Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

গয়না-সহ লকার গায়েব, অভিযুক্ত ব্যাঙ্ক

মেয়ের বিয়ে সামনেই। তাই ব্যাঙ্কের লকারে রাখা গয়না আনতে গিয়েছিলেন জ্যোতির্ময় বসু। কিন্তু ব্যাঙ্কে এসে জানতে পারলেন, তাঁর লকার দিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্য কাউকে। আর গয়না? ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের উত্তর, ‘‘তা জানি না।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৫ ০২:১৩
Share: Save:

মেয়ের বিয়ে সামনেই। তাই ব্যাঙ্কের লকারে রাখা গয়না আনতে গিয়েছিলেন জ্যোতির্ময় বসু। কিন্তু ব্যাঙ্কে এসে জানতে পারলেন, তাঁর লকার দিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্য কাউকে। আর গয়না? ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের উত্তর, ‘‘তা জানি না।’’

শ্যামবাজারের গোপীমোহন দত্ত লেনের বাসিন্দা জ্যোতির্ময় বসু ও শিখা বসু ভাবতেই পারেননি এমনটাও ঘটতে পারে! এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের ভূপেন বসু অ্যাভিনিউ-এর শাখায় প্রায় বছর ২৫ ধরে অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাঁদের। ৯ অক্টোবর তাঁরা ওই শাখায় যান মেয়ের বিয়ের জন্য গয়না তুলবেন বলে। তখনই ব্যাঙ্ক জানায়, তাঁদের লকার দিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্য কোনও ব্যক্তির নামে।

কিন্তু কেন? ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের বক্তব্য, প্রায় ৮ বছর ধরে লকারের ভাড়া বাকি ছিল জ্যোতির্ময়বাবুর। তাই লকার ভাঙতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। তবে লকার ভাঙলেও নিয়মানুযায়ী লকারের সম্পত্তি থাকবে ব্যাঙ্কের হেফাজতে। কিন্তু ম্যানেজারের দাবি, লকারে কিছুই মেলেনি। শুধু তাই নয়, এ রকম ১৭টি খালি লকার নাকি মিলেছে ব্যা‌ঙ্কের ওই শাখায়। নিয়মানুযায়ী লকার ভাঙার আগে উপভোক্তাকে জানাতে হবে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা তিন বার জ্যোতির্ময়বাবুর ঠিকানায় চিঠি পাঠান। কিন্তু সেখানে পাওয়া যায়নি কাউকেই। জ্যোতির্ময়বাবু জানান, আগে তাঁরা ২৪৩/২সি এপিসি রোডে থাকতেন। প্রায় বছর ২০ তাঁরা গোপীমোহন দত্ত লেনের বাসিন্দা। জ্যোতির্ময়বাবুর প্রশ্ন, ব্যাঙ্কের যাবতীয় নথি তাঁর বর্তমান ঠিকানায় আসে। তা হলে শুধু লকার সংক্রান্ত চিঠি কেন পাঠানো হল পুরনো ঠিকানায়? ‘‘অসুস্থতা-সহ নানা কারণে আমি লকারের বকেয়া সময়ে মেটাতে পারিনি। লকারও ওঁরা ভাঙতেই পারেন। কিন্তু আমার অজ্ঞাতসারে কেন?’’, বলেন জ্যোতির্ময়বাবু।

ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের দাবি, ঠিকানা বদলের কথা তাঁরা জানতেন না। জ্যোতির্ময়বাবু বলেন, ‘‘ঠিকানা বদলেছি ১৯৯৩ সালে। পাসবইয়ে নতুন ঠিকানা লিখে দিয়েছিলেন ব্যাঙ্ককর্মীরাই। চলতি বছরের জুলাই মাসেও নতুন ঠিকানায় ব্যাঙ্কের চিঠি এসেছে। কেবল লকারের ক্ষেত্রেই এমন বিভ্রাট কেন?’’ তাঁর অভিযোগ, লকার ভেঙে তাঁর সম্পত্তি চুরি করেছেন ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ। ১৫ অক্টোবর তিনি শ্যামপুকুর থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন। তাঁর দাবি, লকারে কয়েক লক্ষ টাকার গয়না ছিল। লকারের চাবিও আছে তাঁর কাছে। ব্যাঙ্ক অবশ্য সব অস্বীকার করে জানিয়েছে, নিয়মমাফিকই লকার ভেঙেছেন তাঁরা। তখন দেখা গিয়েছে, লকার ফাঁকা।

জ্যোতির্ময়বাবুর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাঙ্কের ওই শাখার ম্যানেজার বলেন, ‘‘লকারের এবং অন্য কাজের বিষয় দু’টি আলাদা। আমাদের খাতায় নতুন ঠিকানা তোলা নেই।’’ তা হলে গোপীমোহন দত্ত লেনের ঠিকানায় অন্য কাগজপত্র পৌঁছল কী করে? সদুত্তর দিতে পারেননি ম্যানেজার। উত্তর দিতে নারাজ শ্যামপুকুর থানাও। তদন্তাধীন বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে না বলে এড়িয়ে গিয়েছেন থানার ওসি। ব্যাঙ্কের কিছু ক্ষেত্রে যে গাফিলতি রয়েছে তা কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছেন এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের কলকাতার মুখ্য কার্যালয়ের আধিকারিক। কিন্তু লকারের ভিতরের সম্পত্তির হদিস কোথায়? সে ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE