Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভোটের সভায় ডাক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রতিবন্ধীদের

কলেজ স্ট্রিটের মহাবোধি সোসাইটিতে কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের প্রার্থী কনীনিকা বসু ঘোষ ও কলকাতা দক্ষিণের নন্দিনী মুখোপাধ্যায়দের রবিবারের ‘ভোকাল টনিক’ এমন এক ঝাঁক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণ-তরুণী বা প্রৌঢ়-প্রৌঢ়াকে উজ্জীবিত করল।

মুখোমুখি: উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার দুই বাম প্রার্থী কনীনিকা বসু ঘোষ এবং নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রতিবন্ধীরা। রবিবার, কলেজ স্ট্রিটে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

মুখোমুখি: উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার দুই বাম প্রার্থী কনীনিকা বসু ঘোষ এবং নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রতিবন্ধীরা। রবিবার, কলেজ স্ট্রিটে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৯ ০২:১৩
Share: Save:

সাঁতারে সাত বারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ভাই-বোনের গল্প শুনছিলেন কলকাতার দুই সিপিএম প্রার্থী। হাঁটুর নীচে একেবারেই ছোট দু’টি পা বা মূক-বধিরতার সমস্যা জয় করে সাঁতারপুলে মাত করছেন আমহার্স্ট স্ট্রিটের আজিবুর রহমান মোল্লা ও সুফিয়া মোল্লা!

তাঁদের বাবা গোলাম গউস মোল্লা বলছিলেন, জাতীয় স্তরে বারবার জিতেও আমেরিকায় আন্তর্জাতিক আসর থেকে ছেলের নাম কী ভাবে বাদ পড়েছে! ছেলে এখন বাণিজ্য স্নাতকের দ্বিতীয় বর্ষে। মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। বাবার প্রশ্ন, ‘‘আমার ছেলেমেয়ের এত গুণ, ওদের স্বাবলম্বী করতে কোনও সরকারই কি কিছু করবে না?’’

কলেজ স্ট্রিটের মহাবোধি সোসাইটিতে কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের প্রার্থী কনীনিকা বসু ঘোষ ও কলকাতা দক্ষিণের নন্দিনী মুখোপাধ্যায়দের রবিবারের ‘ভোকাল টনিক’ এমন এক ঝাঁক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণ-তরুণী বা প্রৌঢ়-প্রৌঢ়াকে উজ্জীবিত করল। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-অফিস বা বাসে-ট্রেনে এ দেশে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের কথা ভেবে সংবেদনশীলতা এখনও খুব সুলভ নয়। তবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের অধিকার নিয়ে সক্রিয় সমাজকর্মীদের অনেকেই মানেন, দেশের সাম্প্রতিক ‘প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের অধিকার আইন’ (২০১৬) প্রসারিত করার ক্ষেত্রে বামপন্থীদের ধারাবাহিক ভূমিকা আছে।

সিপিএমের এ বারের ইস্তাহারটিও দৃষ্টিহীন বা বধিরদের পড়ার উপযোগী হিসেবে পেশ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের কাছে পৌঁছনোর এই সভাতেও তার কিছু অংশ একটি ভিডিয়োয় বধিরদের বোঝার ‘সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ’ বা আকার-ইঙ্গিতে মেলে ধরা হল। বক্তাদের কথাগুলিও অনবরত ‘সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে’ তর্জমা করা হচ্ছিল।

এ দেশে বেশির ভাগ জায়গায় প্রতিবন্ধীদের জন্য র‌্যাম্প দুর্লভ! ‘‘মোদী সরকারের ‘অ্যাকসেসিবল ইন্ডিয়া’-প্রকল্পটি কি ‘অচ্ছে দিন’-এর মতোই অদৃশ্য হয়ে থাকবে?’’ — কনীনিকার ঝাঁঝালো প্রশ্নে শ্রোতাদের অনেকেই হাততালি দিলেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক নন্দিনী আক্ষেপ করছিলেন, প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ছাত্রছাত্রীদের পড়শোনায় প্রযুক্তির সহায়তা এখনও এ দেশে কার্যত দূর অস্ত্! শুভজিৎ মৌলিকের মতো সমাজকর্মীর মতে, ‘‘বাম আমলে প্রতিবন্ধীদের জীবনচর্যা খুব উন্নত না হলেও এ বিষয়ে সিপিএমের কিছু সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।’’ ন্যাশনাল প্ল্যাটফর্ম ফর রাইটস অব ডিসএবিলিটি মঞ্চের নেত্রী শম্পা সেনগুপ্তও মনে করেন, বাম ইস্তাহারে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আইন রূপায়ণ বা শিক্ষার অধিকারের আওতায় প্রতিবন্ধী শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

হাতের উপরে ভর দিয়ে হেঁটে স্মার্টফোনে প্রার্থীদের ছবি তুলছিলেন যাদবপুরের অলোক গায়েন। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী জনৈক বধির প্রৌঢ় ভিডিয়ো কল করে তাঁর দাদার সঙ্গে সভায় হাজির কয়েক জন পরিচিতের ‘কথা’ বলানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। ভোটের সভায় ডাক পাওয়াটা তাঁদের কাছেও বেশ অন্য রকম!

বিশেষ চাহিদাসম্পন্নেরা এ দেশে ১০ শতাংশের বেশি। তবে তাঁদের নিয়ে রাজনীতিকদের সচেতনতা নিতান্ত ‘করুণ’! মোদীর ‘মন কি বাত’-এ ‘দিব্যাঙ্গ’-তকমাটি পছন্দ করেন না বহু প্রতিবন্ধীই। তা যেন প্রকারান্তরে তাঁদের অন্য রকম শরীর নিয়ে ব্যবসার রাস্তা খুলে দেয়। নতুন আইন চালুর সময়েও রাজ্যে শাসক দলের পোড়খাওয়া এক সাংসদ বলেছিলেন, প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে তাঁর কিছুই জানা নেই। এমনই নানা প্রসঙ্গ এ দিন উঠে আসছিল!

তবে প্রতিবন্ধীদের জন্য এমন সভায় তাঁদের সায় নেই বলে জানিয়েছেন, তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ। পার্থ বলেন, ‘‘সিপিএম করছে বলেই এ ধরনের সভা করার কোনও মানে হয় না।’’ ‘‘আমিও তো রোড-শোয়ে অজস্র প্রতিবন্ধী মানুষের সঙ্গে হাত মিলিয়েছি!’’— বলছেন প্রার্থী রাহুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE