Advertisement
E-Paper

স্কুলে আসা গাড়ির ভিড়ে অতিষ্ঠ, পথে বাসিন্দারা

বাড়ির সামনের রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে স্কুলগাড়ি। ঘন ঘন পডুয়াদের নিয়ে গাড়ি যাওয়ার ফলে ছড়াচ্ছে দূষণ। গাড়ির ভিড়ে ঢুকতে বাধা পাচ্ছে বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত গাড়ি, মায় অ্যাম্বুল্যান্সও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০০
পথের দাবি: অবরোধ স্থানীয় প্রবীণদের। মঙ্গলবার, গড়িয়াহাটের কর্নফিল্ড রোডে। ফাইল চিত্র।

পথের দাবি: অবরোধ স্থানীয় প্রবীণদের। মঙ্গলবার, গড়িয়াহাটের কর্নফিল্ড রোডে। ফাইল চিত্র।

বাড়ির সামনের রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে স্কুলগাড়ি। ঘন ঘন পডুয়াদের নিয়ে গাড়ি যাওয়ার ফলে ছড়াচ্ছে দূষণ। গাড়ির ভিড়ে ঢুকতে বাধা পাচ্ছে বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত গাড়ি, মায় অ্যাম্বুল্যান্সও। এমনই অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার সকালে গড়িয়াহাটের কর্নফিল্ড রোডে সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনে পথ অবরোধ করলেন এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা। স্কুলের সময়ে অবরোধের জেরে পড়ুয়া ভর্তি গাড়ি ওই রাস্তায় ঢুকতে পারেনি। চরম ভোগান্তিতে পড়ে খুদে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ।

পুলিশ জানিয়েছে, দাবি আদায়ের জন্য প্রবীণ বাসিন্দারা এক ঘণ্টারও বেশি সময় রাস্তায় বসে থাকেন। স্কুলের গেট পর্যন্ত গাড়ি যেতে না পারায় দু’শো-তিনশো মিটার রাস্তা হেঁটে গাড়িতে উঠতে হয় পড়ুয়াদের। শেষে গড়িয়াহাট থানার সঙ্গে আলোচনার পরে অবরোধ তুলে নেন স্থানীয়েরা। সোমবার ওই একই অভিযোগ তুলে কর্নফিল্ড রোড এবং সুইনহো স্ট্রিটের মোড় অবরোধ করেছিলেন বালিগঞ্জ প্লেসের বাসিন্দাদের একাংশ। এ দিন রাস্তায় নামেন ‘কর্নফিল্ড রোড হোম কো-ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্যেরা।

প্রসঙ্গত, সাউথ পয়েন্ট স্কুলের প্রাথমিক বিভাগ ম্যান্ডেভিলা গার্ডেন্সে। হাইস্কুলটি বালিগঞ্জ প্লেসে। দু’টি স্কুলেই সকাল এবং দুপুর— দু’দফায় ক্লাস হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্কুল খোলা থাকলে রোজ ভোর থেকে

আশপাশের রাস্তায় গাড়ি রেখে দেওয়া হয়। ফলে বাসিন্দাদের গাড়ি বেরোতে বা ঢুকতে পারে না। চালকদের গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করলে জোটে অভব্য আচরণ। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, গাড়ি এবং হর্নের শব্দে তাঁরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক বিভাগের পড়ুয়াদের নিয়ে বিজন সেতুর দিক থেকে যে সব স্কুলগাড়ি আসে, সেগুলি কর্নফিল্ড রোডের সাত নম্বর ব্লকের রাস্তা ধরে গিয়ে সোজা পৌঁছে যায় ম্যান্ডেভিলা গার্ডেন্সে। ওই রাস্তাতেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ছুটির পরে সেখানে এসে খুদে পড়ুয়ারা গাড়িতে ওঠে।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ছাতা মাথায় রাস্তার মাঝখানে বসে আছেন এলাকার প্রবীণেরা। কোনও গাড়িকে ওই রাস্তায় ঢুকতে দিচ্ছেন না তাঁরা। এক বাসিন্দা শ্রীরূপা দাশগুপ্তের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সরব

হয়েছেন। পুলিশেও জানিয়েছেন। কিন্তু, সমস্যা মেটেনি। সকাল ছ’টা থেকে হর্নের শব্দে বাড়িতে থাকাই দায় হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ শ্রীরূপার। আর এক বাসিন্দা নন্দিতা দাশগুপ্তের অভিযোগ, বাচ্চাদের নামিয়ে গাড়িগুলি রাস্তার দু’পাশে দাঁড় করানো থাকে। ফলে অ্যাম্বুল্যান্সও যেতে পারে না। তাঁরা জানান, স্থানীয় কাউন্সিলরকে তাঁরা সব জানিয়েছেন।

এ দিন দেখা যায়, দুই খুদে পড়ুয়াকে নিয়ে স্কুলের দিকে ছুটছেন একটি স্কুলগাড়ির কেয়ারটেকার ঝুমা নাগ। তাঁর অভিযোগ, চার বছরের দুই খুদেকে এই গরমে প্রায় চারশো মিটার রাস্তা হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। একই অভিযোগ শোনা গিয়েছে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রৌনক ভট্টাচার্যের মা পিয়ালীর কথায়। ওই সময় স্কুল ছুটি হয়ে গেলেও প্রতিদিনের মতো স্কুলগাড়ি পৌঁছয়নি। ফলে গরমে, রাস্তার ধারে বসে থাকতে দেখা যায় খুদে ছাত্রছাত্রীদের। প্রথম শ্রেণির ভিভান আগরওয়াল বন্ধুদের সঙ্গে রাস্তার ধারে বসেছিল। সে জানায়, পুলকার-কাকু এখানে বসে থাকতে বলেছে। পরে অবশ্য তারা স্কুলগাড়িতে চলে যায়।

স্থানীয় কাউন্সিলর সুদর্শনা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের নিয়ে আসা গাড়ির ভিড়ে স্থানীয় বাসিন্দারা, বিশেষত বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা দীর্ঘদিন ধরে অসুবিধার মুখে পড়ছেন। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত পুলিশের।’’ পুলিশের একটি অংশ জানিয়েছে, ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিলে স্কুলের সময়ে যানজট বাড়বে। যার প্রভাব পড়তে পারে পুরো গড়িয়াহাট চত্বর এবং বালিগঞ্জের একাংশে। তবে বেআইনি ভাবে কোনও গাড়ি দাঁড় করানো যাবে না বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ দিনের অবরোধের জন্য বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা। পথ অবরোধ করার জন্য পৃথক মামলাও রুজু করা হতে পারে।

সাউথ পয়েন্ট স্কুলের তরফে কৃষ্ণ দামানি জানান, জানুয়ারিতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাঁরা অভিভাবকদের জানিয়েছিলেন, পড়ুয়াদের নিয়ে আসা গাড়িগুলিকে যেন কলকাতা পুরসভার নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা হয়। তবে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

গোটা ঘটনা নিয়ে পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন-এর সম্পাদক সুদীপ দত্ত বলেন, ‘‘সাউথ পয়েন্টের দু’টি স্কুলই আবাসিক এলাকায়। দু’টির ক্ষেত্রেই একটি বিভাগ ছুটি হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে অন্য বিভাগের পড়ুয়ারা পৌঁছে যায়। স্কুলগাড়ির পাশাপাশি অনেকে ব্যক্তিগত গাড়িতেও আসে। এটা ঠিক, সে সময়ে অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি, যাতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমানো যায়।’’

School Mismanagement Pool Cars
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy