Advertisement
E-Paper

মূর্তির মানহানিতে ক্ষোভে ফুঁসছেন ‘মূর্তি ম্যান’

রেলের প্রাক্তন কর্মী মধুসূদনবাবুকে অনেকেই চেনেন ‘মূর্তি ম্যান’ নামে। রাস্তায় মূর্তি দেখলেই দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ০১:০৫
মধুসূদন মাজি।

মধুসূদন মাজি।

তিনি ‘মূর্তি ম্যান’। কোথাও মূর্তি ভাঙার কথা শুনলেই ছুটে যান। গত বছর কেওড়াতলা শ্মশান সংলগ্ন উদ্যানে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি ভাঙার পরে সেখানেও পৌঁছে গিয়েছিলেন। সেই ঘটনা ব্যথিত করেছিল তাঁকে। মঙ্গলবার বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনাতেও প্রবল ক্ষুব্ধ তিনি।

মঙ্গলবার তাঁকে ফোন করতেই ধরলেন স্ত্রী। স্বামী কিছু বলার আগে নিজেই উত্তেজিত ভাবে বললেন, ‘‘ক’দিন আগেই ওঁর হাত ভেঙেছে। চিকিৎসকেরা হাত বেশি নাড়াতে বারণ করেছেন। তবু কথা শুনবেন না! খবর দেখে কাল উনি এতই উত্তেজিত যে, ভাঙা হাতেই টেবিল চাপড়াচ্ছেন!’’ ফোনের ও পার থেকে শোনা যায়, বৃদ্ধ চিৎকার করছেন, ‘‘ওরা কী করেছে জানো? বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে! এত সাহস হয় কী করে?’’

বরাহনগরের নৈনানপাড়া লেনের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধের নাম মধুসূদন মাজি। আদতে হাওড়ার বাসিন্দা, রেলের প্রাক্তন কর্মী মধুসূদনবাবুকে অনেকেই চেনেন ‘মূর্তি ম্যান’ নামে। রাস্তায় মূর্তি দেখলেই দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। দেখে নেন আপাদমস্তক। শরীরের তুলনায় মূর্তির মাথার আকার বড় নয় তো! মূর্তিটি যাঁর, তাঁর নাম এবং জন্ম-মৃত্যুর তারিখ ঠিকঠাক লেখা রয়েছে তো! ভুলচুক কিছু দেখলেই রাজ্যপাল, রাজ্যের বিভিন্ন দফতর এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানদের কাছে প্রতিবাদপত্র পাঠিয়ে দেন তিনি। বৃদ্ধের দাবি, সেই অনুযোগে কাজও হয়। দেশ জুড়ে যখন মূর্তি ভাঙার প্রতিযোগিতা চলে, তখন মূর্তির শুদ্ধতা রক্ষায় ব্যস্ত এই বৃদ্ধই এ দিন প্রবল বিরক্ত বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনায়।

মধুসূদনবাবু এ দিন বলেন, ‘‘কাল রাতে টিভিতে দেখছিলাম। এ যা চলছে, তাতে এরা যা খুশি তা-ই করতে পারে! ওরা বিদ্যাসাগরকে চেনে না, তা তো নয়। তবু ভেঙেছে। বুঝতে হবে, ইচ্ছে করেই ভেঙেছে।’’ বৃদ্ধের যুক্তি, ‘‘হিংসার আদর্শ অনুযায়ী যাঁকে সামনে পাবে, তাঁকেই নিকেশ করার মানসিকতা এটা। কোনও মানুষ না পেয়ে ওদের রাগ গিয়ে পড়েছে বিদ্যাসাগরের উপরে। আদর্শকে এ ভাবে খুন করা যায় না। ওরা জানে না, কার গায়ে হাত দিয়েছে।’’ গলায় ঝরে পড়ে প্রবল ক্ষোভ।

একই ভাবে মধুসূদনবাবু সরব হয়েছিলেন কেওড়াতলা শ্মশান লাগোয়া উদ্যানে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি ভাঙা এবং তাতে কালি লাগানোর ঘটনায়। তবে এ বারের রাগটা আরও বেশি। মধুসূদনবাবুর স্ত্রী ছায়াদেবী বলছিলেন, ‘‘সকাল থেকেই জেদ ধরেছেন, বিদ্যাসাগর কলেজে যাবেন। মূর্তিটার কতটা ক্ষতি হয়েছে, কী ভাবে সংস্কার করা যায়, ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে দেখতে চান। অনেক কষ্টে আটকানো গিয়েছে।’’ পুত্রবধূ শোভনারও মত, অশক্ত শরীরে এ সবের মধ্যে না যাওয়াই ভাল।

২০১২ সালে এই মধুসূদনবাবুই এক অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র সদনে গিয়ে দেখেন, সেই চত্বরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় মূর্তি থাকলেও তাতে লেখা নেই, মূর্তিটি আদতে কার! এ নিয়ে সদনের তৎকালীন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসারকে চিঠি দেন তিনি। সদন কর্তৃপক্ষ মূর্তির নীচে রবীন্দ্রনাথের নাম এবং জন্ম-মৃত্যুর তথ্য লিখলেও মৃত্যুর তারিখে ভুল ছিল। আবার চিঠি দেন মধুসূদনবাবু। ভুল দ্রুত সংশোধন হয় সেই চিঠি পেয়ে। একই ভাবে কলকাতা ও রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের রবীন্দ্র-মূর্তি, বাবুঘাটের কাছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মূর্তি, ময়দান এলাকায় মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তি এবং আকাশবাণী ভবনের সামনে চিত্তরঞ্জন দাশের মূর্তির নীচেও নাম এবং জন্ম-মৃত্যুর তথ্য লেখার আর্জি জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন মধুসূদনবাবু। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী কাজ করার কথা জানিয়ে এসেছিল সরকারি উত্তরও। পরিবারের কথায় কান না দিয়ে মধুসূদনবাবু বললেন, ‘‘এই মূর্তিগুলো আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ। বিদ্যাসাগর কলেজে এক বার যাওয়া দরকার ছিল।’’

কয়েক মিনিট চুপ থেকে বৃদ্ধ এর পরে বলেন, ‘‘এখনও ওদের না থামালে যে কোনও দিন যে কেউ আমাদের সংস্কৃতি ভেঙে দেবে!’’

Vidyasagar College Vandalization অমিত শাহ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় Mamata banerjee TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy