাম আটকে গিয়েছে, তাকে ‘ডি-কোড’ করা মুশকিল। সেই ইচ্ছেটাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জন্মায় না। কারণ, কোনও জায়গার নাম যখন মস্তিষ্কের ‘মজুত-ভাণ্ডারে’ পাকাপাকি জায়গা করে, তখন সেখান থেকে তাকে সরানো মুশকিল হয়। সাম্প্রতিক বা অতীতের নাম বদল নিয়ে যত বিতর্কই হোক, মনোবিদ এবং মনোরোগ চিকিৎসকদের মতে, অনেক কিছুর মতোই কোনও জায়গার নামের ব্যবহার অভ্যাসে পরিণত হয়। যা থেকে বেরোনো মুশকিল।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আমলেই জায়গা বা কোনও প্রকল্পের নতুন নামকরণ হয়েছে। কলকাতা পুরসভায় তো রাস্তার নাম বদলের জন্য ‘রোড-রিনেমিং’ কমিটিই রয়েছে। কিন্তু যে নাম দেওয়া হয়, তা মস্তিষ্কে কতটা গাঁথা হয়ে থাকে? মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের মতে, দীর্ঘ ব্যবহারে যে নাম স্মৃতিতে আটকে গিয়েছে, সেটা স্মৃতি ‘ডি-কোড’ করতে পারে না। এটা মনের নিজস্ব গতিপ্রকৃতি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি নিজে সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে থাকি, যার বর্তমান নাম ডক্টর মেঘনাদ সাহা সরণি। কিন্তু যখন এই নামটা স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে লিখতে যাই, তখন অনেকেই বলেন, ‘সাদার্ন অ্যাভিনিউই লিখুন না।’ এটা কিন্তু নতুন নামের প্রতি অশ্রদ্ধা বা অন্য কোনও কারণ নয়। যে নাম শুরু থেকে মস্তিষ্কে গেঁথে গিয়েছে, ইচ্ছে থাকলেও চট করে তা মোছা মুশকিল। মানুষের মনে ইচ্ছেটাই জন্মায় না।’’

মনোরোগ চিকিৎসকদের একটি অংশের বক্তব্য, এক-একটি প্রজন্ম এক-একটি নামের সঙ্গে পরিচিত হয়ে যায়। শুধু রাস্তার ক্ষেত্রেই নয়, যে কোনও নাম মনে রাখতেই অনেকগুলি অনুষঙ্গ জড়িয়ে থাকে। সব মিলিয়ে স্মৃতি কাজ করে। কারণ, স্মৃতি শুধু শ্রবণভিত্তিক নয়, কোনও নাম উচ্চারণের সঙ্গে তার ছবিও মস্তিষ্কে ফুটে ওঠে। মনোরোগ চিকিৎসক প্রথমা চৌধুরী বলছেন, ‘‘স্মৃতি অনেক রকমের হয়। যেমন আত্মজৈবনিক, ‘ফ্যাকচুয়াল মেমরি’ অর্থাৎ যে স্মৃতি অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া, মানুষের স্মৃতি তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে শব্দধ্বনির পাশাপাশি চিত্রকল্প-সহ অনেক অনুষঙ্গ কাজ করে। ফলে মস্তিষ্কে কোনও জায়গা বা জিনিসের নাম মজুত হয়ে গেলে, তা সহজে মুছে ফেলা কার্যত অসম্ভব।’’

আরও পড়ুন: ধূমপান-বিরোধী সভায় অনুপস্থিত পুরসভা ও পুলিশ

কোনও জায়গার নাম অনেকগুলি প্রজন্ম বহন করে। ফলে তা পরিবর্তন করলেও ভুলে যাওয়া কঠিন। যে কারণে গ্রে স্ট্রিট বদলে অরবিন্দ সরণি হলেও পরিচিত কিন্তু পুরনো নামেই, আগের থিয়েটার রোড বর্তমানে শেক্সপিয়র সরণি, ক্যামাক স্ট্রিট হয়েছে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সরণি এবং পার্ক স্ট্রিটের নাম মাদার টেরিজা সরণি হলেও তা ক’জন মনে রাখেন! প্রথমার কথায়, ‘‘পার্ক স্ট্রিট বললে যে আবহ ভেসে ওঠে, সেটাই মস্তিষ্ক মনে রাখতে চায়।’’

আরও পড়ুন: ক্ষতিপূরণের মামলায় হলফনামা পেশের নির্দেশ

তবে যদি নতুন প্রজন্মকে পরিবর্তিত নামই বারবার বলা হয়, তখন তারা সেটাই মনে রাখবে। পুরনো নাম বিস্তৃত প্রায় হয়ে যাবে। কিন্তু সে জন্য নামের বহুল ব্যবহার প্রয়োজন। মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব জানাচ্ছেন, প্রথম থেকে যাঁরা পার্ক স্ট্রিট বা থিয়েটার রোডের নাম শুনে আসছেন, সে ক্ষেত্রে নতুন নামের সঙ্গে পুরনো নামটিও তাঁদের মস্তিষ্ক ‘যুক্ত’ করার চেষ্টা করে। অর্থাৎ, নতুন নামও মনে আসে পুরনো নামের সূত্র ধরেই। অনিরুদ্ধবাবুর কথায়, ‘‘রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের ট্র্যাঙ্গুলার পার্ক এখনও সবার কাছে সে নামেই পরিচিত। নতুন নাম শরৎ স্মৃতি উদ্যান কেউই বলেন না। নয়া প্রজন্মকে যদি শুরু থেকেই শেখানো হয় তা হলেই সে নতুন নাম শিখবে। পরবর্তীকালে পুরনো নামের আর ব্যবহার হবে না। তবে তা নির্ভর করছে, নতুন নামের ব্যবহার

কতটা হচ্ছে তার উপরে।’’ কলকাতা-গবেষক হরিপদ ভৌমিকের বক্তব্য, ‘‘যে কোনও নামের সঙ্গেই যুক্ত থাকে ইতিহাস আর প্রজন্মের ব্যবহার। সুতরাং তা সহজে মুছে ফেলা অসম্ভব।’’

KMC Narendra Modi Camac Street Victoria Memorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy