E-Paper

বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে ‘বাধা’ পুরপ্রতিনিধির, ফিরল পুলিশ ও পুরসভা

বছর দেড়েক আগে পুরপ্রতিনিধিদের পাশে দাঁড়িয়ে মেয়র বলেছিলেন, ‘‘পয়সা খায় বিল্ডিং বিভাগ ও থানা। অথচ, বদনাম হয় কাউন্সিলরের।’’ তাঁর কথার প্রতিক্রিয়া হয় সরকারি আধিকারিকদের মধ্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২৩ ০৬:৫২
An image of flat

বাধা: এই বাড়ির ছাদের কিছুটা অংশ ভাঙার পরে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয় পুরসভা। মঙ্গলবার, বাঘা যতীন এলাকায়।  ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বিল্ডিং দফতরকে বার বার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে এমন অভিযোগ পেয়ে দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের একাধিক বার ভর্ৎসনাও করেছেন তিনি। বছর দেড়েক আগে ওই অনুষ্ঠানে পুরপ্রতিনিধিদের পাশে দাঁড়িয়ে মেয়র বলেছিলেন, ‘‘পয়সা খায় বিল্ডিং বিভাগ ও থানা। অথচ, বদনাম হয় কাউন্সিলরের।’’ তাঁর কথার প্রতিক্রিয়া হয় সরকারি আধিকারিকদের মধ্যে। কিন্তু মঙ্গলবার দেখা গেল উল্টো ছবিটাই! অভিযোগ, কলকাতা পুরসভার ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘা যতীনে চিত্তরঞ্জন কলোনি এলাকায় বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে স্থানীয় পুরপ্রতিনিধির বাধার মুখে পড়ে পুলিশ ও পুরকর্মীরা কাজ শেষ না করেই ফিরে যান।

বিল্ডিং দফতর সূত্রের খবর, ওই এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ তেতলা বাড়ির একাংশের জন্য অনুমতি নেওয়া হয়নি। তাই এ দিন পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের কর্মী-সহ যাদবপুর থানার পুলিশ গিয়ে বাড়িটির দোতলার ছাদের একাংশ ভাঙতে শুরু করে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, আধ ঘণ্টার মধ্যে ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধি সীমা ঘোষ সদলবল ঘটনাস্থলে হাজির হন। অভিযোগ, তিনি বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজে বাধা দিলে পুলিশ ও পুরসভার কর্মীরা চলে যান।

এ প্রসঙ্গে সীমার দাবি, ‘‘যে বাড়িটি পুরসভা ও পুলিশ ভাঙতে এসেছিল, সেটি এক জন গরিব মানুষ কষ্ট করে তৈরি করছেন। সম্প্রতি তাঁর এক সন্তান অকালে চলে গিয়েছে। আর এক মেয়ে বিশেষ ভাবে সক্ষম। মানবিক স্বার্থেই কাজ বন্ধ রাখতে আবেদন করি। এক শ্রেণির লোকজন অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করছিলেন। কাজ বন্ধ না করলে বড়সড় গোলমালের আশঙ্কা ছিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘একেবারে না ভেঙে কাজ বন্ধের নোটিস দিতে পারত পুরসভা। এ রকম ভাবে বাড়ি ভাঙলে তো আমার গোটা ওয়ার্ডই ফাঁকা হয়ে যাবে।’’

এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, বেআইনি নির্মাণকে কখনওই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না বলে ঘোষণা করেছেন স্বয়ং মেয়র। তা সত্ত্বেও এক জন পুরপ্রতিনিধি হয়ে কী ভাবে বেআইনি নির্মাণ ভাঙায় সরকারি কর্মীদের বাধা দিতে এলেন সীমা? গরিব মানুষ হলেও কারও বেআইনি কাজে কেনই বা প্রশ্রয় দেবেন পুরপ্রতিনিধি? কেনই বা তিনি কার্যত স্বীকার করবেন যে, তাঁর ওয়ার্ডে বেআইনি নির্মাণের রমরমা রয়েছে? সদুত্তর মেলেনি সীমার থেকে।

বিল্ডিং দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ওই তেতলা বাড়িটি এক বছরের বেশি সময় ধরে তৈরি হচ্ছে। তৃতীয় তলা নির্মাণে পুরসভার অনুমতি নেওয়া হয়নি।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, যে প্রোমোটার বাড়িটি তৈরি করছেন, তিনি বেড়াতে গিয়েছেন। বিজেপির পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘শহরে বাড়ি তৈরি বা ভাঙার ক্ষেত্রে স্থানীয় পুরপ্রতিনিধির নাক গলানোর বিন্দুমাত্র অধিকার নেই। সরকারি কর্মী বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে আসায় বাধার মুখে পড়ছেন। যা থেকেই স্পষ্ট, ওই বেআইনি নির্মাণে পুরপ্রতিনিধির মদত রয়েছে।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে সীমা জানান, ওই বাসিন্দার পাশে দাঁড়ানো ও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতেই তিনি বিল্ডিং দফতরের ডিজি-কে ফোন করে কাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ করেছিলেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Illegal Construction Bagha Jatin Councillor kolkata municipal corporation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy