Advertisement
E-Paper

তালাবন্দির ময়দানে মুক্ত শুধু ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’

টানা লকডাউনের জেরে অসংগঠিত শিল্পের অজস্র শ্রমিকের মতোই খিদিরপুর, রাজাবাজার কিংবা হেস্টিংসের জিশান, মকবুল বা সিরাজদের রোজগার এখন পুরো বন্ধ।

ফিরোজ ইসলাম

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫৪
একা এবং..: পেট ভরাতে এখন ময়দানের ঘাসই ভরসা ঘোড়াদের। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

একা এবং..: পেট ভরাতে এখন ময়দানের ঘাসই ভরসা ঘোড়াদের। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

লকডাউন জন্ম দিয়েছে বন্দি-মুক্তির এক ভিন্ন দৃশ্যের।

রেড রোডের দু’পাশে ময়দানের সবুজ ঘাসে চরে বেড়াচ্ছে সহিসহীন ঘোড়ার দল। মালিকদের কারও গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বার হওয়ার হুকুম নেই। অথচ, আস্তাবলের তালা খুলে ছেড়ে দিতে হয়েছে ক্ষুধার্ত ঘোড়াকে। জীবনানন্দ দাশের দেখা কলকাতাই যেন আচমকা ফিরে এসেছে টাইম মেশিনে। তবে, সে দিনের মহীনেরা আজ একেবারেই স্বস্তিতে নেই।

টানা লকডাউনের জেরে অসংগঠিত শিল্পের অজস্র শ্রমিকের মতোই খিদিরপুর, রাজাবাজার কিংবা হেস্টিংসের জিশান, মকবুল বা সিরাজদের রোজগার এখন পুরো বন্ধ। সামাজিক অনুষ্ঠান, বিয়ে কিংবা পর্যটন আবার কবে স্বাভাবিক হবে কেউ জানেন না। এ দিকে, লকডাউনে মানুষের জন্য দোকান খোলা থাকলেও ঘোড়ার দানাপানির জোগান নেই।

যাঁরা ঘাস, বিচালি সরবরাহ করতেন বিহার বা উত্তরপ্রদেশের সেই সব মানুষও ফিরে গিয়েছেন নিজের রাজ্যে। ছোলা বা ভুসির দোকান কোথাও খোলা নেই। যেটুকু সঞ্চয়ে ছিল তা-ও ফুরিয়ে আসছে দ্রুত।

পঞ্জাব কিংবা বিহার থেকে আনা দেড়-দু’লক্ষ টাকা দামের ঘোড়ার রোজকার খাবার জোগাড় করাই দুরূহ হয়ে উঠেছে। কার্যত কাঁদছেন ঘোড়ার মালিকেরা। মেটিয়াবুরুজের শেখ নইমের কথায়, ‘‘আর কয়েক দিন এমন চললে চোখের সামনে ঘোড়ার মৃত্যু দেখতে হবে। রোজ যতটা খাবার লাগে তার চার ভাগের এক ভাগও জোটাতে পারছি না।’’

রাজাবাজারের মহম্মদ মইনুদ্দিনের কথায়, ‘‘রাস্তায় চলা গাড়ি বসিয়ে রাখা যায়। কিন্ত ঘোড়াকে তো খাবার দিতেই হবে। কী ভাবে সামলাব বুঝতে পারছি না।’’ এক-এক দিনে একটি ভাল জাতের ঘোড়ার দানাপানির পিছনে গড়ে খরচ হয় পাঁচ-ছ’শো টাকা। যার মধ্যে কেজি দুয়েক ছোলা লাগে। তা ছাড়াও বিচালি, ঘাস এবং নিয়মিত পরিচর্যার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ এবং প্রসাধন লাগে।

শীতের মরসুমে ঘোড়ার গাড়ি থেকে মালিকদের রোজগার নেহাত মন্দ হয় না। ল্যান্ডো কিংবা ফিটন গাড়ির যুগ পেরিয়ে ভিক্টোরিয়া চত্বরে এখন চোখে পড়ে গুজরাতি গাড়ি। যার বেশির ভাগই আবার টেলি ধারাবাহিক মহাভারত কিংবা বাহুবলী ছবির আদলে তৈরি।

মুখার্জি ক্যারেজের প্রবাল মুখোপাধ্যায় বহু বছর ধরে টলি পাড়ায় ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া দেন। ‘লাস্ট লিয়র’-এর মতো ছবিতে তাঁর ঘোড়ার গাড়িতেই চড়তে দেখা গিয়েছে অমিতাভ বচ্চন, অর্জুন রামপালদের। তাঁর দশটি ঘোড়া রয়েছে। সেই প্রবালবাবুও বলছেন, ‘‘রোজ সাত-আট হাজার টাকার খাবার কোথায় পাব বুঝতে পারছি না। কয়েক মাস এমন চললে পথে বসব। এদের কথাও প্রশাসন একটু ভাবুন।’’

তবে, প্রবালবাবু এখনও আস্তাবল খুলে না দিলেও অন্য অনেককেই পরিস্থিতির চাপে তা করতে হয়েছে। তাই বেড়াতে নয়, খিদে মেটানোর তাগিদেই ময়দানের ঘাসের উপরে চরছে ঘোড়ারা।

LOckdown Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy