Advertisement
E-Paper

ভেন্টিলেটরে উনিশ বছর, ভোট দেওয়ার স্বপ্ন যুবকের

হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে দশ বছরের বালক থেকে উনত্রিশের যুবক হয়েছেন। গলায় লাগানো ট্র্যাকিওস্টোমির টিউব। গলার নীচ থেকে শরীরের পুরো অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৯ ০২:১৮
হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে সোনুকুমার যাদব। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে সোনুকুমার যাদব। নিজস্ব চিত্র

যে রাষ্ট্র তাঁকে গত উনিশ বছর ধরে বাঁচিয়ে রেখেছে, তার নাগরিক হিসেবে ভোটাধিকার চান তিনি।

তিনি, হাওড়ার টিকিয়াপাড়ার সোনুকুমার যাদব। ২০০০ সাল থেকে ‘বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি’র (বিআইএন) ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) শয্যাই তাঁর জগৎ। ভেন্টিলেটর চলছে নিরন্তর। তা থামলে আধ ঘণ্টার বেশি বাঁচতে পারবেন না সোনু। সরকারি হাসপাতালের কার্যত ‘মহার্ঘ’ আইসিইউ শয্যা, ভেন্টিলেটর ও আনুষঙ্গিক সব চিকিৎসা দিয়ে সরকার বা রাষ্ট্র টানা উনিশ বছর তার এক নাগরিককে বাঁচিয়ে রেখেছে, এমন নজির বিশেষ নেই।

সেই সোনু এ বার উনত্রিশ পার করেছেন। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে দশ বছরের বালক থেকে উনত্রিশের যুবক হয়েছেন। গলায় লাগানো ট্র্যাকিওস্টোমির টিউব। গলার নীচ থেকে শরীরের পুরো অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তাঁর আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড করানোর কথা কেউ সে ভাবে ভাবেননি। বুদ্ধিমান এবং দেশ-দুনিয়ার খবর রাখা যুবক হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে বলেন, ‘‘আমার অবস্থা প্রায় মরার মতো, বাস্তবটা হল, এখনও মরে যাইনি। মাথা সজাগ। নিজের মতাধিকার প্রয়োগ করতে চাই। নেতা-মন্ত্রীদের কাছে অনুরোধ, আমাকে ভোটাধিকার দেওয়া হোক। এ বছর তো দেরি হয়ে গেল। বেঁচে থাকলে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে চাই।’’

দিব্যি হেসে-খেলে দিন কাটছিল সোনুর। বাবা নেপাল যাদবের চায়ের দোকান। ছয় ভাইবোনের সবার ছোট সোনু এক দিন রাস্তায় বন্ধুদের সঙ্গে খেলছিল। এক বন্ধু মজা করে তাকে ধাক্কা দিলে ফুটপাতে পড়ে সংজ্ঞা হারায় বালক। আঘাত লাগে পিঠের দিকে। চিকিৎসকেরা জানান, মাথা ও সুষুম্নাকাণ্ডের মাঝের একটি স্নায়ুতে গুরুতর আঘাত লাগায় সোনুর গলার নীচ থেকে গোটা শরীর অসাড় হয়ে যায়। এমনকি নিজে থেকে শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতাও কমে যায়। শুরু হয় হাসপাতালের চার দেওয়ালে ভেন্টিলেটর-নির্ভর জীবন। সিসিইউ-এর কর্মীদের যত্ন আর নজরদারিতে উনিশ বছর ধরে জীবিত আছেন সোনু। চিকিৎসক ও কর্মীদের দেওয়া মোবাইলে সিনেমা ও খেলা দেখে এবং গান ও খবর শুনে সময় কাটান।

কেন ভোট দিতে চান? তিনি বলেন, ‘‘সরকারের জন্য আমি এখনও বেঁচে। ভোট দিয়ে দেশের নাগরিক হওয়ার অনুভবটা পেতে চাই। বড় হয়ে ওঠার একটা অনুভূতি এর মধ্যে থাকে। বড় যে হয়েছি, অন্তত এ ভাবে সেটা বোঝার জন্য লোভ হয়।’’

উনিশ বছর ধরে প্রত্যেকটা দিন সোনুর মা বাসন্তীদেবী ছেলের জন্য বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসছেন। মায়ের দিকে তাকিয়ে ছেলে বলেন, ‘‘মায়ের বয়স হচ্ছে, আর কত পারবে! যদি এ ভাবেই বাড়িতে থাকতে পারতাম, ভাল লাগত।’’ বলে কিছু ক্ষণ থেমে আবার বলেন, ‘‘যে সরকারই আসুক, তারা যদি আমার মতো এমন ক্ষেত্রে আরও একটু বেশি অর্থ বরাদ্দ করেন, তবে ভাল হয়।’’ সোনুর দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা অ্যানাস্থেটিস্ট অমিতা আচার্যের কথায়, ‘‘সরকার অনেক করেছে ওঁর জন্য। তবে বিদেশে থাকলে হয়তো আরও একটু সুবিধা পেতেন। স্টিফেন হকিংয়ের মতো অনেকেই আছেন, যাঁরা শারীরিক সমস্যা নিয়েও কাজ করে সমাজে থেকে জীবন কাটান।’’

প্রিয় অমিতা আন্টির দিকে তাকিয়ে সোনু ধীরে ধীরে উচ্চারণ করেন, ‘‘পড়াশোনাটা করতে পারলে খুব ভাল হত।’’

Lok Sabha Election 2019 Vote Ventilation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy