E-Paper

গুদামের আগুন থেকে বস্তি বাঁচাতে লড়ে গেল স্থানীয় কিশোরেরা

কেউ আগ্রাসী আগুনের সামনে থেকে টিনের চাল টেনে বার করছে, কেউ বালতি করে জল এনে আগুনে ছুড়ছে। কেউ আবার প্লাস্টিকের বস্তা সরাচ্ছে, যাতে আগুন বাড়তে না পারে। জরুরি পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে গিয়ে কারও হাত কাটল, কারও পা মচকাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৫ ০৬:৫৮
প্রয়াস: প্লাস্টিকের গুদামে আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকলকর্মীরা। হাত লাগিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। বুধবার, ধাপার মাঠপুকুরের কাছে।

প্রয়াস: প্লাস্টিকের গুদামে আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকলকর্মীরা। হাত লাগিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। বুধবার, ধাপার মাঠপুকুরের কাছে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

বয়স মেরেকেটে পনেরো-ষোলো। কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখার সামনে অকুতোভয় তারা। তাদের কেউ আগ্রাসী আগুনের সামনে থেকে টিনের চাল টেনে বার করছে, কেউ বালতি করে জল এনে আগুনে ছুড়ছে। কেউ আবার প্লাস্টিকের বস্তা সরাচ্ছে, যাতে আগুন বাড়তে না পারে। জরুরি পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে গিয়ে কারও হাত কাটল, কারও পা মচকাল। তবু বস্তিকে রক্ষা করতে আগুনের লেলিহান শিখার সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গেল এক ঝাঁক কিশোর।

বুধবার দুপুরে ই এম বাইপাসের ধারে মাঠপুকুর রোডের কাছে, মনসা মাঠের পিছনে একটি প্লাস্টিকের গুদামে আচমকা আগুন লেগে যায়। দশকের পর দশক ওই জায়গায় প্লাস্টিক-সহ নানা কঠিন বর্জ্যের ব্যবসা চলে। শহরের কঠিন বর্জ্য যে সব জায়গায় পুনর্ব্যবহারের জন্য কেনাবেচা হয়, মনসার মাঠ তার মধ্যে অন্যতম। অতীতে একাধিক বার সেখানে আগুন লেগেছে বলে জানাচ্ছে দমকল বিভাগ। তবু সেখানে প্লাস্টিক-সহ দাহ্য বস্তু মজুত করা ঠেকানো যায়নি।

এ দিন দুপুরে ফের সেখানে আগুন লাগলে প্লাস্টিক ভর্তি ছ’টি ঘর পুড়ে যায়। দমকলের ছ’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। তবে তার আগেই স্থানীয় কিশোরেরা আগুনের সঙ্গে লড়াই শুরু করে দিয়েছিল। দমকলকর্মীরাও জানান, কিশোরদের জন্যই তাঁদের কাজে অনেকটা সুবিধা হয়েছে। তবে বৃষ্টিভেজা আবহাওয়ার কারণেও আগুন বেশি বাড়তে পারেনি। না-হলে এ দিনের অগ্নিকাণ্ড আরও বড় আকার নিতে পারত বলেই জানাচ্ছেন দমকলকর্মীরা।

স্থানীয় স্কুলের পড়ুয়া দেব মণ্ডল, সূর্য মণ্ডল, রোহন মুণ্ডারা থাকে ওই গুদামের আশপাশেই। এ দিন দুপুরে তারাই আগুন লেগেছে বলে দেখতে পায়। দল বেঁধে তখনই তারা আগুনের মোকাবিলায় নেমে পড়ে। সূর্য বলে, ‘‘স্নান করে ফেরার পথে আগুন দেখতে পাই। চিৎকার করে লোকজনকে খবর দিই। তার পরে খাল থেকে জল তুলে ছুড়তে থাকি। পরে অবশ্য দমকল চলে আসে। দুপুরে এই সব করতে গিয়ে খাওয়া পর্যন্ত হয়নি। আগুন বেড়ে গেলে বস্তির দিকে চলে আসত। সেই ভয়ে আমরা আগুনে জল ঢালতে নেমে পড়ি।’’ এর পরে দমকল পৌঁছলে ওই কিশোরেরা ও স্থানীয়দের অনেকেই হাতে হাত মিলিয়ে আগুন নেভানোর কাজে দমকলকর্মীদের সাহায্য করেন।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সামগ্রিক পরিবেশ নিয়ে ক্ষুব্ধ দমকল এবং পুলিশ। পুলিশকর্মীদের বলতে শোনা যায়, গুদামের মালিকদের থানায় ডাকা হবে। দমকলকর্মীরা জানান, এ ভাবে প্লাস্টিক জড়ো করে রাখার বিপদ নিয়ে বার বার সচেতন করা হয়। কিন্তু তার পরেও কারও হুঁশ ফেরে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Fire Firebreak

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy