E-Paper

পুলিশের চালক ও সোর্স থেকে বেআইনি অস্ত্রের ব্যবসায় মধুসূদন

অনলাইনে টাকা নিয়ে কোথায় আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে ব্যারাকপুর সিটি পুলিশ। ব্যারাকপুরের নগরপাল মুরলীধর শর্মা বলেন, ‘‘তদন্তে অনেক সূত্র মিলেছে। ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৫ ০৬:৪২
ধৃত মধুসূদন ওরফে লিটন মুখোপাধ্যায়।

ধৃত মধুসূদন ওরফে লিটন মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

একেবারে প্রথম দিকে পুলিশের গাড়ির চালক। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পুলিশ আধিকারিকের সোর্স হিসেবে পরিচিত ছিল মধুসূদন মুখোপাধ্যায়। তারও পরে সেই সব ছেড়ে বেআইনি অস্ত্র কারবারে হাত পাকাতে শুরু করেছিল সে। প্রায় বছর পঁচিশ ধরে রাজ্য জুড়ে সেই ব্যবসাই চালাচ্ছিল বিপুল অস্ত্র ভান্ডারের মালিক, রহড়ার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব ওই ব্যক্তি। এমনকি, দেশি-বিদেশি অস্ত্র বিক্রি করে টাকার লেনদেন করত অনলাইনে!

সোমবার বিপুল অস্ত্র-সহ মধুসূদনকে গ্রেফতারের পরে এমনই সব তথ্য উঠে এসেছে তদন্তকারীদের সামনে। অনলাইনে টাকা নিয়ে কোথায় আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে ব্যারাকপুর সিটি পুলিশ। ব্যারাকপুরের নগরপাল মুরলীধর শর্মা বলেন, ‘‘তদন্তে অনেক সূত্র মিলেছে। ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ মধুসূদনকে মঙ্গলবার ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়।

সূত্রের খবর, বিহার ও উত্তরপ্রদেশ সীমান্তের এক কুখ্যাত অস্ত্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ধৃতের। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র সরবরাহ করত সে। প্রয়োজনে আস্তানা বদল করত। সেই সূত্রে বর্ধমানের গলসিতেও থেকেছে মধুসূদন। সেখানে এক ব্যক্তিকে অস্ত্রের কারবারে নিজের গুরু বলে মানত সে।

২০২১ সালে রহড়ার রিজেন্ট পার্কে নগদ প্রায় ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনে থাকতে শুরু করে সে। বেআইনি ব্যবসাকে আড়াল করতে বর্ধিষ্ণু ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের বসবাস বলে পরিচিত রিজেন্ট পার্ককে বেছে নিয়েছিল মধুসূদন। ফ্ল্যাটে অস্ত্র সংক্রান্ত কোনও লেনদেন সে করত না।

পুলিশ সূত্রের খবর, বিহার থেকে অস্ত্র ও অস্ত্রের বিভিন্ন অংশ নিয়ে লোকজন এসে অপেক্ষা করত শহরের বিভিন্ন রেল স্টেশন, বাস স্ট্যান্ডে। সেখানে ব্যাগে টাকা নিয়ে পৌঁছে যেত মধুসূদন। উভয় তরফে শুধু ব্যাগ অদলবদল হত। অস্ত্রের বিভিন্ন অংশ এনে ফ্ল্যাটেই পূর্ণাঙ্গ রূপ দিত মধুসূদন। বিক্রির সময়ে ব্যাগে অস্ত্রের পাশাপাশি নিয়ে যেত এটিএম কার্ড সোয়াইপ করার যন্ত্র।

জানা গিয়েছে, ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত খড়দহ থানায় অস্থায়ী চালক ছিল মধুসূদন। পরে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করত সে। যদিও ২০০৬ সালে পুলিশের কাছে খবর আসে, সে অস্ত্রের কারবার করে। সেই সময়ে তাকে এক বার ধরা হয়। তখন তার বেলঘরিয়ার আস্তানা থেকে একটি অস্ত্র এবং ডায়েরি উদ্ধার হয়েছিল। ডায়েরিতে দু’হাজার ক্রেতার নামের তালিকা মিলেছিল। তখন বছর কয়েক জেল খাটার পরে বেরিয়ে আসে মধুসূদন। তার পর থেকে তার বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনও খবর ছিল না।

সূত্রের খবর, রবিবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে খড়দহ থেকে এক ব্যক্তিকে প্রথমে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা। মুঙ্গেরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির কাছে একটি ওয়ান শটার মেলে। জেরায় ওই ব্যক্তিই ‘খেলা দেখাব’ বলে দাবি করে। কী খেলা দেখাবে, সেই প্রশ্নেই ধৃত পুলিশকে মধুসূদনের খোঁজ দেয়। রাতেই সে মধুসূদনের ফ্ল্যাট চিনিয়ে দেয় পুলিশকে। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, মুঙ্গেরের ওই ব্যক্তি মাঝেমধ্যেই ওই ফ্ল্যাটে থাকত। অস্ত্র এনে দেওয়ার পাশাপাশি অস্ত্র মেরামতির কাজও করে দিত সে।

সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা জানতে পারেন, গভীর রাতে বাড়ি ফিরে বেলা পর্যন্ত ঘুমোয় মধুসূদন। তাই সোমবার ভোরে তার ফ্ল্যাটে পৌঁছয় পুলিশ। তার কাছে অস্ত্র আছে জানতে পেরে পুলিশ এসেছে, তা শুনে প্রায় আধ ঘণ্টা দরজা খেলেনি মধুসূদন। অস্ত্র ভান্ডার দেখিয়ে দিলে কিছু করা হবে না, এমন দাবিতে পুলিশকে রাজি করাতে দেবদেবীর নামে শপথ করার কথাও বলে সে। পুলিশও তা মেনে নেওয়ার পরে দরজা খুলে দেয় মধুসূদন।

পুলিশ সূত্রের খবর, ফ্ল্যাটে একটি বক্স খাটের ভিতরে দোনলা বন্দুক, দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। আলমারিতে ছিল প্যাকেট করা কার্তুজ। চালের হাঁড়ি, কৌটোয় ছিল আরও কার্তুজ। মুঙ্গের থেকে দেশি অস্ত্র আনা হলেও, দোনলা, একনলা বন্দুক, পাম্প অ্যাকশন গানের মতো অস্ত্র কোথা থেকে সে‌ পেল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কারণ ওই সব অস্ত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকানে মেলে। তাকে জেরা করে অস্ত্র কেনাবেচার আরও চক্রের খোঁজ মিলতে পারে বলেও মনে করছেন তদন্তকারীরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Illegal Firearms Arms Smuggling

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy