Advertisement
E-Paper

চা খাওয়া বন্ধ নেই, ব্যস্ত ভাঁড়পট্টিতে যুক্ত হল প্রদীপ

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ, রবিবার ন’মিনিটের জন্য ‘দিয়া’ জ্বালাতে বলার পরেই? চড়া রোদে প্রদীপের ছাঁচে মাটি ঢালতে ব্যস্ত কুন্দন প্রজাপতি নামে এক ভাঁড়ের কারিগর বললেন, “এক ভদ্রলোক এসে কাল দুপুরেই ৬০০ প্রদীপ লাগবে বলে গেলেন।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৫৫
জোরকদমে: ভাঁড় তৈরির কাজ চলছিলই। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পরে শুরু হয়েছে প্রদীপ তৈরির কাজও। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক ও নিজস্ব চিত্র

জোরকদমে: ভাঁড় তৈরির কাজ চলছিলই। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পরে শুরু হয়েছে প্রদীপ তৈরির কাজও। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক ও নিজস্ব চিত্র

এ যেন এক অলিখিত ‘এসেনশিয়াল সার্ভিস’ (জরুরি পরিষেবা)! চা এবং চা খাওয়ার জন্য তৈরি ভাঁড়। জনতা কার্ফু এবং দেশব্যাপী লকডাউনের মধ্যেও পাড়ার মোড়ে মোড়ে চায়ের চর্চা বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ। আর চাহিদা সে ভাবে না কমায় বন্ধ হয়নি চায়ের ভাঁড় তৈরির কাজও। শনিবার শহরের বেশ কয়েকটি ভাঁড়পট্টি ঘুরে দেখা গেল, করোনা-আতঙ্কের এই পরিস্থিতিতেও ভাঁড় তৈরির কাজ পুরোদমে চলছে সেখানে। ছোঁয়াচ বাঁচাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখারও কোনও চেষ্টা চোখে পড়ল না। শুক্রবার সকাল থেকে চায়ের ভাঁড়ের সঙ্গেই আবার যুক্ত হয়েছে দেদার প্রদীপ তৈরির কাজ!
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ, রবিবার ন’মিনিটের জন্য ‘দিয়া’ জ্বালাতে বলার পরেই? চড়া রোদে প্রদীপের ছাঁচে মাটি ঢালতে ব্যস্ত কুন্দন প্রজাপতি নামে এক ভাঁড়ের কারিগর বললেন, “এক ভদ্রলোক এসে কাল দুপুরেই ৬০০ প্রদীপ লাগবে বলে গেলেন।

মোদীজির নাম করে কিছু বলেননি। এমনিতে এই সময়ে প্রদীপের অর্ডার আসে না। তবে টিভিতে দেখছিলাম, মোদীজি দিয়া জ্বালাতে বলেছেন। ভালই হয়েছে। এই অসময়ে কয়েকটা প্রদীপ বেচে দিতে পারলে মন্দ কী!” কয়েক হাত তফাতেই কুন্দনের স্ত্রী সীতাদেবী পাড়ার আরও তিন মহিলার সঙ্গে সদ্য তৈরি কাঁচা ভাঁড় আর প্রদীপ রোদে শুকোতে দিচ্ছিলেন। কথাবার্তা শুনে তিনিও বলে উঠলেন, “সারা বছর আমরা যে কষ্ট করি, তখন তো কেউ দেখতে আসেন না। ভাগ্যিস, লোকের চা ছাড়া চলে না। যা-ই হয়ে যাক, পাড়ার চায়ের দোকানগুলো ঠিক খোলা থাকছে।”

গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দেশ জুড়ে চলা লকডাউনের মধ্যেই রাস্তায় বেরিয়ে চা খেতে গিয়ে লোকজনের জড়ো হওয়া নিয়ে প্রবল বিতর্ক চলছে। চা খেতে রাস্তায় বেরোনো কিছু লোকের ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে নিয়মভঙ্গের উদাহরণ হিসেবে। উত্তর কলকাতায় পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ক্যানাল ইস্ট রোডের পাশাপাশি দক্ষিণ কলকাতার কসবা, পণ্ডিতিয়া রোড বা টালিগঞ্জের ভাঁড়পট্টিগুলিতে ঘুরে দেখা গেল, গোটা দেশ যেখানে প্রায় ঘরবন্দি, সেখানে দিন-রাত একসঙ্গে বহু লোকই ভাঁড় বানাতে ব্যস্ত। মাস্ক পরার বা নিয়ম মেনে হাত পরিষ্কার করার কোনও চেষ্টাই সেখানে নেই। সকালে মাটিতে জল ঢেলে পা দিয়ে চেপে নরম করে দুপুরে ছাঁচে ঢালার কাজ করেন এক-একটি ঘরের চার-পাঁচ জন। এর পরে সেই ভাঁড় হয় রোদে, নয়তো ভাটিতে শুকোতে দেওয়ার দায়িত্ব পাড়ার মেয়েদের। কাজ শেষ হলে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ভাঁড়পট্টির চাতালে চলে আড্ডা। সবই আগের মতো। করোনায় অন্তত এই চত্বরের রোজনামচায় কোনও বদল নেই।
ভাঁড়পট্টির সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল আর্থপট মেকার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি মোহনলাল প্রজাপতি বললেন, “আসলে পাড়ার চায়ের দোকানগুলিতে ভাঁড়ের চাহিদা সে ভাবে কমেনি। মোদীজি কাল বলার পর থেকে অনেকেই প্রদীপ বানাতে শুরু করেছেন। দু’পয়সা রোজগারের সুযোগ এসেছে। কাউকে তো কাজ বন্ধ রাখতে বলতে পারি না। তবে আমরা যতটা পারছি, মাস্ক বিলি করছি।”

ক্যানাল ইস্ট রোডের ভাঁড়পট্টির বাসিন্দা রামমনোহর সিংহ জানালেন তাঁদের অন্য এক সমস্যার কথা। তাঁর দাবি, আগের মতো ঠেলাগাড়িতে করে জায়গায় জায়গায় ভাঁড় পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না। তাঁর কথায়, “ভাল পুলিশ হলে ছেড়ে দিচ্ছেন। কারণ, রাস্তার দোকান থেকে চা তো তাঁরাও খান। কিন্তু বেশির ভাগই আটকাচ্ছেন। তাই এখন দোকানিরাই এসে প্লাস্টিকে করে যাঁর যত ভাঁড় লাগে, নিয়ে যাচ্ছেন। ভাঁড়-পিছু ২০ পয়সা করে এ জন্য দাম কম নিতে হচ্ছে।”রামমনোহরের চিন্তা, রবিবার রাত ৯টার জন্য ‘প্রধানমন্ত্রীর দিয়া’ও কম দামে ছাড়তে হলে মুশকিল।

Narendra Modi Corona Virus Lock Down
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy