Advertisement
E-Paper

দেওয়াল লেখার বরাত পেলেন না বহু শিল্পী

আগামী রবিবার শেষ দফার ভোট। উত্তর কলকাতার রমেশ দত্ত স্ট্রিটে গিয়ে দেখা গেল, পেশাদার দেওয়াল-লিখিয়েরা বেশ কিছু দিন আগে থেকেই ঝাঁপ বন্ধ করতে শুরু করেছেন।

কৌশিক ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ০১:০৯
এমন লেখা কমই দেখা গিয়েছে এ বারের ভোট-পর্বে। —নিজস্ব চিত্র।

এমন লেখা কমই দেখা গিয়েছে এ বারের ভোট-পর্বে। —নিজস্ব চিত্র।

এ বছরের লোকসভা ভোট শুরুর সময় থেকেই প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ফ্লেক্স এবং কাট আউটের বাজার ছিল মন্দা। তার মূলে ছিল নির্বাচন কমিশনের একটি নির্দেশ। যাতে বলা হয়েছিল, ভোট-প্রচারে প্লাস্টিকের ব্যবহার যথাসম্ভব কম করতে হবে। বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হাতে ছিল দেওয়াল লিখন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যাঁরা পেশাদার দেওয়াল-লিখিয়ে, তাঁদের বেশিরভাগেরই এ বার কার্যত কোনও ব্যস্ততা নেই।

আগামী রবিবার শেষ দফার ভোট। উত্তর কলকাতার রমেশ দত্ত স্ট্রিটে গিয়ে দেখা গেল, পেশাদার দেওয়াল-লিখিয়েরা বেশ কিছু দিন আগে থেকেই ঝাঁপ বন্ধ করতে শুরু করেছেন। তাঁদের অধিকাংশই জানালেন, অনেকেই দেওয়াল লেখার জন্য ‘বায়না’ পাননি।

এর উল্টো ছবিও অবশ্য আছে। অনেক এলাকায় রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকেরা নিজেরাই দেওয়াল লিখেছেন। যদিও সামগ্রিক বিচারে সেই সংখ্যা কম। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এলাকা পরিষ্কার রাখতেই কি বহু জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলির এই নতুন উদ্যোগ?

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পেশায় ‘লেটারম্যান’ নারায়ণ পেড়ার কথায়, ‘‘এ বারই তো এমন দেখছি। মাস দুই আগে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর থেকেই বাজার ফাঁকা।’’ নারায়ণবাবু জানালেন, একেবারে প্রথম দিকে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এসে তাঁর কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন। সেই মতো উত্তর কলকাতার মাত্র গোটা পাঁচেক দেওয়ালে প্রার্থীদের নাম লেখা হয়েছে। কিন্তু, অধিকাংশ দেওয়ালই ফাঁকা বলে তাঁর দাবি।

রমেশ দত্ত স্ট্রিটে কাট আউট ও ফ্লেক্সের মাধ্যমে প্রচারের রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। পেশাগত দেওয়াল- লিখিয়েরা বাইরে থেকে ভিড় জমাতেন এই অঞ্চলে। এ বার বাজার মন্দা দেখে তাঁরাও চলে যেতে শুরু করেছেন। প্রসঙ্গত, দেওয়াল লিখনের চিরাচরিত ভঙ্গিতে খানিকটা বদল আনার জন্য যে কোনও রাজনৈতিক দল পেশাদার লিখিয়েদের ভাড়া করে। কাজের বিনিময়ে তাঁরা পারিশ্রমিক পান। দিনে প্রায় ২০০০ টাকা। রাজনৈতিক দলগুলি রং সরবরাহ করে। তুলি লেখকদের নিজস্ব। রমেশ দত্ত স্ট্রিটেরই এক বাসিন্দা তথা দেওয়াল-লিখিয়ে সৌমেন মানিক বলেন, ‘‘ভোটের সময়ে বিভিন্ন কার্টুন এবং ছবি আঁকা হয়। এ বার তা প্রায় চোখে পড়েনি। ফলে দেওয়াল লেখা বা ছবি আঁকার কোনও কাজই পাইনি।’’

দেওয়াল পরিষ্কার রাখার এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ। পরিবেশ দফতরের মেয়র পারিষদ তথা তৃণমূল নেতা স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘এই ধরনের উদ্যোগের জন্য সব রাজনৈতিক দলেরই ধন্যবাদ প্রাপ্য। দেওয়াল লেখার ফলে দৃশ্যদূষণ হয়। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে দেওয়াল না লিখলেও প্রচারে কোনও খামতি থাকে না।’’

নির্বাচন কমিশনের নিয়ম বলছে, সরকারি সম্পত্তির উপরে কোনও ভাবেই লেখা যাবে না। এমনকি, কোনও বাড়ির দেওয়ালে লিখতে হলে মালিকের অনুমতি প্রয়োজন। ভোট মিটলে ওই দেওয়াল লিখন মুছে দেওয়া সংশ্লিষ্ট দলেরই কাজ।

বিজেপির স্বচ্ছ ভারত অভিযানের আহ্বায়ক প্রসেনজিৎ ভৌমিক বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে দেওয়াল লেখার বিরোধী। কারণ, এতে দেওয়াল নোংরা হয়। তা ছাড়া, এ বার রাজনৈতিক দলগুলির খরচ বেঁধে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ফলে দেওয়াল লিখনের ক্ষেত্রেও খরচের একটা ব্যাপার থেকে যায়।’’

সিপিএম নেতা চয়ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দক্ষিণ শহরতলি ও যাদবপুর এলাকায় দেওয়াল লিখন হলেও সামগ্রিক ভাবে তা অনেক কম। টাকা ছাড়া একটা বড় সমস্যা অবশ্যই দেওয়াল-মালিকের অনুমতি নেওয়া। অনেকেই অনুমতি দিতে চান না।’’

কংগ্রেস নেতা তথা পুরসভায় কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক প্রকাশ উপাধ্যায় জানান, রাজনৈতিক দলগুলি যাতে দেওয়াল না লেখে, সে জন্য নির্বাচনের দিন ঘোষণার অনেক আগে থেকেই পুর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘দলমত নির্বিশেষে একটা বড় অংশ এই অনুরোধ মেনেছে। শহরে দেওয়াল লিখন হলেও তা কম হয়েছে।’’

Lok Sabha Election 2019 Artist
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy