Advertisement
E-Paper

নজরদারও এ বার ক্যামেরার নজরে

চোখের উপরে অলক্ষ্যে নজর রাখবে আরও কয়েক জোড়া চোখ! নজরদারকেও এ বার আনতে হবে তীক্ষ্ণ নজরদারির আওতায়। গোপন ক্লোজ্ড সার্কিট টিভি ক্যামেরা বসিয়ে দেখতে হবে, তিনি তাঁর কাজ ঠিক মতো করছেন কি না!

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০২:২১

চোখের উপরে অলক্ষ্যে নজর রাখবে আরও কয়েক জোড়া চোখ!

নজরদারকেও এ বার আনতে হবে তীক্ষ্ণ নজরদারির আওতায়। গোপন ক্লোজ্ড সার্কিট টিভি ক্যামেরা বসিয়ে দেখতে হবে, তিনি তাঁর কাজ ঠিক মতো করছেন কি না! নাশকতা রুখতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকে যতটা সম্ভব নিশ্ছিদ্র করার লক্ষ্যে এখন এই দাওয়াই বাতলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

কারণ মন্ত্রকের মতে, এক্স-রে ব্যাগেজ স্ক্যানারের মতো বিপজ্জনক বস্তু শনাক্তকারী আধুনিক সরঞ্জাম নিয়ে বসে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা বহু ক্ষেত্রেই মনিটরে দৃষ্টি না দিয়ে গল্পে মশগুল থাকেন। কখনও বা খবরের কাগজের পাতায় চোখ রাখেন কিংবা ঝিমোন। ‘‘এই ধরনের ত্রুটিবিচ্যুতি বহু মানুষের জীবন মুহূর্তে বিপন্ন করে তোলে।’’ সাম্প্রতিক এক বার্তায় বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সহ-অধিকর্তা যশপাল সিংহ।

গোয়েন্দাদের বক্তব্য, নিরাপত্তায় এই ধরনের গাফিলতির সুযোগ নিয়ে আইইডি কিংবা অন্য অস্ত্র নিয়ে জঙ্গিরা অবাধে ঢুকে পড়তে পারে।

মন্ত্রকের একটি সূত্রের খবর, কলকাতা বিমানবন্দর, হাওড়া ও শিয়ালদহ রেল স্টেশন এবং মেট্রোর কয়েকটি স্টেশনে এক্স-রে স্ক্যানার নিয়ে তল্লাশির দায়িত্বে থাকা রক্ষীদের উপরে সিসিটিভি-র নজরদারি শীঘ্রই শুরু হবে।

সুজয় ঘোষের ‘কহানি’ ছবিতে কলকাতা মেট্রোয় বিষাক্ত গ্যাসের হামলায় নিহত হন কয়েকশো যাত্রী। সেলুলয়েডের পর্দা শুধু নয়, বাস্তবেও কলকাতা মেট্রোর ক্ষেত্রে এই ধরনের রাসায়নিক অস্ত্রের বিপদের ঝুঁকির কথা ২০০৫-এর অগস্টে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি জানিয়েছিল।

বস্তুত বিমানবন্দর, ভিআইপি-র সভা বা অনুষ্ঠানস্থল, রেল স্টেশন ও মেট্রো স্টেশনের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক্স-রে ব্যাগেজ স্ক্যানারের মতো সরঞ্জাম এক রকম অপরিহার্য বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলি এক বাক্যে স্বীকার করছে। তাদের বক্তব্য, জঙ্গি হামলার আশঙ্কা যে ভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে এই ধরনের সরঞ্জাম আরও বেশি সংখ্যায় রাখতে হবে।

স্ক্যানারে ঢোকানো ব্যাগ বা স্যুটকেসের ভিতরে থাকা যাবতীয় জিনিসপত্রের ছবি এক্স রে-র মাধ্যমে ফুটে ওঠে কম্পিউটারের মনিটরে। দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষী মনিটরে চোখ রেখেই নিষিদ্ধ, বিপজ্জনক বস্তু চিনে নিতে পারেন বা মনিটরের ছবি দেখে সন্দেহজনক কিছু মনে হলে ব্যাগ খুলে তল্লাশি চালাতে পারেন।

কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, বহু ক্ষেত্রেই ধরা পড়েছে, এক্স-রে স্ক্যানার নিয়ে নজরদারির দায়িত্বে থাকা রক্ষী মনিটরে চোখ না রেখে ঘুমে ঢুলছেন কিংবা কোনও সহকর্মীর সঙ্গে গল্প করছেন। সেই জন্যই নিরাপত্তারক্ষীদেরও সিসিটিভি-র নজরদারির আওতায় আনা প্রয়োজন।

মন্ত্রকের এক অফিসারের কথায়, ‘‘এটা ডাবল চেক। এটা দুর্ভাগ্যের যে, নিরাপত্তারক্ষীদের উপরেই এ বার গোপন সিসিটিভি দিয়ে নজরদারি চালাতে হবে। কারণ, হাজার হাজার সাধারণ মানুষের জীবনের ঝুঁকি নেওয়া যায় না।’’

কলকাতাতেও রেল স্টেশন বা মেট্রো স্টেশনের অনেক জায়গায় নিরাপত্তারক্ষীদের অমনোযোগ, ‘অন্য কাজে ব্যস্ত থাকা’-র ফলে যাত্রীদের ব্যাগ-স্যুটকেস বহু ক্ষেত্রেই তল্লাশির বাইরে থেকে যায়। অনেক সময়ে দেখা যায়, মেট্রো রেলের নিত্যযাত্রীরা অভ্যাসবশত স্ক্যানারে ব্যাগ দিচ্ছেন। কিন্তু আড্ডায় ব্যস্ত নিরাপত্তারক্ষীর মনিটরে চোখ রাখারও ফুরসত নেই।

তবে কলকাতা মেট্রো রেলের ২৪টি স্টেশনের প্রতিটিতে একটি করে স্ক্যানার থাকলেও তার মধ্যে ১০টি স্থায়ী ভাবে অকেজো থাকছে। বর্তমানে এই তালিকায় টালিগঞ্জ ও এসপ্ল্যানেডের মতো অতি ব্যস্ত স্টেশনের স্ক্যানারও রয়েছে বলে জানাচ্ছেন রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র।

কিন্তু কেন এই হাল?

রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘যন্ত্রগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি পাঁচ বছরের পুরনো। নিয়মিত সারাই হচ্ছে। কিন্তু একটি সারাই করার পরে আবার অন্যটি খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’’ তিনি জানান, এ বছর শারদোৎসবের আগে নতুন কিছু এক্স-রে ব্যাগেজ স্ক্যানার কলকাতা মেট্রো পাবে। অর্থাৎ, ততদিন ঝুঁকি নিয়েই চলবে মেট্রো।

আইবি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘স্ক্যানার ঠিক মতো কাজ করলে তবে তো তার দায়িত্বে থাকা রক্ষীদের উপরে নজরদারির প্রশ্ন। কলকাতা মেট্রো আগে সব স্টেশনে এক্স-রে স্ক্যানার ঠিক মতো চালু করুক!’’

surabek biswas luggage scanner security guards cctv camrea metro station cctv airport cctv rail station cctv
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy