E-Paper

পরীক্ষা শেষে সন্তানের হাসিমুখ দেখে উদ্বেগ কাটল অভিভাবকদের

পরীক্ষার শেষে ছেলেমেয়েদের মুখে হাসি দেখে সব উদ্বেগ উধাও অভিভাবকদের। এ দিন ছিল তাদের প্রথম ভাষার পরীক্ষা। অধিকাংশ পরীক্ষার্থীই হলের বাইরে বেরিয়ে জানিয়ে দেয়, পরীক্ষা ভাল হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:০৯
Madhyamik Exam

চূড়ান্ত: মাধ্যমিকের প্রথম দিন পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকার আগের মুহূর্তে বইয়ে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে এক ছাত্রী। বৃহস্পতিবার, বেথুন স্কুলের সামনে।  ছবি: সুমন বল্লভ

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা। মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকার শেষ ঘণ্টা পড়ে গিয়েছে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই প্রশ্নপত্রের সিল খোলা হবে। আর তার পরেই বিলি করা হবে সেই প্রশ্নপত্র। কিন্তু তখনও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে বেথুন স্কুলের সামনে দাঁড়ানো জনা কয়েক পরীক্ষার্থীর। রাস্তায় দাঁড়িয়ে তখন রুদ্ধশ্বাসে শেষ বারের মতো পাতা ওল্টাচ্ছে তারা। শেষে কোনও মতে মায়েদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেই পরীক্ষার হলে ছুট। মায়েদের মুখেও তখন চিলতে হাসি। তাঁদেরই এক জন পিয়ালি চক্রবর্তী বললেন, ‘‘পরীক্ষা তো শুধু মেয়ের নয়, মায়েরও। টেনশন একটু হচ্ছেই। ভালয় ভালয় উতরে গেলে হয়।’’

মা-বাবা, দু’জনেই কর্মরত। পরীক্ষার হলে তাই ঠাকুরমাই নিয়ে এসেছেন নাতিকে। হেয়ার স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে বছর সত্তরের ওই বৃদ্ধা নাতির মাথায় পুজোর ফুল ঠেকিয়ে বললেন, ‘‘ভাল করে পরীক্ষা দাও।’’ নাতি পরীক্ষার হলে ঢুকে যাওয়ার পরে বৃদ্ধা জানালেন, শ্যামবাজার থেকে বাসে করে নাতিকে নিয়ে এসেছেন। রোজ তিনিই আসবেন।

পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে হোলি চাইল্ড স্কুলের সামনে ফুটপাতেই পরীক্ষার্থীদের নিয়ে প্রার্থনা সেরে নিলেন সরস্বতী বালিকা বিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষিকা। ওই স্কুলের পড়ুয়াদের সিট পড়েছে হোলি চাইল্ড স্কুলে। ফুটপাতেই লাইন দিয়ে প্রার্থনা শুরু করল পরীক্ষার্থীরা। অনীশা পাত্র নামে এক পরীক্ষার্থী বলল, ‘‘প্রার্থনা সঙ্গীত গাইলে মনের জোর বাড়ে। আশা করছি, পরীক্ষা খুব ভাল হবে।’’ হিন্দু স্কুলের এক পরীক্ষার্থীর বাবা অলোক মজুমদার বললেন, ‘‘পরীক্ষার দিনগুলি অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। টেনশন তো একটু হচ্ছেই।’’

তবে, পরীক্ষার শেষে ছেলেমেয়েদের মুখে হাসি দেখে সব উদ্বেগ উধাও অভিভাবকদের। এ দিন ছিল তাদের প্রথম ভাষার পরীক্ষা। অধিকাংশ পরীক্ষার্থীই হলের বাইরে বেরিয়ে জানিয়ে দেয়, পরীক্ষা ভাল হয়েছে। সমস্ত প্রশ্ন মোটের উপরে সহজই হয়েছে। তারা জানিয়েছে, হলের ভিতরে যথেষ্ট কড়া নজরদারি ছিল। তবে, পরীক্ষার্থীদের অনেকেরই বক্তব্য, অঙ্ক পরীক্ষার আগে তারা ছুটি পাচ্ছে না। পেলে ভাল হত। কয়েক জন বলল, ‘‘মাধ্যমিকে অঙ্ক পরীক্ষার আগের দিন প্রতি বছরই ছুটি থাকে। সাগরদিঘির উপনির্বাচনের জন্য এ বার পরীক্ষার সূচি বদল হওয়ায় অঙ্ক পরীক্ষার আগে ছুটি নেই। কেন আমাদের উপনির্বাচনের জন্য ভুগতে হবে? অঙ্ক নিয়ে একটু বেশি ভয় তো লাগেই।’’

এ বার প্রথম দিনেও অভিভাবকদের পরীক্ষার হলে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতরে যাতে কোনও বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়, তার জন্য প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে নিয়মাবলির নোটিস ঝোলানো ছিল। মধ্যশিক্ষা পর্ষদও জানিয়ে দিয়েছিল, জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিতে আসছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তদের পরীক্ষার্থীদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে হবে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রথম দিন কোনও ভুয়ো পরীক্ষার্থী ধরা পড়েনি। কোনও খাতা বাতিলের ঘটনাও নেই। এ বারে কন্ট্রোল রুমে সাহায্য চেয়ে ফোনও অন্যান্য বারের থেকে কম এসেছে।’’

কলকাতা জেলা স্কুল পরিদর্শক জানান, গার্ডেনরিচের এক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে বিএনআর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, জলপাইগুড়িতে হাতির হানায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় সকলে অতিরিক্ত সচেতন হয়েছেন। কলকাতাতেও যাতে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে পৌঁছতে পারে, তার জন্য পুলিশ ও শিক্ষা দফতর অতিরিক্ত সতর্ক রয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

WB Madhyamik exam 2023 Madhyamik Examination 2023

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy